এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত নাম পি কে (প্রশান্ত কুমার) হালদার। সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লোপাটের জন্যই তিনি এত আলোচিত। দেশ ছেড়ে পালানোর আগে তিনি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও একটি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন।
গতকাল শনিবার পশ্চিমবঙ্গে পি কে হালদার গ্রেফতারের পর এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে তার গডফাদারদের নিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পি কে হালদার তো গ্রেফতার হলো, কিন্তু তার গডফাদাররা কই? তাদের বিরুদ্ধে কী এখন ব্যবস্হা নেওয়া হবে? কারণ এত বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি পি কে হালদারের একার পক্ষে সম্ভব হয়নি। পেছন থেকে ক্ষমতাধর কেউ না কেউ কলকাঠি নেড়েছেন। আবার পুরো টাকাই তিনি একা আত্মসাৎ করেছেন বিষয়টি কিন্তু এমনো নয়।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পি কে হালদার প্রথমে রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং পরে এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের ব্যবস্হাপনা পরিচালক (এমডি) ছিলেন। আর এসব কাজে তাকে সব ধরনের সমর্থন ও সহায়তা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা। মূলত বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন—এই দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখের সামনেই সবকিছু ঘটেছে। ফলে তারা দায় এড়াতে পারে না।
২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে যখন তার দখল করা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হতে শুরু করে, তখন পি কে হালদার ভারতে পালিয়ে যান। পরে বসবাস শুরু করেন কানাডা ও সিঙ্গাপুরে। এরপর আবার চলে আসেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। এত আলোচনার মধ্যে কীভাবে তিনি পালিয়ে গেলেন, কারা তাকে সহায়তা করল, সেই প্রশ্নগুলোরও কোনো উত্তর মেলেনি।
আবার কেউ কেউ তো বলেন, গত বছর এক বার তিনি দেশেও এসেছিলেন। নির্বিঘ্নে ফিরেও গেছেন। ফলে তার এত ক্ষমতার উত্স কি? অনেকেই বলছেন, ক্ষমতাধর ব্যবসায়ী, নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কেউ কেউ সংশ্লিষ্ট না থাকলে তার একার পক্ষে এতকিছু করা সম্ভব ছিল না। কিন্তু এই ক্ষমতাধরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না তা নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন।
পি কে হালদার ও তার ভাই প্রীতিশ কুমার হালদার, দুই জনই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। দুই ভাই মিলে ভারতে হাল ট্রিপ টেকনোলজি নামে কোম্পানি খোলেন ২০১৮ সালে। কলকাতার মহাজাতি সদনে তাদের কার্যালয়। আর কানাডায় পিঅ্যান্ডএল হাল হোল্ডিং ইনক নামে কোম্পানি খোলা হয় ২০১৪ সালে, যার পরিচালক পি কে হালদার, প্রীতিশ কুমার হালদার ও তার স্ত্রী সুস্মিতা সাহা।
কানাডা সরকারের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কানাডার টরন্টোর ডিনক্রেস্ট সড়কের ১৬ নম্বর বাসাটি তাদের। প্রশ্ন উঠেছে, এতকিছু তো একদিনে হয়নি। এত টাকাও এক বারে পাচার হয়নি, তাহলে দিনের পর দিন তারা কীভাবে এই অপকর্ম করে গেছেন ? নিশ্চয় পেছনে কেউ না কেউ ছিলেন বা আছেন?