তারা সবাই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার। ইউক্রেনের লিগে খেলছিলেন। কিন্ত কে জানতো এভাবে হঠাৎ করেই সব থেমে যাবে। অজানা শঙ্কায় খেলা ছেড়ে পাড়ি দিতে হবে নিজ দেশে! শেষ পর্যন্ত তাই করতে হলো। সংঘাত যে থামার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা দিনকে দিন বাড়ছে।
এই ফুটবলারদের মধ্যে একজন মারলন সান্তোস। তিনি শাখতার দোনেৎস্কের হয়ে খেলছিলেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি তুরস্কে মধ্য মৌসুম প্রস্তুতি ক্যাম্প শেষে কিয়েভে ফিরে আসেন। এর চারদিন পরই পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে রাশিয়া হামলা চালায়। আর এখন তিনি নিজ দেশ ব্রাজিলে ফিরে গেছেন।
রুশ হামলার কারণে ইউক্রেনের লিগগুলো স্থগিত হয়ে গেছে। কবে নাগাদ চালু হবে তা কেউ বলতে পারছে না। কারণ, প্রথমে যুদ্ধ শেষ হতে হবে। এরপর সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হবে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। শাখতারে তার সতীর্থ ১১ ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারেরও একই গল্প। তারাও দুঃস্বপ্ন নিয়ে ফিরে গেছেন।
গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার কিয়েভে নিজেদের হোটেলের বেজমেন্টে বাংকারে থাকা অবস্থায়ই স্প্যানিশ দৈনিক মুন্দো দেপোর্তিভোকে সাক্ষাৎকার দেন মারলন সান্তোস। বার্সেলোনার সাবেক এই ডিফেন্ডার বলেন, ‘পরিস্থিতির বর্ণনায় কেবল একটা শব্দই বলা যায়। আর তা হলো বিশৃঙ্খলা।’ বোমা আর আর্টিলারি থেকে বাঁচতে সেখানেই আশ্রয় খুঁজে নিলেও সেটা যথেষ্ট ছিল না। শেষ পর্যন্ত উয়েফার সহায়তা ইউক্রেন ছাড়তে সক্ষম হয়েছেন তারা।
মারলন বলেন, ‘হোটেলে আমরা নিরাপদেই আছি। কিন্তু একটা সমাধান তো লাগবে। খুবই বাজে একটা অবস্থা এখানে, ভয়ে আছি আমরা। এখানে আমাদের পরিবার, সন্তান, সঙ্গী এবং আমার শাশুড়িও আছেন। আমরা নিরাপদ জায়গায় যেতে চাই।’ বাংকারে থাকা অবস্থায় তার কন্ঠে ছিল আঁকুতি।
এর পাঁচ দিন পর রিও ডি জেনিরোর গ্যালিয়াও বিমানবন্দরে নেমেছে তাদের বহনকারী বিমান। কিন্তু কিয়েভ থেকে রিওর এ যাত্রাপথ মোটেও সহজ ছিল না এই ফুটবলারদের।
প্রথমে হোটেলের বাংকারে দুদিন ছিলেন। সেখান থেকে একটা ট্রেনে চেপে থেকে ইউক্রেনের দক্ষিণ-পশ্চিমে চেরনিভসিতে পৌঁছান তারা। যাত্রাপথে নিরাপত্তার জন্য গাড়ির জানালার বাইরে ব্রাজিলের পতাকা ঝুলিয়ে রেখেছিলেন। যেন যুদ্ধরত দুই পক্ষই বোঝে যে তারা নিরপেক্ষ। এরপর চেরনিভসি থেকে বাসে চেপে মলদোভা। সেখান থেকে রোমানিয়া এবং বিমানে করে রিও ডি জেনিরোর গ্যালিয়াও বিমানবন্দর। পথিমধ্যে তাদের সহায়তা করেছে ব্রাজিলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আর উয়েফা।
এ জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মারলন। যাত্রাপথের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি মুহূর্তে সেনাদের সামনে পড়ার ভয় ছিল। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির মরিয়া ভাব ছিল। চারপাশে গোলা বর্ষিত হচ্ছে, বোমা ফাটছে। এ যেন দুঃস্বপ্ন!’