পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। সেখানে ব্যাপকহারে বোমাবর্ষণ চলছে বলে জানা গেছে। যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে এই হামলা চলছে। বিশ্লেষকগণ বলছেন, রাশিয়া হামলার অজুহাত তৈরি করতেই এই ধরনের সংঘর্ষ সৃষ্টি করেছে।
ওয়াশিংটন জানিয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে প্রায় ২ লাখ সৈন্য মোতায়েন করেছে। এরই মধ্যে রাশিয়া ঘোষণা দিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিন নতুন পরমাণু মহড়া তদারকি করবেন। খবর বিবিসি, দ্য গার্ডিয়ান ও ডয়চেভেলের
পূর্ব ইউক্রেনে ব্যাপক সংঘর্ষ
মার্কিন প্রশাসন যে কোনো অজুহাতে ইউক্রেনের ওপর রুশ হামলার আশঙ্কা করছে। জোরালো রুশ সামরিক তত্পরতা ও রাশিয়া সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কার্যকলাপের ফলে এমন দুশ্চিন্তা বাড়ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনে করছেন, এবার যে কোনো ওছিলায় রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর হামলা শুরু করবে। গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনী ও রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে বিচ্ছিন্ন সংঘর্য ঘটেছে। দুই পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্রবিরতি রেখা অতিক্রম করে বোমাবর্ষণের অভিযোগ এনেছে।
সরকার নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে এক কিন্ডারগার্টেনের ওপর বোমাবর্ষণের অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন। এমন উত্তেজনার ফলে পুরোপুরি যুদ্ধের আশঙ্কাও আরো বেড়ে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছে। রাশিয়া অবশ্য এখনো দাবি করে চলেছে যে, ইউক্রেনের ওপর হামলার কোনো পরিকল্পনা নেই।
গতকাল শুক্রবারও পূর্ব ইউক্রেনে রুশপন্থিদের সঙ্গে ইউক্রেনের নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ চলছিল। একে অপরের ওপর বোমা বর্ষণও করেছে। পূর্ব ইউক্রেনের ডোনেটস্কের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নেতা ডেনিস পুশিলিন জানিয়েছেন, সামনে সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। তাই তারা নারী, শিশু এবং বয়স্ক বেসামরিক নাগরিকদের রাশিয়ায় পাঠানোর পরিকল্পনা করছেন। গতকাল থেকেই বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে বলে তিনি জানান। রাশিয়া জানিয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনে সংঘর্ষের ঘটনা খুবই ভয়াবহ। ডোনেটস্কে একটা ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে রুশ মিডিয়া জানিয়েছে।
অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কো-অপরাশেন ইন ইউরোপের (ওএসসিই) বৈঠকে মার্কিন দূত মাইকেল কার্পেন্টার জানিয়েছেন, তিন সপ্তাহ আগেই রাশিয়া ইউক্রেন সীমান্তে ১ লাখ ৬৯ হাজার থেকে ১ লাখ ৮৯ হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে। যদিও তখন ১ লাখ সৈন্য মোতায়েনের কথা বলা হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়াকে এতো সৈন্য কোথাও মোতায়েন করতে দেখা যায়নি। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁও জানিয়েছেন, পূর্ব ইউক্রেনে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সেখানকার পরিস্থিতি ভয়ংকর হয়ে উঠছে।
চকম উত্তেজনা সত্ত্বেও কূটনৈতিক তত্পরতা বন্ধ হচ্ছে না। গতকাল বাইডেনের কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, রোমানিয়া, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে এক ভার্চুয়াল বৈঠক করর কথা। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিনকেন জার্মানির মিউনিখ শহরে নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দিতে এসেও একাধিক দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা। ইউক্রেনের ওপর হামলা না ঘটলে তিনি চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
মস্কোয় নিযুক্ত মার্কিন উপ-রাষ্ট্রদূত বার্ট গোরম্যানকে বহিষ্কার করায় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো শীতল হয়ে পড়েছে। ওয়াশিংটনে রুশ দূতাবাসের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দেশ ছাড়তে বাধ্য হওয়ায় রাশিয়া এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে।মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন ঘোষণা দিয়েছেন, পোল্যান্ডের কাছে ২৫০টি আব্রাম ট্যাংক বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল পোল্যান্ড সফরে তিনি এই ঘোষণা দেন। যুক্তরাষ্ট্র গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পেরেছে, রাশিয়া ইউক্রেনের রুশবিরোধী রাজনীতিকসহ অনেককে অপহরণ বা হত্যার পরিকল্পনা করছে।
ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টোলেটেনবার্গ প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠকে বলেন, মস্কোর তরফ থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাবার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফলে সেনা প্রত্যাহার বা উত্তেজনা কমানোর কোনো উদ্যোগও চোখে পড়ছে না।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলত্জ ইইউ নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর বলেন, ইউক্রেনের ওপর হামলা চালানোর জন্য যথেষ্ট সংখ্যক রুশ সৈন্য প্রস্তুত রয়েছে। ফলে এমন হুমকি সম্পর্কে উদাসীন থাকা সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক থিংক ট্যাংক জার্মান মার্শাল ফান্ডের প্রেসিডেন্ট হিদার কনলে বলছেন, প্রেসিডেন্ট পুতিন সব ধরনের আভাস দিয়েছেন যে তিনি ইউক্রেনে হামলা চালাতে যাচ্ছেন। ডনবাস এলাকায় বোমা বর্ষণের ঘটনা তারই একটা ইঙ্গিত। এর মাধ্যমে তিনি গ্রাউন্ডওয়ার্ক করছেন।
নতুন পরমাণু মহড়া চালাবে রাশিয়া
ইউক্রেনে রুশ হামলার আশঙ্কায় চলমান উত্তেজনার মধ্যে আজ শনিবার বিশাল পারমাণবিক মহড়া আয়োজন করতে যাচ্ছে রাশিয়া। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মহড়ায় একাধিক আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার অনুশীলন করা হবে। প্রেসিডেন্ট পুতিন ব্যক্তিগতভাবে এই সামরিক মহড়া তদারকি করবেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই মহড়ায় কৌশলগত বাহিনী অংশগ্রহণ করবে। দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক জেলার ইউনিট, বিমান বাহিনী এবং উত্তরাঞ্চল ও কৃষ্ণসাগরের নৌবহর এই বিশাল পারমাণবিক মহড়ায় অনুশীলন করবে। ক্রেমলিনের এক মুখপাত্র বলেছেন, মহড়া নিয়ে কারোর উদ্বেগের কারণ নেই।