শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দাম বাড়ানোর পরও কেন মিলছে না সয়াবিন

আপডেট : ০৭ মে ২০২২, ২১:১৩

ঈদের সপ্তাহখানেক আগে থেকেই বাজারে ভোজ্য তেলের সংকট চলছিল। ঈদের পর সেই সংকট চরম আকার ধারণ করে। এর মধ্যে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৪০ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়। তারও বাজারে সয়াবিনের তেল মিলছে না। 

বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভোজ্যতেলের রেকর্ড দাম বাড়িয়েছে। নতুন দর অনুযায়ী, খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকা, যা এতদিন ১৪০ টাকা ছিল। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৯৮ টাকা করা হয়েছে। ৫ লিটারের বোতলের দাম হবে ৯৮৫ টাকা। সংগঠনটির শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছিলেন, দাম সমন্বয় হলে তেলের সংকট থাকবে না। কিন্তু বাজারে সেই চিত্র পাওয়া যাচ্ছে না।

রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা ইয়াকুব হোসেন, আলিফ শেখ ও মনসুর আলী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তেলের নতুন দাম কার্যকর হলেও দোকানে মিলছে না বোতলজাত তেল। আমরা দোকানে গিয়ে কোথাও তেল পাচ্ছি না। দু-এক জায়গায় নতুন দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। বোতালজাত এক লিটার তেল ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।’

ফাইল ছবি

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে একাধিক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের পর তেলের দাম বাড়াবে বলেই কোম্পানিগুলো ঈদের ১৫ দিন আগে থেকেই সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল, যার কারণে বাজারে সংকট দেখা দেয়।

রাজধানীর বাড্ডার ব্যবসায়ী তোরাব আলি ও বাদল মিয়া বলেন, ‘ঈদের আগে থেকেই কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেল দিচ্ছিল না, তাই বাজারে সংকট তৈরি হয়েছে। এখন দাম যেহেতু বেড়েছে, দু-এক দিন পরে হলেও কোম্পানিগুলো তেল দেবে। ’

তবে তেল সরবরাহকারী কোম্পানিগুলোর অভিযোগ, ঈদের আগে বাজারে পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করা হয়, ঈদের পর তেলের দাম বাড়ার খবরে খুচরা বিক্রেতারা তেল মজুদ করেছেন।

এদিকে ডিলাররা জানান, শুক্রবার মিলগুলোর অফিস বন্ধ থাকায়, রবিবার (৮ মে) থেকে নতুন দামে বিক্রি শুরু হলে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে।

অপরদিকে, মিল মালিকদের দাবি অনুযায়ী প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম সর্বোচ্চ ৪০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাবে সায় দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নতুন দাম বেঁধে দেওয়ার পরও বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। বাজারে পাঁচ লিটারের বোতলজাত তেল নেই। এক ও দুই লিটারের বোতল নেই বললেই চলে। দু-একটি দোকানে খোলা ও এক লিটারের বোতলজাত তেল মিললেও দাম বেশি।

এমন অবস্থায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটি কিনতে ক্রেতার নাভিশ্বাস উঠছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, কিছু অসাধু মিল মালিক ও খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। অধিক লাভের আশায় নতুন দাম বেঁধে দেওয়ার পরও চক্রটি বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। ফলে দাম বেড়েই চলেছে।

শুক্রবার (৬ মে)  সরকার বোতলজাত ও খোলা সয়াবিনের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ভোক্তাপর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯৮ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৮০ টাকায় বিক্রি হবে। এ ছাড়া ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৯৮৫ টাকা।

ফাইল ছবি

একই সঙ্গে প্রতি লিটার পাম তেলের দাম ১৭২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, আগের চেয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলে লিটার প্রতি ৩৮ টাকা এবং খোলা তেলে লিটার প্রতি ৪০ টাকা বাড়ানো হয়েছে।

কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘বাজারে তেল কিনতে এসে যাতে ক্রেতার ভোগান্তি না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। নির্ধারিত দামে যাতে তেল কিনতে পারে সেজন্য তদারকি জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি যারা তেল নিয়ে কারসাজি করছে তাদের চিহ্নিত হরে আইনের আওতায় আনতে হবে।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মিল পর্যায় থেকে সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। তবে বাজার তদারকি করতে গিয়ে দেখেছি-খুচরা বিক্রেতারা তেল অবৈধভাবে মজুদ করেছেন। তারা দোকানে দৃশ্যমান জায়গায় তেল রাখছেন না। এতদিন বেশি দামে বিক্রির আশায় দোকানের পেছনে বা বস্তায় ভরে তেল মজুদ করেছেন। অভিযানকালে আমরা হাতেনাতে ধরে শাস্তির আওতায় এনেছি। তবে এবার যেহেতু নতুনভাবে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে এই দরে তেল বিক্রি হচ্ছে কিনা তা আমরা তদারকি করছি। অনিয়ম পেলেই সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে।’

 

 

ইত্তেফাক/ইউবি