বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

তিস্তার পাড়ে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন পার্ক

আপডেট : ০৩ মে ২০২২, ২৩:১২

রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার এপার-ওপার তিস্তা নদী বিস্তৃত জনপদ।নদী বক্ষে কোথাও জেগেছে বালুচর কোথাও পানির ঝর্ণার ধারা। কোথাও আবার কোমর বা হাঁটুসমান পানি। চারদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকা। নদীর ওপর দিয়ে ছুটছে ট্রেন ও চলছে ভারী যানবাহন। সকাল-বিকেল আর সন্ধ্যা-রাতে নজর কাড়ে অন্য রকম প্রকৃতি।এই নদীর অববাহিকায় রেল ও সড়ক সেতুকে ঘিরে গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন তিস্তা পার্ক। নদী আর প্রকৃতিকে  নিয়ে বিনোদনের জন্য নতুন এই সংযোজন ঘিরে বাড়ছে দর্শনার্থী ও পর্যটকদের আনাগোনা। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীসহ নানা বয়সী মানুষদের আকৃষ্ট করছে সম্ভাবনাময় এই পর্যটন শিল্প। সড়ক ও রেল সেতু ঘিরে তিস্তা নদীর বুকে এটি প্রথম পার্ক।

রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার উত্তরে তিস্তার পাড়ে গড়ে উঠেছে এই দৃষ্টিনন্দন পার্ক। রংপুর থেকে কুড়িগ্রাম যেতে তিস্তা সড়ক সেতু পার হয়ে হাতের বাঁয়ে তাকালেই দেখা মিলবে বাঁধের কোলঘেঁষা সুসজ্জিত তিস্তা পার্কটি। দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি বিনোদনের জন্য চমৎকার ও নজরকাড়া। ঈদে শিশু-কিশোরদের নির্মল আনন্দের জন্য পার্কটিকে সাজানো হয়েছে নতুন রঙে। তাদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন রাইড। আছে দর্শনার্থীদের জন্য নানা খাবারেরও ব্যবস্থা। পার্কটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের ঢল। সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর জন্য সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে দেখা যায় এই পার্কে। কেউ হেঁটে হেঁটে, কেউবা আবার ছুটে ছুটে দেখছেন পার্কের আশপাশ। 

তিস্তা পার্ক কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০২১ সালের মার্চে নদীর কোল ঘেঁষে শুরু হয় তিস্তা পার্কের নির্মাণ কাজ। গত এক বছরে শিশু-কিশোরদের আকৃষ্ট করতে বেশ কিছু আকর্ষণীয় রাইড সংযোজন ছাড়াও পার্কে জীবজন্তুর কৃত্রিম প্রতিকৃতি স্থাপন করা হয়েছে। লালমনির হাট উপজেলা পরিষদ থেকে জনৈক রুহুল আমিন দুলু নামে তিন বছরের জন্য সরকারি এই জমিটি ইজারা নিয়েছেন। পরে সেখানে করিম ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তত্বাবধানে তিস্তা পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন।পার্কটির জমির পরিমাণ প্রায় সাড়ে ছয় একর। 

পার্কটির নির্মাণকাজ শুরুর পর থেকেই স্থানীয়সহ রংপুর জেলা এবং পার্শ্ববর্তী জেলার বিভিন্ন এলাকার বিনোদন প্রেমী মানুষের সাড়া মিলেছে। অল্প সময়ের মধ্যে পার্কের পরিচিতি ও দর্শনার্থীদের আস্থা অর্জনে পৌঁছেছে। পার্কটিতে রাইডের জন্য রয়েছে তিস্তা সুপার এক্সপ্রেস, টয়ো মিনি ট্রেন, ফ্যামিলি ম্যারিগো রাউন্ড, ট্রেন ওভার ব্রিজ, মিনি ম্যারিগো রাউন্ড, সুইং চেয়ার, উড়োজাহাজ, দোলনা, ডিজিটাল ঢেকি। সঙ্গে দর্শনার্থীদের জন্য আড্ডা ও খাবার সুবিধা মেটাতে রয়েছে তিনটি ফুড কোর্ট।

জীবন সরকার নামের এক দর্শনার্থী বলেন, রমজানে বেশ কয়েকবার পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলাম। তিস্তা নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা সুন্দর এই পার্কটি আমাদের প্রত্যন্ত জনপদের মানুষের বিনোদনের জন্য অসম্ভব সুন্দর জায়গা। এখানকার পরিবেশ মনোমুগ্ধকর। বিশেষ করে পার্কে দাঁড়িয়ে গোধূলি সন্ধ্যার দৃশ্য উপভোগ করা। আবার কখনো বাতাসের সঙ্গে নদীর স্রোতে আর বালুচরে পানির লুকোচুরি দেখতে বেশ ভালো লাগে।

রংপুর নগরী থেকে  ২৩ কিলোমিটার দূরে তিস্তা পার্ক। এখানে রংপুর থেকে বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী। তারা বলেন, অনেকগুলো রাইড, পিকনিক স্পট, আড্ডা জোনসহ তিস্তা পার্কটি বেশ পরিচ্ছন্ন ও আকর্ষণীয়। তিস্তা নদীকে ঘিরে রংপুরে এ ধরনের কোনো পার্ক নেই। আমাদের মতো দূর-দূরান্ত থেকে অনেক মানুষ এখানে আসছে। পরিবেশটা বেশ উপভোগ্য।

তিস্তা পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুন্নবী মামুন বলেন, মানুষজন যেন একটু আনন্দ পায়, সে জন্যই নদীর পূর্ব প্রান্তে পার্কটি তৈরি করা হয়েছে। পার্কে শিশুদের চিত্তবিনোদনের বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। এখানে কৃত্রিম পাহাড়, লেক, সুইমিংপুল ছাড়া বিভিন্ন রাইড রয়েছে। শুধু শিশু-কিশোরই নন, এখানে সব বয়সী মানুষ আনন্দে সময় কাটাতে পারবে। শুধু তাই নয়, দক্ষিণে থাকা তিস্তা নদীর মনোরম দৃশ্য দেখতে বাঁধের ওপর দাঁড়ালে মন জুড়িয়ে আসবে।  

তিস্তা নদীর কাউনিয়া প্রান্তে গড়ে ওঠা তিস্তা পার্কের মতো রংপুরের পীরগাছা ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ মোহনায় তিস্তা নদী ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে আলী বাবা থিম পার্ক নামে বৃহৎ একটি বিনোদন কেন্দ্র। এ ছাড়া রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মহিপুরে শেখ হাসিনা তিস্তা সড়ক সেতুর নিচে একটি ভাসমান ও অভিজাত রেস্টুরেন্ট রয়েছে। 

রংপুর নগরীর নিসবেতগঞ্জে ঘাঁঘট নদীর অংশ বিশেষসহ পার্শ্ববর্তী বিস্তৃত নিচু এলাকায় সবুজে সাজানো কোলাহলমুক্ত পরিবেশে রয়েছে প্রয়াস সেনা বিনোদন। সেনা সদস্যদের নিখুঁত কারিগরি পরিকল্পনায় বাঁশ ব্যবহার করে এই পার্কটি সাজানো হয়েছে।

 

ইত্তেফাক/এএইচপি