রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতেই ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে পণ্য খালাস করতে গিয়ে মিসাইল হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র ভবিষ্যৎ কী হবে এ নিয়ে গভীর অনিশ্চয়তা এখনো কাটেনি। জাহাজটি থেকে নিরাপত্তার কারণে ক্যাপ্টেন-ক্রুদের সবাই বিশেষ ব্যবস্হায় দেশে ফিরে আসায় জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু জাহাজটির মালিকানায় এখনো রয়েছে সরকারি সংস্থা বিএসসি।
বিএসসির কর্মকর্তারা জাহাজটিকে নিয়ে কী করা হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না। সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানির কাছে জাহাজটির ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে আন্তর্জাতিক নিয়মনীতি মেনে বিমার অর্থ দাবি করা হয়েছে। তবে এই দাবির অর্থ প্রদানের জন্য প্রয়োজন হবে বিমা কোম্পানি নিযুক্ত বিশেষজ্ঞ এবং পিঅ্যান্ডআইয়ের বিশেষজ্ঞদের দ্বারা জাহাজটিকে সরেজমিনে পরিদর্শন, মিসাইলের আঘাতের কারণে জাহাজটির ক্ষয়ক্ষতির অবস্থা নিরূপণ, এর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ এবং জাহাজটি নিকটবর্তী কোনো ড্রাইডকে মেরামত করে পুনরায় সমুদ্রপথে চালানো সম্ভব হবে কি না এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া। বিএসসি কর্মকর্তা আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, মিসাইলের মতো যুদ্ধাস্ত্রের আঘাতে জাহাজ ‘বাংলার সমৃদ্ধি’র উপরের অংশ ব্রিজ এলাকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগুন ধরে যাওয়ায় জাহাজ চালনার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো খারাপভাবে ভস্মীভূত হয়েছে।
ফলে এমনিতেই বর্তমানে জাহাজটিকে চালানোর কোনো উপায় নেই। তার ওপর ভয়ের বিষয় হচ্ছে— বিস্ফোরণের ধাক্কায় জাহাজটির ইস্পাতের কাঠামোর নানা অংশে লুকানো ফাটল সৃষ্টি কিংবা কাঠামোর জয়েন্টগুলো দুর্বল হয়ে যেতে পারে। কাজেই এমন জাহাজ নিয়ে সমুদ্রযাত্রা ভয়ানক ঝুঁকিপূর্ণ। কাজেই বিশেষজ্ঞদের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না জাহাজটি কি মেরামত করে চালানো যাবে, না কি এটির বদলে বিমার অর্থে নতুন জাহাজ কিনতে হবে।
বিএসসির উপ-মহাব্যবস্হাপক (দূরপ্রাচ্য, পশ্চিম, গালফ ও উত্তর-পূর্ব এশিয়া) ক্যাপ্টেন জামাল হোসেন তালুকদার ইত্তেফাককে বলেন, ইউক্রেনের অলভিয়া বন্দরে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের শুরুতে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সংস্হাটির সকল কর্মকর্তা মর্মাহত। সবাই মনে করেন সরকারি এই জাহাজটির এই ক্ষতি অপ্রত্যাশিত। বিএসসির বর্তমান জাহাজ বহরে ৫টি ট্যাংকার ও আটটি ব্রেকবাল্ক বা খোলাপণ্যবাহী জাহাজসহ মোট আটটি জাহাজ চমত্কারভাবে বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে সংস্হাকে লাভের মুখ দেখাচ্ছিল। এরমধ্যে তিনটি ব্রেকবাল্ক জাহাজের মধ্যে ‘বাংলার সমৃদ্ধি’ ডেনমার্কের কোম্পানি ডেলটা করপোরেশনের কাছে টাইম চার্টারিংয়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনে ব্যস্ত ছিল। জাহাজটি বিএসসির বহরে সর্বশেষ নতুন জাহাজ হিসাবে যুক্ত হয়েছিল ২০১৯ সালে। এটি কেনা হয়েছিল চীনের কাছ থেকে।
বিএসসি কর্তৃপক্ষ আশা করছেন জাহাজটি মেরামতের মাধ্যমে হয়তো পুনরায় সমুদ্রপথে চালনা করা যাবে। কারণ বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছে ক্ষেপণাস্ত্র জাহজটির ওপরের অংশে আঘাত করেছে। এতে ব্রীজ ও মাস্তুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু জাহাজটির নিচের অংশ এই ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত নাও হয়ে থাকতে পারে। তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে জাহাজটিকে সরেজমিনে বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ওপর। তিনি জানান, জাহাজটিকে অলভিয়া বন্দর চ্যানেলের গভীর অংশ থেকে টেনে মূল বন্দরের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়া হয়েছে।