ঘূর্ণিঝড় ‘আসানি’র প্রলয় বিগ্রহ গতকাল রাত থেকে দুর্বল হতে শুরু করেছে। এটি দ্রুতগতিতে চেন্নাইয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে।গতকাল রাত ৯টায় ঘূর্ণিঝড়টি বিশাখাপত্তমের প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে বিজায়ওয়াড়া উপকূলের কাছে পৌঁছে।
জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার বলছে, ‘আসানি’ স্থলভাগে ওঠার আগেই বাঁক খেয়ে ফের সাগরে নেমে এসে শক্তি হারাবে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে রূপ পরিগ্রহ করে সাগরে নেমে আসতে পারে।বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ আরো দুর্বল হতে হতে নিম্নচাপে পরিণত হবে। আজ রাতেই শক্তি ক্ষয় করে আসানি রূপ নেবে নিম্নচাপে। এরপর ধীরে ধীরে গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। তবে এর প্রভাবে আগামী তিন দিন সারা দেশে বিশেষ করে উপকূলবর্তী জেলাগুলোতে হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদগণ। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য স্হানেও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হচ্ছে। ঢাকায় গতকাল বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১৩ মিলিমিটার বর্ষণ হয়। ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ২০৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়।
সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা জানিয়েছেন, আগামী ১৩ মে থেকে বৃষ্টিপাত কমে যাবে।সাগর বিক্ষুব্ধ থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।
আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, ঘূর্ণিঝড় আসানি গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
এদিকে আজ দেশের উপকূলীয় তিন বিভাগে (খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম) অতিভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। উপকূলীয় এই তিন বিভাগে আগামী তিন দিন ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্হার সাইক্লোন সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্হা এসকাপ।এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেওয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়।আসানি নামটি প্রস্তাব করেছিল শ্রীলঙ্কা। সিংহলা ভাষায় এর অর্থ ক্রোধ।
ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ ভাঙন আতঙ্কে উপকূলের মানুষ
পাইকগাছা (খুলনা) সংবাদদাতা জানান, ইয়াস, আম্ফানের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই ফের ‘আসানি’র শঙ্কার আবর্তে পড়েছেন মানুষ। আতঙ্কিত উপকূলের মানুষ। প্রতিটি ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পাইকগাছা, কয়রাসহ এই অঞ্চলে দুর্বল বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলবাসীর ভরসারস্থল বেড়িবাঁধ দুর্বল থাকায় উপকূলবাসীর মনে শঙ্কা বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ও হালকা বাতাস বয়ে চলেছে।তাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপকূলীয় নদীভাঙন এলাকায় বসবাসরত সাধারণ মানুষ|
চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চট্টগ্রাম থেকে বঙ্গোপসাগরে অবস্হানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় আসানিকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, রেড ক্রিসেন্ট, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি, চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কতৃর্পক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সবাই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন বলে গতকাল মঙ্গলবার ইত্তেফাককে জানান|
শরণখোলাসহ দুবলারচর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব নেই
পিরোজপুর অফিস ও শরণখোলা (বাগেরহাট) সংবাদদাতা জানান, শরণখোলাসহ বঙ্গোপসাগরের দুবলারচর অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের কোনো প্রভাব নেই।সাগর শান্ত।ফিশিংবোট স্বাভাবিক সময়ের মতো মাছ ধরছে।জেলেপল্লি দুবলা ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির কর্মকর্তা ফরেস্টার দিলীপ মজুমদার সন্ধ্যায় মুঠোফোনে ইত্তেফাককে বলেন, দুবলারচর সন্নিহিত বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় আসানির কোনো প্রভাব নেই।আকাশ অনেকটাই মেঘমুক্ত বলা যায়।
এদিকে কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) সংবাদদাতা জানান, উপজেলায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই দফায় বৃষ্টির ফলে খেতের পাকা ধানে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।এতে চরম হতাশায় দিন পার করছেন কৃষকরা।একদিকে শ্রমিক সংকট, অন্যদিকে বৈরী আবহাওয়া যেন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।খেতে কেটে রাখা ধান ঘূর্ণিঝড় আসানির বৃষ্টির পানিতে ভাসছে।ধানের ফলন ও দাম ভালো হলেও কৃষকের মুখে হাসি নেই।