রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৯ আশ্বিন ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

জমজমাট ঈদের বাজার, স্বস্তিতে ব্যবসায়ীরা

আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২২, ১৩:০৬

ঈদের বাকি কয়েক দিন। ইতিমধ্যে জমে উঠেছে রাজধানীর ঈদ বাজার। ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণী-বিতানগুলোতে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। রোদ ও গরম উপেক্ষা করে পরিবার-পরিজনদের জন্য নতুন পোশাক কিনতে রাজধানীর বিপণী-বিতানগুলোতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষ। এ বছর রোজার শুরু থেকে শপিংমলগুলো খোলা থাকায় গত দুই বছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে, পুরো রমজান মাস জুড়ে শপিংমল খোলা থাকায় ধীরেসুস্থে কেনাকাটা করতে পারছেন বলে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।

এদিকে বড় বড় অভিজাত বিপণী বিতানের পাশাপাশি ঈদের ছোঁয়া লেগেছে ফুটপাতের দোকানগুলোতেও। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দরদামে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্তও চলছে কেনাবেচা। ফুটপাতে অস্থায়ীভাবে টেবিল বসিয়ে পণ্যের পসরা নিয়ে বসা এই শহরের পুরনো চিত্র। তার সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে তিন চাকার ভ্যানগাড়ি। এখন ফুটপাতের পাশে ভ্যানগাড়িতেও ঈদের বাজারের কেনাকাটা চলছে পুরোদমে।

তবে, এ বছর স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই বললেই চলে। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই; সামাজিক দূরত্ব মানার ন্যূনতম প্রবণতাও লক্ষ্য করা যায়নি। দু একজন মাস্ক পড়লেও অনেকের মাস্কই সঠিকভাবে পরা ছিল না। ক্রেতাদের সমাগমের কারণে মার্কেটগুলোর সামনের রাস্তাতে দেখা যায় দীর্ঘ যানজট। ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে গিয়েও বেগ পেতে হয় পথচারীদের। সোমবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনীচক, গাউছিয়া, এলিফ্যান্ট রোড, ইস্টার্ন প্লাজা, মৌচাক মার্কেট, ফরচুন শপিংমল, সেন্টার পয়েন্ট, নাভানা বেইলি স্টার, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি, শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্কসহ বিভিন্ন শপিংমল ছিল লোকে লোকারণ্য। নিজেদের সাধ্যমতো মানুষ প্রিয়জনদের জন্য কেনাকাটায় ব্যস্ত ছিলেন তারা। এসব মার্কেটের ভেতরে ও আশেপাশের রাস্তাগুলোতে হাঁটার মতো অবস্থা ছিল না। সবখানেই ক্রেতাদের ভিড়। বিক্রেতারা বাহারি রঙের সব পোশাক সাজিয়ে রেখেছেন। কেউ পোশাক শরীরে ট্রায়াল দিচ্ছেন। কেউবা বাচ্চাদের পোশাক কেনায় ব্যস্ত। কেউবা শাড়ি, কসমেটিকস, গহনা, জুতার দোকানে ভিড় জমিয়েছেন। ছেলেদের পাঞ্জাবির দোকানগুলোতেও ছিল চোখে পড়ার মতো ভিড়। তবে থেমে নেই, সবাই ছুটছেন পছন্দের পোশাকের সন্ধানে। ভিড়ের কারণে ক্রেতার সঙ্গে বেশিক্ষণ কথা বলারও সুযোগ পাচ্ছেন না বিক্রেতারা। এর মধ্যেই পছন্দের কাপড় কিনছেন ক্রেতারা। ছেলেরা বেশি কিনছেন শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট ও পাঞ্জাবি। আর তরুণী ও নারীরা কিনছেন শাড়ি, থ্রি-পিস ও ফ্রক। এছাড়া জুতার দোকানেও বিক্রি বেড়েছে অনেক।

ক্রেতাকে শাড়ি দেখাচ্ছেন দোকানকর্মী। ছবি: আব্দুল গনি রাজধানীর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ কেনাকাটা করেন নিউ মার্কেট, গাউছিয়া থেকে। নিউ মার্কেটের বিক্রেতারা জানান, গত দুই বছর করোনার বিধিনিষেধ থাকায় আশানুরূপ বেচাবিক্রি করতে পারেননি তারা। তাই এ বছর ব্যবসায়ীরা শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে নেমেছেন। বিক্রি ভালো হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন দোকানিরা। নতুন নতুন পোশাকে সাজিয়ে তুলেছেন বিপণিবিতানগুলো। 

