বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

গুচ্ছ থেকে ফিরে আসতে চায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

আপডেট : ০৬ মার্চ ২০২২, ০৪:০৩

চলতি বছরে গুচ্ছভুক্ত ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসতে চায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। গুচ্ছে না যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। গুচ্ছ পরীক্ষার নানান অব্যবস্থাপনা এবং শিক্ষার্থীর সংকটের বিষয়গুলো আমলে নিয়ে নিজেদের ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা আয়োজনের পক্ষে মত বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষকদের। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব মান বজায় রাখার জন্য গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি থেকে বের হওয়ার বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তারা। গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে এলে আগের মত নিজস্ব ভর্তি ব্যবস্থাপনায় ফিরবে বিশ্ববিদ্যালয়টি। গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় শিক্ষকরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। 

সভায় অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, আয়োজক কমিটি শুরুতে শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুবিধা, যাতায়াত সুবিধা, থাকা-খাওয়ার সুবিধাসহ সার্বিক ভোগান্তি হ্রাসে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানায়। তবে, বিভাগ পরিবর্তন ইউনিট শুরুতেই বাদ দেওয়া, পরীক্ষার ফি আচমকাই বাড়িয়ে ফেলা এবং সর্বশেষ মানবিক ও বাণিজ্য অনুষদের পরীক্ষার ফলাফলে তীব্র অসঙ্গতিতে গুচ্ছ ভোগান্তির কারণ হয় হাজারো ভর্তিচ্ছুর। 

তবে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে আলোচনা হলেও গুচ্ছের বিষয়ে সামনের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হক। তিনি বলেন, গুচ্ছে যাওয়ার ব্যাপারে সভায় অনেক শিক্ষক পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিয়েছেন। সামনের সভায় আমরা পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত নেবো। 

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি আর ঝুঁকি কমাতে দেশে প্রথমবারের মত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে শুরু হয় ‘গুচ্ছ’ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা। গুচ্ছভুক্ত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে সব মিলিয়ে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৪০৬ জন শিক্ষার্থী প্রাথমিকভাবে আবেদন করেন। গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের ১৭ অক্টোবর বিজ্ঞান ইউনিটের, ২৪ অক্টোবর মানবিক ইউনিটের এবং পহেলা নভেম্বর বাণিজ্য ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা শেষে ২০ অক্টোবর বিজ্ঞান ইউনিটের, ২৬ অক্টোবর মানবিক ইউনিটের এবং সর্বশেষ ৩ নভেম্বর বাণিজ্য ইউনিটের ফল প্রকাশিত হয়।

গুচ্ছভুক্ত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় হল-জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) ও বিবিএতে ভর্তির জন্য ১০টি মেধাতালিকা দিয়েও কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী পাওয়া না যাওয়ায় প্রথম বর্ষের সার্বিক ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন এবং আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাবর্ষ শুরু করার ক্ষেত্রে বিলম্ব ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখনও ফাঁকা রয়েছে দেড়শোরও বেশি আসন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বারবার মেধাতালিকা ও গণসাক্ষাৎকার আহ্বান করেও আসন পূরণ না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন মহলে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। এই সংকটকে গুচ্ছ যাওয়ার কুফল হিসেবেই অবিহিত করছেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী বলেন, এবার প্রথমবর্ষে ভর্তির ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী না পাওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা এর মধ্যে প্রধান কারণ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো করোনাকালীন বন্ধের সময়েও শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী তাদের সময় বাঁচানোর জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া বলেন, এবারের যে শিক্ষার্থী সংকট তা খুব অনাকাঙ্ক্ষিত। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবের জন্য আয়োজন করা হলেও এতে কিছু অব্যবস্থাপনা ছিল। এই ব্যবস্থাটিকে আরও ভালো করা যেতো। এর কুফল শিক্ষার্থীদের ভুগতে হচ্ছে এখন।

ইত্তেফাক/এএএম