শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মির্জাপুরে নদীতে বাঁধ দিয়ে চলছে মাটি চুরির মহোৎসব  

আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২:১৫

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে বংশাই ও লৌহজং নদীর বুক ভরাট ও বাঁধ দিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের অবৈধ রাস্তা নির্মাণ করে মাটি চুরির মহোৎসব চলছে। ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি চুরির ফলে রাস্তাঘাট ক্ষতি হচ্ছে। চাষাবাদ যেমন বিঘ্নিত হচ্ছে তেমনি পরিবেশ বিপন্ন হয়ে চরম বিপাকে পরেছে এলাকাবাসী।

একই ভাবে অবৈধ দখল-দূষণের কবলে ৩৫ খালের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এলাকার প্রভাবশালীদের হাতে নদী ও দখল হয়ে দুই পাশে গড়ে উঠেছে অবৈধ ইট ভাটা, রাস্তাঘাট, আবাদি জমি এবং বিভিন্ন স্থাপনা। নদী ও খালগুলো দখল আর দূষণের কবলে পরে এখন মৃত হয়ে অস্তিত্ব সংকটে পরেছে। ফলে নাব্যতা হারিয়ে পানি প্রবাহিত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পরেছে হাজার হাজার মানুষ। 

আজ শনিবার ( ১৯ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার মীর দেওহাটা, বহুরিয়া, ফতেপুর এবং আজগানাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে মাটি ব্যবসায়ীরা লৌহজং ও বংশাই নদী এবং বেশ কয়েকটি খালের বুক ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। নদীর বুক ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের ফলে পানি চলাচল বন্ধ হয়ে চাষাবাদের ব্যপক সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে এলাকার ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। 

ভুক্তভোগীরা জানায়, বংশাই লৌহজং নদীর পাশাপাশি মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, গোড়াই, লতিফপুর, আজগানা, তরফপুর ওবাঁশতৈল ইউনিয়নের ৩৫ খালের কোন অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া পযাচ্ছে না। এলাকার এক শ্রেণীর মাটি ব্যবসায়ী ও ভূমি দস্যুরা দিন দিন এই সব খালের দুই পাশ দখল করে আবাদি জমি, রাস্তঘাটা ও বসতি গড়ে তুলেছে। উল্লেখযোগ্য খালের মধ্যে রয়েছে মির্জাপুর পৌরসভার বারই খাল, বংশাই ছোট নদী, শুভল্যা-বরাটি খাল, জামুর্কি-গুনটিয়া খাল, আছিমতলা-কদিমধল্যা-শুভুল্যা খাল, থলাপাড়া-পারদিঘিী খাল, ভুলয়া-কুড়াতলী খাল, মহেড়া-ফতেপুর খাল, চুকুরিয়া-বানাইল খাল, ওয়ার্শি-নাগরপাড়া খাল, দেওহাটা-বহুরিয়া খাল, ভাওড়া-বহুরিয়া খাল, ভাতগ্রাম-ইচাইল খাল, বহুরিয়া-ওয়ার্শি খাল, গোড়াই-নাজিরপাড়া-সোহাগপাড়া খাল, আজগানা-পলাশতলী খাল, লতিফপুর-তরফপুর খাল, পাথরঘাটা-তক্তারচালা খাল, জামুর্কি-চুকুরিয়া-গুনটিয়া খাল, পেকুয়া-বালিয়াজান খালসহ ৩৫ টি দখল আর দূষণের কবলে পরে কোন চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে। নাব্যতা হারিয়ে এলাকার মানুষ চরম বিপাকে পরেছেন।

কৃষক আব্দুল হাকিম (৫৬), আবুল হোসেন (৫৫) ও সাদেক আলী (৬০) অন্তত ১০-১২ জন কৃষক অভিযোগ করেন, নদীর বুক ও খাল দখল হয়ে রাস্তাঘাট নির্মাণ, ইটভাটা এবং আবাদি জমি হওয়ায় পানি প্রবাহিত বন্ধ হয়ে আমাদের কোন উপকারেই আসছে না। নদী ও খালগুলো এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এছাড়া অবৈধ ভাবে ড্রাম ট্রাক দিয়ে মাটি নেওয়ার পলে রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি খালের এমন করুন দশা। এলাকার খালগুলো অবৈধ দখল মুক্ত ও উদ্ধারের জন্য প্রশাসনের নিকট তারা জোর দাবী জানিয়েছে। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন মাটি ব্যবসায়ী অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকারী নদী, খাল ও জলাশয়ের মাটি কাটা হয় না। বিভিন্ন ব্যক্তির জমির মাটি কিনে মাটি কাটা হয়। এলাকার রাস্তাঘাট ও পরিবেশের যাতে ক্ষতি না হয় সে জন্য মাটি কাটার পূর্বে রাজনৈকি দলের প্রভাবশালী নেতা ও প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে যোগাযোগ রক্ষা করেই মাটি কাটা হয়।

ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাহবুব আলম মল্লিক হুরমহল ও  মো. রফিকুল ইসলাম সিকদার বলেন, এলাকার একটি প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ীরা নানা ভাবে নদীর বুকে রাস্তা নির্মাণ এবং খালের দুই পাশ ভরাট করে মাটির ব্যবসা করে যাচ্ছে। অবৈধ ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে। পাহাড়, বন, খাল-বিল, নদী ও ডুবা-নালা দখল করে কোন অবৈধ স্থাপনা গড়ে তোলা দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রশাসন এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।

মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. হাফিজুর রহমান এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মীর্জা মো. জুবায়ের হোসেন বলেন, পরিবেশ রক্ষার জন্য নদী, খাল বিল ও জলাশয়ের কোন শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না এমন সরকারী নির্দেশনা রয়েছে। যারা নদীর বুক করে রাস্তা নির্মাণ এবং খাল দখল করে ইটভাটা ও ভরাট করে বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে তুলেছে তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার যে সব নদী ও খাল দখল মুক্ত করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। 

ইত্তেফাক/ আরাফাত