তারা জানান, বরাবরের মতো এবারো বাচ্চা ও নারীদের পোশাক বেশি বেচাকেনা হচ্ছে। এবারের ঈদে মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ‘কাঁচা বাদাম’, ‘পুষ্পা’, ‘বাংলালিংক’ ও ‘সকাল-সন্ধ্যা’ শাড়ি। বাহারি রঙ্গের ‘পুষ্পা’ ও ‘কাঁচা বাদাম’ নামের থ্রি-পিসও ইতিমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। বিক্রেতারা বলছেন, নতুন নামের কালেকশন ভালো বিক্রি হচ্ছে। এবারের ঈদ মার্কেটে ঝড় তুলবে পুষ্পা ও কাঁচা বাদাম নামর শাড়ি ও থ্রি-পিস। এছাড়াও জয়পুরি জর্জেট, অরগাঞ্জা, কাশ্মিরি কাতান এবং পাকিস্তানি ও কাশ্মিরি জর্জেট দৃষ্টি কাড়ছে নারী ক্রেতাদের। পাশাপাশি পুরুষদের পাঞ্জাবি ও জিন্স বেশি হারে বিক্রি হচ্ছে।  

গাউছিয়া মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, এই মার্কেটের সব দোকানেই তুলনামূলক ভিড় বেশি। এসময় দোকানিদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেই বলে দিচ্ছেন, ব্যস্ততার কারণে কথা বলার মতো সময় নেই। 

বসুন্ধরা সিটি শপিংমলে উপচেপড়া ভিড়। ছবি: সংগৃহীত গাউছিয়া মার্কেটের এক দোকান মালিক মো. জাকারিয়া বলেন, ‘গত দুই বছর আহামরি কোন ব্যবসা করতে পারিনি। তবে এবার তুলনামূলক বেচাকেনা ভালো। মার্কেটে মানুষ আসছে, কিন্তু বেচাকেনা আগের চেয়ে বেশি। যদিও কিনতে আসছেন একজন, কিন্তু সঙ্গে চার-পাঁচজন করে আসছেন।’

এদিকে নিউ মার্কেট এলাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটেও ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। এ মার্কেটের এক দোকান মালিক এম কে ইব্রাহীম জানান, শুধু চন্দ্রিমা নয়, অন্যান্য মার্কেটেও এবার বেচাকেনা আগের তুলনায় ভালোই। এই মার্কেটে তরুণদের জন্য রেডিমেইড জিন্স ও গ্যাবার্ডিন কাপড়ের প্যান্ট বেশি চলছে।

চন্দ্রিমা মার্কেটের আরেক দোকান মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বেচাকেনার আগের তুলনায় ভালো। গত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া না গেলেও এবারের বেচাকেনা অনেক ভালো। মানুষ মার্কেটে আসছে, দরদাম করছে, পছন্দ হলে কিনেও নিচ্ছে, এটাই স্বস্তির বিষয়।’

পছন্দের পোশাক দেখছেন এক ক্রেতা। ছবি: আব্দুল গনি

মিরপুর রোডের প্রিয়াঙ্গ সুপার মার্কেটের বিসমিল্লাহ গার্মেন্টসের বিক্রেতা কবির বলেন, ‘আমরা শুধু ছেলেদের পাঞ্জাবি আইটেম বিক্রি করি। সকাল থেকে ক্রেতারা ভিড় করছেন। তবে বিকালের দিকে বিক্রি খুব ভালো হচ্ছে। গত দুই বছরের তুলনায় এবার বিক্রি বেশি। আশা করছি ঈদের আগে আগামী কয়েকদিন ভালোই বিক্রি হবে।’

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা প্রীতম পড়াশোনা করেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিনি পরিবারের সদস্যদের জন্য প্রিয়াঙ্গ সুপার মার্কেট থেকে ঈদের কেনাকাটা করেছেন। ইত্তেফাক অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘এই কয়েকদিন সময় পাইনি। আজ প্ল্যান করেই বন্ধুরা মিলে মার্কেটে ঘুরতে এসেছিলাম। তবে ভাবতে পারিনি এত ভিড় হবে। পাঞ্জাবি কেনার জন্য এসেছিলাম। আগের চেয়ে এবার কালেকশন সব দোকানেই ভালো। দামও হাতের নাগালে। আমি যেমনটা চেয়েছিলাম তেমনটা পেয়েছি তাই কিনেও নিয়েছি।’

বাচ্চাদের পোশাক দেখছেন অভিভাবকরা। ছবি: ইত্তেফাক

ধানমন্ডি এলাকার মারুফ কিবরিয়া, চাকরি করেন একটি বেসরকারি আইটি ফার্মে। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে নিউ মার্কেটে এসেছেন শপিং করতে। তিনি বলেন, ‘ঈদে গ্রামের বাড়ি গ্রামের বাড়ি নরসিংদী যাব। তাই নিজ পরিবার, বাবা-মা, ভাই-বোনসহ পরিবারের সবার জন্যে ঈদের শপিং করছি। তবে এবার জিনিসপত্রের দাম আগের একটু বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেশি হওয়ায় একটু হিসেব করে কিনতে হয়েছে, না হয় আরো বেশি পয়সা খরচ করতাম ঈদের জামা কাপড় কেনায়।’

রাজধানীর চাঁদনীচক দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘পাইকারি বিক্রিটা এখন কম, তবে খুচরা বিক্রির বাজার বেশ জমে উঠেছে। চলমান নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যে উর্ধ্বগতি থাকলেও বিগত দুই বছরের তুলনায় এবছর অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আশা করি এবার ঈদের বেচা-বিক্রিতে কোন সমস্যা হবে না।’

 

ইত্তেফাক/এসজেড