শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

শেয়ারবাজারে টানা দরপতন 

আপডেট : ১৮ এপ্রিল ২০২২, ০৩:০০

টানা দরপতন আর লেনদেন খরায় চলছে শেয়ারবাজার। বেশ কিছুদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে গতকাল দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেন ৪০০ কোটি টাকার নিচে নেমে গেছে। গত বছরের ৫ এপ্রিলের পর ডিএসইতে ৪০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হলো। এমন লেনদেন খরার বাজারে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। ফলে বড় পতন হয়েছে মূল্যসূচকের।

শেয়ারবাজারে তারল্য বাড়ানো এবং দরপতন ঠেকানোর লক্ষ্যে ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ বা ‘পুঁজিবাজার স্হিতিশীল তহবিল’ থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। সরকারি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) মাধ্যমে গত সপ্তাহে এই বিনিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। শেয়ারবাজারে টানা দরপতন দেখা দিলে গত ৮ মার্চ ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড’ থেকে ১০০ কোটি টাকা দ্রুত বিনিয়োগের নির্দেশ দেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ঐ নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে সিএমএসএফের ১০০ কোটি টাকা সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা হলেও তার সুফল মেলেনি। বরং টানা দরপতনের মধ্যেই রয়েছে শেয়ারবাজার।

গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া চার কার্যদিবসের মধ্যে তিন দিনই পতন দিয়ে পার করে শেয়ারবাজার। এ পরিস্হিতিতে গতকাল রবিবার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেনের ২০ মিনিটের মাথায় ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে শুরুতে দেখা দেওয়া এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকেনি। বরং লেনদেনের শেষদিকে এসে দরপতন হতে থাকে একের পর এক প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ দিনের সর্বোচ্চ দাম কমিয়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির চাপ বাড়ায়। এতে লেনদেনের শেষদিকে এসে প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। অর্থাত্ বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ দিনের সর্বনিম্ন দামে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করতে চাইলেও তারা ক্রেতা খুঁজে পাননি। প্রায় ১০০ প্রতিষ্ঠানের ক্রেতা না থাকায় লেনদেন আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৯৩ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে ২০২১ সালের ৫ এপ্রিলের পর ডিএসইতে সর্বনিম্ন লেনদেনের ঘটনা ঘটল। গত বছরের ৫ এপ্রিল ডিএসইতে ২৩৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার লেনদেন হয়। এরপর রবিবারের আগে গত এক বছরে ডিএসইতে আর ৪০০ কোটি টাকার কম লেনদেন হয়নি। এমন ক্রেতা সংকটের বাজারে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে মাত্র ৫৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮০টির। আর ৪১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৩০ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৫৫৪ পয়েন্টে নেমে গেছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ৪৩৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় ৫ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

বাজারটিতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ৪১ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা সোনালী পেপারের ২৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে স্যালভো কেমিক্যাল।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে ফার্মা এইড, জিএসপি ফাইন্যান্স, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, লাফার্জ হোলসিম বাংলাদেশ, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস এবং ইয়াকিন পলিমার।

অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৬৪ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ১৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ২৬২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৭৩টির এবং ৩৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

ইত্তেফাক/কেকে