বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

এসেছিলে অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করতে, এসেছিলে বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য

আপডেট : ১৭ মে ২০২২, ১১:০৭
পঁচাত্তুরের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দীর্ঘ ৬ বছর পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার দেশে ফিরে আসার ঘটনাটি বাঙ্গালির ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৭ই মে দিনটি বাঙালীর কাছে ‘শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস’ হিসেবে পরিচিত। জাতির পিতার হত্যার পর বাংলাদেশ যখন তার আদর্শচ্যুত হয়ে উল্টো পথে চলছিল, সেদিনের সেই বৃষ্টিস্নাত বিকেল থেকে শুরু হয়েছিল আদর্শহীন শাসনের বিরুদ্ধে এক নিরন্তর সংগ্রামের অভিযাত্রা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক পূর্ণ হয়েছে। বাংলাদেশে তাঁর নেতৃত্বেরও চার দশক পূর্ণ হয়েছে। এই চার দশক ছিল সংগ্রামের, ছিল অর্জনের।
 
এই চার দশকে শেখ হাসিনা একদিকে যেমন উপমহাদেশের এঁতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তেমনি পালন করেছেন চার দফায় রাষ্ট্র পরিচালনার গুরুদায়িত্ব। আওয়ামী লীগের এক সংকটময়কালে শেখ হাসিনা সভাপতি হিসেবে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দলটির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি অতুলনীয় সাংগঠনিক দক্ষতায় জাতির পিতার এই সংগঠনকে প্রতিকুল অবস্থার মধ্যেও সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করান।
 
জাতির পিতার হত্যার ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে দেশী বিদেশী সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে বাংলাদেশের মানুষের বিপুল সমর্থন নিয়ে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন। বর্তমানে একটানা তৃতীয় বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তিনি। শেখ হাসিনা সাত দশক বয়সী আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চার দশক ধরে। পৃথিবীর খুব কম রাজনীতিবিদের ভাগ্যেই এটি ঘটেছে।
 
সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার পর বাংলাদেশ গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। সেদিন তিনি ফিরে এসেছিলেন বলে আমরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের কথা জানতে পেরেছিলাম। গণতন্ত্র ফিরে পেয়েছিলাম। মানুষ তার অধিকার ফিরে পেয়েছিল। তিনিই বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী হেনরী কিসিঞ্জারের তলাবিহীন ঝুড়ির মতো ষড়যন্ত্রমূলক অপবাদ মিথ্যা প্রমাণ করে বাংলাদেশকে আজ উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে পৃথিবীর বুকে নেতৃত্বের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন।
 
আর্থ-সামাজিক সকল ক্ষেত্রের উন্নতিতে বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ বিশ্বে আজ এক অনন্য উদাহরণ। সমগ্র বিশ্বে গণতন্ত্রের মানসকন্যা থেকে শেখ হাসিনা আজ ‘উন্নয়ন কন্যা’য় ভূষিত। তাঁর মানবিকতা আর মমত্ববোধের জন্যে তিনি ‘মানবতার মা’ হিসেবেও অভিষিক্ত। তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন বলে খাদ্য সংকটের দেশ বাংলাদেশ আজ খাদ্য রপ্তানির দেশ। বিদেশি ঋণ আর সাহায্য গ্রহীতা দেশ থেকে আজ বাংলাদেশ শিল্পায়ন ও বাণিজ্যের দেশে পরিণত হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বেই ঋণগ্রহীতা দেশ বাংলাদেশ আজ ঋণ প্রদানকারী দেশে পরিণত হয়েছে।
 
পঁচাত্তরে পিতার হত্যার পর দেশের স্বাধীনতার সূর্য যখন প্রায় অস্তমিত হতে যাচ্ছিল, বঙ্গবন্ধু কন্যার প্রত্যাবর্তন আর তাঁর নেতৃত্বের জন্যেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির সার্থকতা প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই জাতির পিতা সূচিত বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম সফল পরিণতির দিকে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতি আজ পর্যন্ত যা কিছু অর্জন করেছে, তাঁর সবটুকুই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার কারণেই হয়েছে।
 
ফিরে আসার পর শেখ হাসিনা সংবিধান লঙ্ঘনকারী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের লড়াই শুরু করেছিলেন। সেই লড়াইয়ে তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন। তাঁর দাবিতেই এদেশে জবাবদিহিতামূলক সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। জাতির পিতার হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ তিনিই বাতিল করে খুনিদের বিচার শুরু করেছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয় কোনো রাষ্ট্রে এই ধরনের বর্বর কালো আইন জারীর ইতিহাস নেই । খুনিদের বিচার এখনও কার্যকর করা হচ্ছে।
 
পচাত্তুরের ১৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের আদর্শ বিরোধী শক্তি আমাদের মুক্তি সংগ্রামের মহান আদর্শগুলোকে দুর্বল ও প্রয়োজনে ভুলুন্ঠিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। এই প্রক্রিয়ায় ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করা হলো। ওই সময়ে তারা ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসবে মেতে উঠল। জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হল। সরকারি ও প্রশাসনিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি নিষিদ্ধ করা হলো।
 
