বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

নাইকো দুর্নীতি: কানাডা পুলিশের সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের উদ্যোগ

আপডেট : ১১ মে ২০২২, ০৮:০৭

বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি নাইকোর বিরুদ্ধে কানাডার পুলিশের কাছ থেকে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। সংগ্রহ করা গেলে বিনিয়োগ বিরোধ নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত ইকসিডে সেগুলো উপস্থাপন করা হবে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন সুনামগঞ্জের টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণ হয়। এতে দেশের আর্থিক ও পরিবেশগত বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। পরপর দুইটি বিস্ফোরণের ঘটনায় সরকার ২০০৮ সালে নাইকোর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করলে তা স্থানীয়ভাবে সুরাহা হয়নি। দেশের আরেকটি স্থানে ফেনী গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনার জন্য নাইকো বিল দাবি করলে তা বকেয়া রাখে সরকার। এ পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালে ইকসিডে পৃথক দুইটি মামলা করে নাইকো। একটি মামলার বিষয়বস্তু ছাতক (টেংরাটিলা) গ্যাসক্ষেত্রে দুটি বিস্ফোরণের দায় নাইকোর ওপর বর্তায় কি না এবং বাংলাদেশ ও পেট্রোবাংলা এই ক্ষতিপূরণ দাবি করতে পারে কি না। আরেকটি মামলার বিষয়বস্তু হলো পেট্রোবাংলা ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের দাম পরিশোধ বন্ধ রাখতে পারে কি না। এই মামলাগুলো চলাকালে ২০১৬ সালে নাইকোর বিরুদ্ধে প্রায় সোয়া ৯ হাজার কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে ইকসিডে মামলা দায়ের করে পেট্রোবাংলা-বাপেক্স।

এদিকে ছাতকে টেংরাটিলা গ্যাসক্ষেত্র বিস্ফোরণের পর টেংরাটিলা, ফেনী ও কামতা গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলনের কাজ নাইকোকে কম খরচে পাইয়ে দিয়েছে তখনকার সরকারের একটি অংশ। এই তিনটি গ্যাসক্ষেত্রকে ‘প্রান্তিক’ (যে গ্যাসক্ষেত্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলনের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে) দেখিয়ে গ্যাস উত্তোলনের জন্য ১৯৯৯ সালে নাইকো-বাপেক্স যৌথ উদ্যোগের সঙ্গে চুক্তি করেছিল। এ দুর্নীতির অভিযোগে কানাডায়ও মামলা এবং তদন্ত হয়েছে এবং বাংলাদেশে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ নাইকোর বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে কানাডার আদালতে। এখন ইকসিডে চলমান মামলাগুলোতে বাংলাদেশ সরকার কানাডার পুলিশের সেই তদন্তের সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করার জন্য এগোচ্ছে।

ইতিমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে জ্বালানি বিভাগে পাঠিয়েছে পেট্রোবাংলা। জ্বালানি বিভাগ পেট্রোবাংলার প্রস্তাবনার ওপর মতামত বা ভেটিং করতে গত মাসে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের পর প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। এ প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান বলেন, নাইকোর বিষয়ে ইকসিডে মামলা চলছে। আমাদের আইনজীবীদের পরামর্শ অনুযায়ী মামলাটির দ্রুত সুরাহার জন্য অধিকতর সাক্ষ্য-প্রমাণ ইকসিডে সরবরাহের চেষ্টা চলছে।

ইকসিডের বাইরে দেশেও নাইকোর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সরকার ও পেট্রোবাংলা ২০০৮ সালের ১৫ জুন নাইকোর কাছে ৭৪৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে মামলা দায়ের করে। ঐ মামলাটি চলমান রয়েছে। কনজু্যমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম নাইকোর বিরুদ্ধে একটি রিট মামলা দায়ের করে। ২০১৭ সালের ২৪ আগস্ট ঐ মামলা রায় দেয় হাইকোর্ট। রায়ে বাপেক্স ও নাইকোর জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট (জেভিএ) এবং পেট্রোবাংলা ও নাইকোর মধ্যকার গ্যাস ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি (জিপিএসএ) বেআইনি, ক্ষমতা বহির্ভূত ও শুরু থেকে বাতিলের রায় দেয়। একই সঙ্গে গ্যাসক্ষেত্র ব্লক-৯ এ নাইকোর থাকা সকল সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেওয়া হয়। এই আদেশের বিরুদ্ধে নাইকো আপিল করেছে। এটি সেই আপিল এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

ইকসিডে বাংলাদেশের পক্ষে মামলায় লড়ছেন মার্কিন আইনি প্রতিষ্ঠান ফলি হোগ এলএলপির পার্টনার দিরিক সি স্মিত। জানা যায়, তিনি গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানি সচিব ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানকে পাঠানো এক ইমেইলে রয়্যাল কানাডিয়ান পুলিশ থেকে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের পরামর্শ দেন। এতে করে ইকসিডের আরবিট্রেশনে বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবে। এজন্য যত দ্রুত সম্ভব কানাডার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।

ইত্তেফাক/ ইউবি