বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

জলাবদ্ধতা ঠেকাতে রাজধানীর ১৭৮ স্থানে সংস্কার শুরু

আপডেট : ১৪ মে ২০২২, ০০:৫২

বৃষ্টি হলেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবছর দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। অপর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বন্ধ নর্দমা, সরু নালা ও বর্জ্য জমায় পানি খালে পৌঁছতে না পারায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। দুই সিটি করপোরেশন এমন ১৭৮টি জায়গা শনাক্ত করেছে যেখানে গিয়ে পানি বাধাগ্রস্ত হয়। আর বর্ষায় যেন এসব জায়গায় পানি না জমে এ জন্য স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা করে সংস্কার কাজ শুরু করেছে তারা। তবে দুই সিটির নতুন ৩৬ টি ওয়ার্ডে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কারণে এবারো অতি বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২০ সালে ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব (খাল ও ডেÌনেজ) আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়। এরপর খাল ও বক্স কালভার্ট পরিষ্কারের কাজ করছে দুই সিটি। কিন্তু বৃষ্টির পানি নর্দমা হয়ে খালের মাধ্যমে নদীতে যাওয়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ধাপ পার করতে হয়। আর এ জন্য বৃষ্টির পানি রাজধানীর বিভিন্ন স্পটে গিয়ে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সেসব পানি খালে পৌঁছাতে সময় লাগে। এজন্য রাজধানীর জলাবদ্ধতা মোকবিলায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি ১৩৬ ও উত্তর সিটি করপোরেশন ৪২টি স্পট শনাক্ত করেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রকৌশল বিভাগ জানায়, জলাবদ্ধপ্রবণ ১৩৬টি স্থান  চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০টিরও বেশি স্থানের সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে কিছু অংশের কাজ চলছে, আবার কিছু অংশের কাজ শুরু হবে। এ ছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেন, বক্স কালভার্ট ও খাল পরিষ্কারের কার্যক্রম চলছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. খায়রুল বাকের বলেন, আমরা জলাবদ্ধতা নিরসনে স্পল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। এর মধ্যে আমাদের ১৩৬ টি স্পটের মধ্যে বেশিরভাগেরই সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গতবছর আমাদের উদ্যেগের কারণে ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, সচিবালয়, নটরডেমসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন আর পানি জমে না। তবে নতুন ওয়ার্ডে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করে আগাতে হচ্ছে। কারণ সেখানে নতুন ড্রেনেজ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। আশা করছি সব উদ্যোগ সম্পন্ন হলে জলাবদ্ধতা থাকবে না।

অন্যদিকে উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগ থেকে জানা যায়, ৪২ টি স্পটের যেখানে গিয়ে বৃষ্টির পানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সেসব জায়গায় ইতিমধ্যে বর্জ্য সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। তবে নতুন ওয়ার্ডগুলোতে এখনো কোন কাজ শুরু হয়নি। এ বিষয়ে ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, জলাবদ্ধতাপ্রবণ স্থান হিসেবে আমরা ৪২টি স্হান চিহ্নিত করেছি। এগুলো সংস্কারের কাজ চলছে। এ ছাড়া খাল সংস্কারের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তবে যুক্ত হওয়া নতুন ওয়ার্ডগুলোতে জলাবদ্ধতা হতে পারে। কারণ এসব এলাকায় এখনো কাজ শুরু হয়নি। তিনি আরও বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসির ১০টি অঞ্চলের জন্য ১০টি র‍্যাপিড অ্যাকশন টিম গঠন করা হবে। যারা অঞ্চলভিত্তিক সমস্যা সমাধানে দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। এই টিম আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে গঠন করা হবে। তবে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এবার জলাবদ্ধতা অনেক কম হবে বলে প্রত্যাশা করেন মেয়র।

এ বিষয়ে নগর পরিকল্পনাবিদ বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্সের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, সিটি করপোরেশন খালগুলো উদ্ধার করলেও এখন আবার সেগুলো জনসচেতনতার অভাবে স্থানীয়রা দখল করে ফেলছে। এছাড়া খালের সাথে ড্রেনের সংযোগ ঠিক রাখতে সারাবছরই তদারকি দরকার। আর শনাক্ত করা স্পটগুলায় দ্রুত সংস্কার শেষ করতে হবে। কারণ ইতিমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। এর সুফল পেতে এসব কাজ আরো আগেই শেষ করার দরকার ছিলো।

ইত্তেফাক/এএইচপি