পূজা সেনগুপ্ত। নাচের সঙ্গেই জীবনকে বেঁধেছেন নিরন্তর। একাধারে নৃত্য নিয়ে দেশ-বিদেশে পারফর্মেন্সসহ নাচের প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করছেন। আগামী ১৪ মার্চ জাতীয় নাট্যশালায় মঞ্চায়ন হবে তুরঙ্গমীর প্রযোজনায় ‘অদম্য’। নিজের নতুন এই কাজ, আগামী পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন বিনোদন প্রতিদিনের সঙ্গে।
‘অদম্য’ অনুষ্ঠানটি প্রসঙ্গে জানতে চাই
— তুরঙ্গমী রিপার্টরি ড্রান্স থিয়েটারের ‘অদম্য’ আগামী ১৪ মার্চ শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে মঞ্চায়িত হবে। প্রথমবারের মতো দর্শনীর বিনিময়ে প্রযোজনাটি দেখতে পাবেন দর্শকরা। প্রযোজনাটি মূলত বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর নির্মিত হয়েছে। এতে বঙ্গবন্ধুর চরিত্রটি আমি রূপায়ণ করছি। কারণ আমার কাছে মনে হয়, বঙ্গবন্ধুর চরিত্রটি তার মতো দেখতে কাউকে দিয়ে তুলে ধরার চেয়ে তার ব্যক্তিত্ব, চিন্তা-চেতনাকে রূপায়ণ বেশি চ্যালেঞ্জিং।
এর বাইরে আপনার সংগঠন তুরঙ্গমীসহ অন্য কোন কাজগুলো নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
এ বছর আমাদের সংগঠনটি ৯ বছরে পদার্পণ করলো। আমরা নিয়মিত নিজেদের প্রযোজনার পাশাপাশি কর্পোরেট শোগুলো করছি। কেননা, আমাদের দলের প্রায় সবাই নাচের বাইরে কিছু করেন না। এটা খুবই ভালোলাগার যে, করোনাকালেও আমরা সফলভাবে কার্যক্রমগুলো পরিচালনা করতে পেরেছি। এর বাইরে চলতি বছর আমাদের জনপ্রিয় একটি প্রযোজনা মঞ্চে আনার লক্ষ্যে কাজ করছি।
আপনার দলের অনেকেই নাচকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। নাচকে পেশা হিসেবে নেওয়ার সময় এসেছে মনে করছেন?
হ্যাঁ, অবশ্যই নাচকে পেশা হিসেবে নেওয়া যায়। এরইমধ্যে অনেকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন এবং ভালোভাবেই কাজ করছেন। যেকোনো কাজকে পেশা হিসেবে নিতে গেলে কিছুটা ঝুঁকি থাকবেই, তবে কাজ জানলে এবং নিষ্ঠা ও পরিশ্রম থাকলে সফল না হওয়ার কোনো কারণ নেই।
কিন্তু প্রকৃত শিল্পীদের বাইরে গিয়ে নামমাত্র শিল্পীদের দিয়ে কাজ করানোসহ নানা অভিযোগও তো আমরা শুনতে পাই
— আমি একদমই এর সঙ্গে একমত নই। কারণ শিল্পী মাত্রই তো শিল্পী। এখানে প্রকৃত-অপ্রকৃত শিল্পী হিসেবে শিল্পীরাই যদি নিজেদের আলাদা করে ফেলি তাহলে সেটা দুঃখজনক। আর পরিচিত শিল্পীদের দিয়ে সব দেশেই কমবেশি কাজ করানো হয়। এটা শুধু আমাদের দেশে হচ্ছে না। তাছাড়া অনেক সময় টিভি চ্যানেলগুলোর বাজেটের কারণে অনুষ্ঠান করা হয়ে ওঠে না। তার মানে এই না যে তারা ডাকে না।
পরিচিত মুখ দিয়ে অনুষ্ঠান বেশি হওয়ায় নতুনরা কাজ বঞ্চিত হচ্ছে না?
না, তা কেন হবে। এক সময় তো পরিচিতরাও অপরিচিত ছিলেন। নিজের প্রতিভা এক সময় প্রকাশ পাবেই।
ইদানিং তরুণরা বিদেশি নাচের দিকে ঝুঁকছে। এতে দেশীয় সংস্কৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কি-না?
আমার কাছে এই বিষয়টি নেতিবাচক মনে হয় না। কোনো জিনিস ভালো হলে মানুষ আকৃষ্ট হবেই। এতে শুধু আমরা বাইরের সংস্কৃতি নিজের মাঝে ধারণ করছি না। আমাদের সংস্কৃতিও বাইরের দেশে ছড়িয়ে দিতে পারছি। আমরা যখন তাদের দেশে নাচ করছি তখন তাদেরও আমাদের দেশের নাচ, সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। আমরা শুধু নিচ্ছি না, দিচ্ছিও। এই বিনিময়টা আরো বাড়াতে হবে। তাহলে নেতিবাচক কথাগুলো আসবে না।
বিশেষ দিবস ছাড়া নাচের অনুষ্ঠান কম হওয়ার কারণ কী বলে মনে করছেন?
আমার মনে হয়, নাচের সংগঠনগুলোর সাংগঠনিক ব্যর্থতার কারণে এমনটা হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মঞ্চ। এই সমস্যাটির সমাধান হলে নাচের দলগুলো নিয়মিত নাচের অনুষ্ঠান করার সুযোগ পাবে।
আপনার আদর্শ কারা?
আসলে মানুষের জীবনে কোনো একজনকে আদর্শ বানিয়ে ফেলা ভুল। এতে তার স্বকীয়তা নষ্ট হয়ে যায়। যে কারণে আমি সবসময় নিজের মতো হওয়ার চেষ্টা করি।
পূজা সেনগুপ্ত হয়ে ওঠার পেছনে কেমন প্রতিকূলতা ছিল?
অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল পরিবার এবং সমাজ। যেহেতু আমি ফিজিক্সে পড়েছি সেহেতু সবাই চাইতেন আমি বিজ্ঞানী হবো। কিন্তু আমি চেয়েছি আমার কাজ দিয়ে সেই কথাগুলোর জবাব দিতে।
কাজের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো অনুপ্রেরণা হিসেবে শক্তি জোগায়?
ভারতের সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতিতে দারুণ প্রভাব ফেলে। তারপরও যখন ভারতের রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে যাই বা একদিন হটাত্ ঘুম থেকে উঠে জানতে পারি ইউনেস্কো আমাকে সদস্য হওয়ার জন্য চিঠি পাঠিয়েছেন তখন এই বিষয়গুলো অনুপ্রাণিত করে।