শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৬ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

সদাকাতুল ফিতর পবিত্র রমজান মাসের অন্যতম ইবাদত

আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২২, ০৪:০০

সদাকাতুল ফিতর পবিত্র রমজান মাসের অন্যতম ইবাদত। রমজানের রোজা শেষে আসে ঈদুল ফিতর। ঈদের আনন্দ ধনী-গরিব সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে এবং মুসলিম জাতির প্রতিটি সদস্য যাতে এই আনন্দে শরিক হতে পারে, সেজন্য সাদাকাতুল ফিতরকে ফরজ করা হয়েছে। রমজানের রোজার পরিপূর্ণতার জন্যও এটা আবশ্যক।

ইমাম ওয়াকী ইবনুল জাররাহ বলেন, রমজান মাসের সাদাকাতুল ফিতর সাহু সিজদার সমতুল্য। নামাজে ত্রুটি হলে যেমন সিজদায়ে সাহু দিলে তা পূরণ হয়, তেমনি রোজায় কোনো ত্রুটি হলে সাদাকাতুল ফিতর দ্বারা তার প্রতিকার করা হয়।

রসুলুল্লাহ (স.) সাদাকাতুল ফিতর এক সা’ পরিমাণ খেজুর কিংবা যব প্রত্যেক মুসলিম, ক্রীতদাস ও স্বাধীন, পুরুষ ও নারী, ছোট ও বড় সবার ওপর অপরিহার্য করেছেন। (সহিহ বুখারি ও মুসলিম) ক্রীতদাস মালের অধিকারী নয়, তাই মালিককে তার ফিতরা দিতে হবে এবং নাবালেগের ফিতরা তার অভিভাবককে দিতে হবে।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (স.) ফিতরার জাকাত সাওম পালনকারীকে অনর্থক, অবাঞ্ছনীয় ও নির্লজ্জতামূলক কথাবার্তা বা কাজকর্মের মলিনতা থেকে পবিত্র করা এবং মিসকিনদের উত্তম খাদ্যের ব্যবস্থা করার উদ্দেশ্যে অত্যাবশ্যকীয় করেছেন। (সুনানে আবি দাউদ) বস্তুত ঈদুল ফিতরের দিনে ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমিয়ে একই কাতারে সালাত আদায়, একই মানের খাদ্য গ্রহণ করে সাম্য-মৈত্রীর বন্ধনে গোটা মুসলিম সমাজকে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব করা হয়েছে।

সাদাকাতুল ফিতর যদি গম, আটা ইত্যাদি দ্বারা আদায় করা হয়, তাহলে জনপ্রতি অর্ধ সা’ পরিমাণ আদায় করতে হবে। অর্ধ সা’ বা পৌনে দুই কেজি। আর যদি কিশমিশ, খেজুর, আঙুর দিয়ে আদায় করা হয়, তাহলে ১ সা’, অর্থাৎ সাড়ে তিন কেজি এবং সেই পরিমাণ ফিতরা আদায় করতে হবে। যদি কেউ উল্লিখিত দ্রব্যমূল্যের সমপরিমাণ অর্থ দান করে, তাহলেও আদায় হয়ে যাবে। যদি কোনো শিশু ঈদুল ফিতরের সুবহে সাদিকের আগে জন্মগ্রহণ করে, তাহলে তার সাদাকাতুল-ফিতর আদায় করাও সচ্ছল অভিভাবকের ওপর ওয়াজিব। পক্ষান্তরে যদি কোনো ব্যক্তি ঈদুল ফিতরের সুবহে সাদিকের পূর্বে ইন্তেকাল করেন, তাহলে তার সাদাকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব হবে না।

ঈদের দিন যদি কোনো মুসলিম ব্যক্তি ও তার পরিবারবর্গের প্রয়োজনীয় খাবারের চেয়ে অতিরিক্ত আরো ২ কেজি ৪০ গ্রাম পরিমাণ নির্দিষ্ট খাবার মজুত থাকে, তাহলে ঐ ব্যক্তি ও তার পরিবারবর্গের সব সদস্যের ওপর ফিতরা প্রদান ফরজ হয়ে যাবে।

এ বছর ইসলামিক ফাউন্ডেশন কতৃ‌র্ক ধার্যকৃত ফিতরার পরিমাণ জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩১০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা। যারা জাকাত নিতে পারবেন, তারাও সাদাকাতুল ফিতর পাওয়ার উপযুক্ত। তবে সমাজের দরিদ্র-অনাথ এবং নিজের গরিব আত্মীয় ও প্রতিবেশীকে দেওয়াটাই অধিক উত্তম। কেননা, হাদিসে সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, দরিদ্রের খাবারের ব্যবস্থা করা। ঈদের দিন সকালেই ফিতরা দেওয়া সুন্নত। আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবিজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদের নামাজের জন্য বের হওয়ার পূর্বেই সাদাকাতুল ফিতর আদায়ের নির্দেশ দিতেন।’ (সহিহ বুখারি :১৫০৯)।

সাদাকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয় মূলত ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পরপর। হাদিসের ভাষ্যমতে, সুবহে সাদিকের পর থেকে ঈদের নামাজের আগে দেওয়াই উত্তম। তবে এ-সময় দেওয়া সম্ভব না হলে এর আগে বা পরেও দেওয়া যাবে। (বাহারে শরীয়ত, আলমগীরী প্রভৃতি)

পরিবারের প্রধানের ওপর নিজের ও অন্যান্য সদস্যের ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। তবে প্রাপ্তবয়স্ক সন্তান এবং বিবাহ দেওয়া কন্যার ফিতরা আদায় তার ওপর দায়িত্ব নয়। এক জনের ফিতরা একাধিক ব্যক্তিকে আবার একাধিক ব্যক্তির ফিতরা এক জনকে দেওয়া যাবে। আর যাদের সাদাকাতুল ফিতর দেওয়া যাবে না, তারা হলেন : ১. সাইয়েদ বংশীয় তথা সত্যিকারের আওলাদে রসুল ২. নেসাব পরিমাণ মালের মালিক ৩. নিজ সন্তান, নাতি ও নাতনি ৪. নিজ পিতা, মাতা, দাদা ও দাদি ৫. কোনো অমুসলমান ব্যক্তি বিধর্মী রাজ্যের প্রজা হলে।

লেখক :অতিথি অনুবাদক, মক্কা আল মুকাররামাহ ও সাবেক খতিব, জাতীয় সংসদ জামে মসজিদ

ইত্তেফাক/ইউবি

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন