গোপালগঞ্জ সদর থেকে কেনাকাটা শেষে মেসে ফিরছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক ছাত্রী ও তার বন্ধু। শহর থেকে একটু দূরে হেলিপ্যাড এলাকায় পৌঁছালে তাদের গতিরোধ করেন পাঁচ যুবক। এরপর আপত্তিকর কথা বলে গায়ে পড়ে ঝগড়া শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে ওই ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়।
শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কাওরান বাজারের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই জানিয়েছে র্যাব। এ ঘটনায় ঘটনায় অভিযুক্ত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে সংস্থাটি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী ন্যক্কারজনকভাবে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে ভুক্তভোগীসহ দুই শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদরের নবীনবাগ হেলিপ্যাডের সামনে থেকে হেঁটে মেসে যাওয়ার সময় কতিপয় দুর্বৃত্ত তাদের নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে তর্কাতর্কিতে লিপ্ত হয়।
একপর্যায়ে ভুক্তভোগীকে জোরপূর্বক স্থানীয় একটি ভবনে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে গোপালগঞ্জ সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। চাঞ্চল্যকর ও আলোচিত এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে।
তিনি আরও বলেন, র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৮-এর অভিযানে ২৫ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত রাকিব মিয়া (২২), পিয়াস ফকির (২৬), প্রদীপ বিশ্বাস (২৪), মো. নাহিদ রায়হান (২৪), মো. হেলাল (২৪), তূর্য মোহন্তকে (২৬) গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ধর্ষণের ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য দিয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের পরিচালক বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতরা মূলত রাকিবের নেতৃত্বাধীন স্থানীয় একটি অপরাধ চক্রের সদস্য। তারা সবাই গোপালগঞ্জ ও তার আশপাশের এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। গ্রেফতার হওয়া তূর্য মোহন্ত ছাড়া অন্যরা ৮ থেকে ১০ বছর ধরে নবীনবাগ এলাকায় বিভিন্ন স্থানে মাদক সেবন, আড্ডা, জুয়াসহ বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে লিপ্ত ছিল। এ ছাড়া তারা চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধেও জড়িত ছিল। তারা বিভিন্ন সময়ে রাস্তাঘাটে স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করত বলে জানা যায়। তাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলাও রয়েছে।'
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গ্রেফতারকৃতরা ইজিবাইক দিয়ে নবীনবাগ হেলিপ্যাড সংলগ্ন এলাকায় যাওয়ার পথে ভুক্তভোগীকে তার বন্ধুসহ দেখে বাইক থামিয়ে বিভিন্ন ধরনের অশালীন মন্তব্য করতে থাকে অভিযুক্তরা। তাদের সঙ্গে ভুক্তভোগী এবং তার বন্ধুর বাকবিতণ্ডা হয়। পরে তাদেরকে জোর করে ঘটনাস্থলের পাশে ঢালু জায়গায় নিয়ে যেতে চাইলে ভুক্তভোগীর বন্ধু বাধা দেওয়ায় গ্রেফতারকৃতরা তাকে মারধর করে। গ্রেফতারকৃতরা ভুক্তভোগীকে স্থানীয় একটি ভবনে নিয়ে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।