শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাজার থেকে স্বস্তি উধাও

আপডেট : ১৪ মে ২০২২, ০৮:০০

সয়াবিন তেল নিয়ে ভোগান্তির মধ্যেই বাজারে নতুন করে বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। গত এক সপ্তাহের মধ্যে দাম বেড়েছে এমন পণ্যের মধ্যে রয়েছে মসুর ডাল, আটা, ময়দা, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, ব্রয়লার মুরগি ও ডিম। এর আগে রমজান মাস জুড়েই বাড়তি ছিল প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম। এভাবে দফায় দফায় নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন স্বল্প আয়ের মানুষ। তারা কাটছাঁট করেও সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজার ও শান্তিনগরসহ বেশ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দামের এ চিত্র পাওয়া যায়। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, দেশে নিত্যপণ্যের চাহিদার একটি বড় অংশ আমদানি করে মেটাতে হয়। করোনা মহামারি পরবর্তী অবস্থা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বিভিন্ন কারণে বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বেড়েছে পরিবহনসহ অন্যান্য ব্যয়ও। ফলে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

গতকাল খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকা, এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ১৯৫ থেকে ২০০ টাকা, ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন ৯৮০ থেকে ৯৯০ টাকায় বিক্রি হয়। ঈদের পর গত ৫ মে এক লাফে ব্যবসায়ীরা প্রতি লিটার সয়াবিনে ৩৮ টাকা বাড়িয়েছে। ঈদের আগে রমজানের শুরুতে ৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ৭৫০ থেকে ৭৬০ টাকা ও এক লিটারেরর বোতলজাত সয়াবিনের দাম ছিল ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। 

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে তেলের মূল্যবৃদ্ধির বাস্তবতা মেনে নিতে হবে। তবে আমরা কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করছি যাতে তেলের ক্রয় মূল্য, পরিবহন ব্যয়, শুল্কসহ সব ধরনের ব্যয় ধরে যৌক্তিক পর্যায়ে মূল্য নিশ্চিত করা যায়। এদিকে তেল নিয়ে ভোগান্তির মধ্যে বাজারে ঝাঁজ বেড়েছে পেঁয়াজের। 

গতকাল খুচরা বাজারে দেশি পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। যা এক সপ্তাহ আগে যথাক্রমে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা ও ২৫ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গত ৫ মে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন শেষ হওয়ার পর নতুন করে সরকার আর আমদানির অনুমোদন দিচ্ছে না। ফলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। 

হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এই বন্দর দিয়ে সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল ১ হাজার ৯০২ টন পেঁয়াজ এসেছে। ঈদের পর হিলি বন্দর দিয়ে অন্যান্য পণ্য আমদানি-রপ্তানি শুরু হলেও আর কোন পেঁয়াজ আসেনি। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ৬৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ ও আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ৫৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

 নতুন করে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি না দেওয়ার প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ইত্তেফাককে বলেছেন, কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় আপাতত পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, কয়েক দিন আগেই পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে কৃষকরা দাম পাচ্ছিল না। তাই কৃষককে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য দেওয়ার জন্যই আমদানি বন্ধ রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষকেরা উৎপাদন খরচ তুলতে না পারলে আগামী বছর পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হবে না। তবে, আমরা বাজার পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পর্যালোচনা করছি। অবস্থা বুঝে পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

পেঁয়াজের পাশাপাশি দাম বেড়েছে আদা, রসুনেরও। কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে গতকাল বাজারে দেশি আদা ১০০ থেকে ১৪০ টাকা ও আমদানিকৃত আদা ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের পর গতকাল বাজারে আটা, ময়দার দামও বেড়েছে। গতকাল বাজারে প্রতি কেজি খোলা সাদা আটা ৩৬ থেকে ৪৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা, খোলা ময়দা ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, প্যাকেট ময়দা ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু এক দিন আগে তা যথাক্রমে ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা, ৪২ থেকে ৪৫ টাকা, ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা ও ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বেড়েছে মসুর ডালের দামও। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে পাঁচ টাকা বেড়ে বড় দানা মসুর ডাল ১০০ থেকে ১১০ টাকা, মাঝারি দানা মসুর ডা ১১৫ থেকে ১২০ টাকা ও ছোট দানা মসুর ডাল ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে স্বল্প আয়ের মানুষের মাংসের চাহিদা মেটায় যে ব্রয়লার মুরগি, গতকাল তার দামও বেড়েছে। কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়ে তা বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়। বেড়েছে ডিমের দামও। রমজানের শেষের দিকে ডিমের দাম কমতির দিকে থাকলেও ঈদের পর আবার বেড়েছে। গতকাল বাজারে ফার্মের প্রতি হালি লাল ডিম বিক্রি হয় ৩৮ থেকে ৪২ টাকায়। যা এক মাস আগে ছিল ৩২ থেকে ৩৫ টাকা। 

টিসিবি জানিয়েছে, গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি হালি ডিমের দাম বেড়েছে ১৬ দশমিক ৪২ শতাংশ। গতকাল শান্তিনগর বাজারে বাজার করতে আসা কবির আহমেদ বলেন, বাজারে এখন প্রতিদিনই কোন না কোন পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের আয় কি বাড়ছে? আমরা তো কাটছাঁট করেও সংসার চালাতে পারছি না।

ইত্তেফাক/এএইচপি