বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

দিনে ৬০ লাখ টাকার মরিচ কেনাবেচা হয় যে গ্রামে

আপডেট : ১২ মে ২০২২, ১৯:০২

কাঁচা মরিচ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা। এবছর ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের মুখে এখন তৃপ্তির হাসি।

এমন দাম পেলে প্রতি বিঘা জমিতে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন তারা। কৃষি বিভাগও মরিচ চাষে দিচ্ছে পরামর্শ।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, এখন আর কোনো চিন্তা নেই বাড়ির কাছে আড়ত বসেছে। খেত থেকে মরিচ এনে সরাসরি বিক্রি করে ভাল দাম পাওয়া যায়। আগে খেত থেকে মরিচ তুলে বালিয়াডাঙ্গী আড়তে যেতে ৪-৫ কিলোমিটার এবং শহরে যেতে লাগতো ২৫-২৬ কিলোমিটার রাস্তা। এতে গাড়িতে করে আড়তে নেওয়া, আড়তদারদের টোল দেওয়া এবং দর-কষাকষির ঝামেলা বেশি ছিল।

বৃহস্পতিবার (১২ মে) ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের আড়তে এসব কথা বলেন কৃষকরা।

এবছর মরিচের ফলন এবং দাম দুটোই ভালো। চাষিরা বলছেন, এক বিঘা জমিতে ৪০ হাজার টাকা খরচের বিপরীতে বিক্রি হয় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। চার কাঠা জমিতে থেকে প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে চার মণ পর্যন্ত মরিচ পাই। ১০ বিঘা জমিতে ধান করে যা হবে, দশ কাঠায় মরিচ চাষ করে সেই টাকা আয় হবে।

ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় আনন্দে কাজ করছেন কৃষকরা

উপজেলার মহাজনহাট থেকে মধুপুর গ্রাম পর্যন্ত তিন কিলোমিটারের রাস্তায় মহাজনহাটে দুটি, লালাপুর জঙ্গলবাড়ী গ্রামের তিন রাস্তার মোড়ে একটি, কাঁচনা মধুপুর গ্রামের পুকুরপাড়ে দুটি এবং মধুপুর গ্রামের ভেতরে দুটি স্থানে প্রতিদিন আড়ত বসিয়ে কাঁচা মরিচ কেনাবেচা হচ্ছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আড়ত বসিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে মরিচ কিনে ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকার মরিচ কেনাবেচা হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষক সাদেকুল এবং আবু তোয়াব বলেছেন, ‘খেত থেকে তুলেই ন্যায্যমূল্যে সরাসরি বিক্রি করে নগদ টাকা নিয়ে ঘরে ফিরছি। ঝামেলামুক্ত হওয়ায় দিন দিন এসব আড়তে মরিচ বিক্রির চাহিদা বাড়ছে। এদিকে ব্যবসায়ীরা সরাসরি টাটকা মরিচ কিনে ঢাকার ব্যবসায়ীদের কাছে গাড়িতে তুলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। তবে, মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে জিম্মিও হতে হচ্ছে না কাউকে।’

তারা আরও বলেন, ‘প্রযুক্তি কৃষকের হাতের মুঠোয় পৌঁছে যাওয়ায় নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এমন কার্যক্রম কৃষকদের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।’

মধুপুর গ্রামের ভেতরে সবচেয়ে বড় আড়ত বসিয়েছেন এবাবুল হক, আজিজুল হক, দুলালসহ পাঁচজন ব্যবসায়ী। তারা জানান, সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত তাদের আড়তে প্রায় ৬ হাজার কেজি মরিচ কেনা হয়। এসব মরিচ বিকাল ৪টার মধ্যে ট্রাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ঢাকায়। ঢাকার ব্যবসায়ীরা প্রতি কেজিতে যা কমিশন দেন, তা নিয়েই আড়তের সবাই খুশি। আজকে প্রতি কেজি মরিচ কেনা হচ্ছে ৩৪ থেকে ৩৭ টাকা কেজি দরে।

মধুপুর গ্রামে বসা আড়তে ২০ কেজি মরিচ ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন ওই গ্রামের কৃষক সাদেকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এই মরিচ বালিয়াডাঙ্গী কাঁচামাল আড়ত অথবা ঠাকুরগাঁও রোড আড়তে নিয়ে গেলে গাড়ি ভাড়া ১০০ টাকা এবং আড়তদারকে ৯০ টাকা টোল দিতে হতো। ৩ ঘণ্টার মতো সময় ব্যয় হতো। সময় ও খরচ দুটোই বাঁচছে বাড়ির পাশে ব্যবসায়ীদের কাছে মরিচ বিক্রি করে।’

মরিচ বেচা কেনায় ব্যস্ত সবাই

মরিচ ব্যবসায়ী দুলাল বলেন, ‘বাজারগুলোতে সকালবেলা ৮টার মধ্যেই আড়ত বসে। আমরা মোবাইলে সেখানকার দাম শুনে একই দামে বাড়ির পাশে মরিচ কিনছি। ঢাকার ব্যবসায়ীদের ভিডিও কলে মরিচের কোয়ালিটি দেখানোর পর তারা পরিমাণমতো অর্ডার করছেন। আমরা গাড়িতে করে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’

কৃষকের মরিচ চাষে উদ্বুদ্ধ ও পরামর্শ দিতে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। 

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু হোসেন বলেন, ‘কৃষকদের মরিচের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সে জন্য আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে আছেন। আমরা সার্বক্ষণিক কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি এবং পরামর্শ দিচ্ছি।’ 

‘এ ছাড়া, সীমান্ত এলাকার কৃষকেরাও এখন প্রযুক্তিনির্ভর কৃষিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছেন। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বাজারদর জানতে পারছেন। বাড়ির পাশে ফসল বিক্রি করে ন্যায্যমূল্যের পাশাপাশি অতিরিক্ত খরচ থেকে বাঁচছেন। কৃষকেরা দুই দিক দিয়েই উপকৃত হচ্ছেন’, বলেন তিনি। 

প্রসঙ্গত, চলতি বছর ঠাকুরগাঁও জেলায় ১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ হয়েছে।

ইত্তেফাক/এএইচ