সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১৩ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

অসদাচারণের অভিযোগ

রেলের টিটিই বরখাস্তের ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি

আপডেট : ০৮ মে ২০২২, ০০:৪২

রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয়ে বিনা টিকিটের ৩ ট্রেন যাত্রীর সাথে অসদাচারণ এবং টিকিট বানিয়ে দেওয়ার দায়ে ঈশ্বরদীর ভ্রাম্যমাণ টিকিট পরীক্ষক (টিটিই) শফিকুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম বাবুকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অন্য দুই সদস্যের মধ্যে রয়েছেন সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী সদস্য শিফন আলী এবং রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীর সহকারী কমান্ডার আবু হেনা। আগামী দুই কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত  প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলাম কমিটির ইত্তেফাককে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রেলমন্ত্রীর আত্মীয়ের সাথে ঘটনা ঘটার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বৃহস্পতিবার (৫ মে) পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিনের নির্দেশে মোবাইলে টিটিই শফিকুল ইসলামকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ জানানো হয়। ৬ মে শুক্রবার থেকে এই আদেশ কার্যকর হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন ।

জানা যায়, ঢাকাগামী আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনে ৫ মে রাতে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন থেকে তিনযাত্রী বিনা টিকিটে এসি কেবিনে চেপে বসেন। এসময় ট্রেনের কর্তব্যরত টিটিই শফিকুল ইসলাম তাদের কাছে টিকিট দেখতে চাইলে তারা রেলমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন। টিটিই বিষয়টি পাকশী বিভাগীয় রেলের সহকারী বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (এসিও) নুরুল আলমের সঙ্গে আলাপ করলে তিনি সর্বনিম্ন ভাড়া নিয়ে টিকিট কাটার পরামর্শ দেন। এসিও’র পরামর্শ অনুযায়ী টিটিই শফিকুল ইসলাম ওই তিন ট্রেনযাত্রীকে এসি টিকিটের পরিবর্তে মোট এক হাজার পঞ্চাশ টাকা নিয়ে সুলভ শ্রেণির নন এসি কোচে সাধারণ আসনের টিকিট বানিয়ে দেন।

সূত্র জানায়, ওই তিন যাত্রী তাৎক্ষণিকভাবে ট্রেনে লিখিত কোনো অভিযোগ না করলেও তারা ঢাকায় পৌঁছে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে এবং কমলাপুর রেল ষ্টেশনে ইমরুল কায়েস প্রান্ত টিটিই শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে ‘অসদাচরণ’ করার অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগ পেয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) নাসির উদ্দিন সংশ্লিষ্ট টিটিইকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। ইমরুল কায়েস প্রান্ত রেলমন্ত্রীর মামা শ্বশুর বাড়ির প্রতিবেশী। তিনিও মন্ত্রীর দুই শ্যালকের সাথে ট্রেনে বিনা টিকিটে অবস্থান করছিলেন।

বরখাস্ত হওয়া শফিকুল ইসলামের সঙ্গে স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুসারে আমি তাদের কাছে টিকিট চেয়েছি। তারা টিকিট দেখাতে পারেনি। তখন তারা রেলমন্ত্রীর পরিচয় দিলে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের সুলভ শ্রেণির টিকিট বানিয়ে দিয়েছি। তাদের সাথে কোনো প্রকার বাজে আচরণ আমিও করিনি তারাও করেনি। তবে দায়িত্ব পালন অবস্থায় আমি মোবাইলে জানতে পারি আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলমন্ত্রীর পরিচয় প্রদানকারীরা আমার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। রবিবার আমাকে পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ে ডাকা হয়েছে। সেখানে গিয়ে আমি ঘটনার বিবরণ দিব।’

এ বিষয়ে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ডিসিও নাসির উদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি সেখানে ছিলাম না। এই অপ্রীতিকর ঘটনার যাতে আর না ঘটে সেজন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। দুই কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।’

ইত্তেফাক/এসজেড