সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

৭০ বছর ধরে ‘নাম কলঙ্ক’ বয়ে বেড়াচ্ছে ঈশ্বরদীর মানুষ

আপডেট : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৯:৪৮

৭০ বছর ধরে একটি নামের কলঙ্ক বয়ে বেড়াচ্ছে ঈশ্বরদীর মানুষ। ১৯৪৮ সালে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীনের নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয় ঈশ্বরদীতে। এরপর ভাষা আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে সংগঠিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। ভাষা ও দেশমাতৃকার জন্য জাতি অকাতরে প্রাণ দেয়।

এরই মাঝে দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু বাংলা ভাষার বিরোধিতাকারী সেই নাজিম উদ্দিনের নামে এখনো রয়ে গেছে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়’। নাম পরিবর্তনের দাবিতে বেশ কয়েক দফা প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলেও দাবি পূরণ হয়নি। স্কুলটির নাম পরিবর্তনের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন ও পরবর্তী সময়ে সেই তদন্ত কমিটির একটি প্রস্তাবিত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হলেও স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

ঈশ্বরদীর মুক্তিযুদ্ধের গবেষক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ১৯৪৮ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে পূর্ব বাংলার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিম উদ্দীন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধাচরণ করে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন। ১৯৫২ সালের ২৬ জানুয়ারি পল্টন ময়দানেও তিনি ‘একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ বলে এই ঘোষণা করেছিলেন। অথচ সেই নাজিম উদ্দীনের নামে প্রতিষ্ঠিত হওয়া স্কুল গত ৭০ বছর ধরে বহাল তবিয়তে আছে। ২০২০ সালের ৮ ডিসেম্বর ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে নিজেরাই স্কুলের প্রধান ফটক থেকে ‘নাজিম উদ্দীন’ নামটি কালো কালি দিয়ে মুছে দেয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পি এম ইমরুল কায়েস বলেন, স্কুলটির নাম পরিবর্তন করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সুপারিশপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যায়ের পূর্বের ছবি

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডিআরএম) শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলা ভাষার প্রতি সম্মান রেখে সরকারি রেলওয়ের এই স্কুলটির নাম পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে। আমরা সুপারিশমালা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেলেই আনুষ্ঠানিকভাবে স্কুলটির নাম পরিবর্তন করার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই স্কুলের নাম পরিবর্তন করার জন্য আমি এই এলাকার এমপি হিসেবে রেলমন্ত্রীকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছি। 

ইত্তেফাক/ আরাফাত