শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দেশে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে প্রতি বছর জন্ম নেয় ১০ হাজার শিশু

আপডেট : ০৮ মে ২০২২, ১০:০০

থ্যালাসেমিয়া রক্তস্বল্পতাজনিত বংশগত রোগ। বাবা-মা উভয়ে যদি ত্রুটিপূর্ণ জিন বহন করেন তাহলে তাদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। সচেতনতার অভাবে আমাদের দেশে এই রোগের বাহকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। ব্যাপক জনগোষ্ঠী এখনো এই রোগ সম্পর্কে সচেতন নয় এবং বাহক নির্ণয় হয়নি। ফলে বাহকের সংখ্যা দিনকে দিন বেড়ে যাচ্ছে।

এমন পরিস্থিতিতে আজ ৮ মে পালিত হবে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস-২০২২। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারিত হচ্ছে—‘থ্যালাসেমিয়া :নিজে জানি, যত্নবান হই এবং অপরকে সচেতন করি’। দিবসটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সংগঠন নানা কর্মসূচি নিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রতিষ্ঠিত কোনো ডাটা নেই। তবে আমাদের পর্যবেক্ষণ, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১০ থেকে ১২ শতাংশ মানুষ এই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক, কিন্তু তারা থ্যালাসেমিয়ার রোগী নন। প্রতি বছর এই রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে ১০ থেকে ১২ হাজার শিশু।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৭ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক। থ্যালাসেমিয়া বাহকদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে প্রতি বছর নতুন করে ৭ হাজার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর জন্ম হচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া রোগীরা প্রতি মাসে এক থেকে দুই ব্যাগ রক্ত গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। চিকিৎসা না করা হলে এ রোগীরা রক্তশূন্যতায় মারা যায়।

বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, আমরা ব্যাপক সংখ্যক জনগোষ্ঠীকে এখনো সচেতন করতে পারিনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই রোগটিকে গুরুত্ব দিয়েছে। এই রোগ প্রতিরোধে সরকারি-বেসরকারিভাবে জেলা উপজেলা পর্যায়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বাহক নির্ণয় করতে হবে এবং বাহকে বাহকে বিয়ে বন্ধ করতে পারলে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।

থ্যালাসেমিয়া রোগের একমাত্র চিকিৎসা—বোনম্যারু ট্রান্সপ্ল্যান্ট, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তবে আমাদের দেশে থ্যালাসেমিয়ার রোগীদের মধ্যে এখনো বোনমেরু ট্রান্সপ্ল্যান্ট এখনো শুরু হয়নি। অন্য যে চিকিৎসা তাও ব্যয়বহুল।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা প্রটোকল মেনে চিকিৎসা দিলে একজন থ্যালাসেমিয়ার রোগী দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে। আর এই রোগীদের বাঁচিয়ে রাখতে গেলে তাদের প্রধান উপাদান হচ্ছে নিরাপদ রক্ত। সারা জীবন এই রোগীদের অন্যের রক্তে বেঁচে থাকতে হয়। বারবার রক্ত নেওয়ার ফলে তাদের শরীরে কিছু অঙ্গে ক্ষতিকর আয়রণ জমে যায়, এই অপ্রয়োজনীয় আয়রণ বের করতে কিছু ওষুধ তাদের খেতে হয়, যা অনেক দামি। তবে আশার কথা হচ্ছে, এখন ঐ ওষুধগুলো আমাদের দেশেই তৈরি হয়। তবে তা ব্যয়বহুল। এছাড়া তাদের খাদ্যাভাস ভালো রাখতে হয় এবং নিয়মিত টেস্ট করাতে হয়। তাদের বাঁচিয়ে রাখতে প্রফুল্ল জীবন যাপন করতে হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বংশানুক্রমের ব্যাপারটা হলো—বাবা-মা দুই জনেই যদি থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হয় তাহলে কিছু সন্তান সুস্থ হবে, আবার কিছু সন্তান রোগী অথবা বাহক হবে। বাবা-মা দুই জনই যদি রোগী হয় তাহলে সুস্থ বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আবার যদি মা-বাবার একজন রোগী হয়, অন্যজন সুস্থ হয় তাহলে কিছু সন্তান বাহক হবে; কিন্তু সুস্থ হবে। তার মানে হলো রোগটি মা-বাবার থেকেই বাচ্চার মধ্যে সঞ্চালিত হয়। তাই যদি বিয়ে করার আগে রক্তের পরীক্ষা করে নেওয়া যায় যে, পাত্র বা পাত্রী কেউই বাহক বা রোগী নয়, তাহলে রোগটি সঞ্চালিত হতে পারবে না।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতি হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক, ডা. এ কে এম একরামুল হোসেন বলেন, বাংলাদেশের জেলা পর্যায়ে সরকারি যে হাসপাতালগুলো আছে সেখানে একটি করে থ্যালাসেমিয়ার সেন্টার করা হোক। যেখানে থ্যালাসেমিয়ার রোগীদের আধুনিক প্রটোকল অনুযায়ী বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের ৬ হাজার রেজিস্টার্ড থ্যালাসেমিয়ার রোগী আছে, যাদের ৮০ ভাগ রোগীর আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। সেই রোগীরা যেন জেলা পর্যায়ে আধুনিক প্রটোকল মেনে চিকিৎসা নিতে পারে। এছাড়া জেলা উপজেলা পর্যায়ে সচেতনতা তৈরি করে, বাহক নির্ণয় করতে পারি এবং বাহকে বাহকে বিয়ে বন্ধ করতে পারলে এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব।

ইত্তেফাক/ ইআ