সেই অন্ধকার সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বাতি বয়ে বেড়িয়েছেন বাংলাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। তিনি মানুষকে জাগিয়ে তুলেছেন, ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চার করেছেন। তাঁর হাতে পিতার আদর্শের বাতি দেখে মানুষ প্রজ্জ্বলিত মশাল নিয়ে ছুটেছিল। তিনি নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়েছেন আদর্শের চেতনা, তাদের দেখিয়েছেন নতুন স্বপ্ন -বাংলাদেশের স্বপ্ন। তাঁর এই সময়টি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘এনলাইটেনমেন্ট’ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। তাঁর ছড়ানো আদর্শ আর তাঁর দেখানো স্বপ্নে মানুষ জেগে উঠেছিল। তিনিই তাদের বুঝিয়েছেন, এই রাষ্ট্রের মালিক  জনগণ– এটি রিপাবলিক, কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর কুক্ষিগত সত্তা নয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা কে  বাঙালি বারে বারে সমর্থন দিয়েছে, তাদের সবটুকু ভালবাসা তারা তাঁকে উজার করে দিয়েছে।
 
পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর অসাংবিধানিক শাসনের সময় এই পবিত্র সংবিধানকে বার বার ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনা ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা আমাদের সংবিধানকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। তিনিই এই সংবিধান থেকে মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী সকল বিধান বাতিল করেছিলেন। তিনিই ধর্মনিরপেক্ষতাকে সংবিধানে আবার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর উদ্যোগেই বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে আরও সুদৃঢ় করতে সংবিধান সংশোধন করা হয়।
 
উন্নয়নশীল বিশ্বে তিনিই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যিনি সফলভাবে সংবিধানকে সকল অপশক্তি থেকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য বিশেষ সাংবিধানিক রক্ষাকবচ তৈরি করেছেন যার সুফল আজ গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষ পাচ্ছে। তিনিই এদেশে গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে যুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যবস্থা করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধকারীদের গাড়িতে যখন জাতীয় পতাকা উড়ছিল, তখন এদেশে তাদের বিচার হবে না– এই রকম একটা ধারণায় যখন মানুষ হতাশায় নিমজ্জিত ছিল, তিনিই তখন জাতির সামনে আশার আলো প্রজ্জ্বলিত করেছিলেন। জাতির পক্ষে ঘোষণা দিয়ে এই নরঘাতকদের তিনি বিচার করেছিলেন। বাঙালির ইতিহাসে জাতি হিসেবে এটি একটি মাইলফলক অর্জন ছিল। এর কৃতিত্ব প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনার।
 
রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি অনন্য সাফল্য দেখিয়েছেন। জাতির পিতার দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প-২০২১ (মধ্যম আয়ের দেশ) ও রূপকল্প-২০৪১ (উন্নত দেশের মর্যাদা) অর্জনে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার সরকার গত এক দশকের বেশি সময় ধরে দেশে ব্যাপকভিত্তিক শিল্পায়ন, বিনিয়োগ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও নানামুখী পদক্ষেপের মাধ্যমে অব্যহতভাবে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, উচ্চ প্রবৃদ্ধি এবং অর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধন করেছেন। এতো অল্প সময়ে পৃথিবীর দ্বিতীয় কোন রাষ্ট্র এই ধরণের উন্নয়নের নজির স্থাপন করতে পারেনি। তিনি শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বের একমাত্র সরকার প্রধান যিনি জ্বালানী নিরাপত্তার বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তার সমার্থক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
 
বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা এবং দেশের জন্য অধিকতর সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যা যা করনীয় তাঁর সবটুকুই করে আসছেন। শেখ হাসিনার কারণেই বাংলাদেশ গঙ্গা চুক্তির মাধ্যমে ভারত থেকে ন্যায্য পানি পাচ্ছে। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্র প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সাথে এই ধরনের চুক্তি করতে পারেনি। গঙ্গা ছাড়া অন্যান্য নদী থেকেও চুক্তির মাধ্যমে পানি আনার উদ্যোগ তিনিই গ্রহণ করেছেন।
 
অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে একদিকে তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছেন, অন্যদিকে ঐ এলাকায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব টেকসই করার জন্য যথাযথ আইনি উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তিনি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র্য সত্তাকে সুরক্ষা দিয়েছেন। এই ঐতিহাসিক ও যুগান্তকারী চুক্তির জন্য তিনি অনায়াসেই সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক পুরষ্কার পেতে পারতেন। কিন্তু বাংলাদেশ বিরোধী আন্তর্জাতিক লবি’র ষড়যন্ত্রের কারণে তাঁকে তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতি  দেয়া হয়নি। পরবর্তীকালে, জননেত্রীর সব অনন্য সাফল্যের জন্য তিনি অসংখ্য বিশ্বখ্যাত পুরষ্কার ও অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। শেখ হাসিনার অনন্য সাধারণ সাফল্য আর বিশ্বব্যাপী তাঁর আকাশচুম্বী স্বীকৃতি তাঁকে আজ পৃথিবীর সকল পুরস্কার আর এওয়ার্ডের ঊর্ধ্বে নিয়ে গেছে।
 
রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তাঁর সকল যুগান্তকারী উদ্যোগ আর নানা সৃষ্টিশীল কার্যক্রমের মাধ্যমে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন এক বিস্ময়কর উচ্চতায়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, যোগাযোগ ব্যবস্থা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যুর হার, পরিবেশ, জ্বালানী নিরাপত্তা, শিল্পায়ন, বিনিয়োগ ইত্যাদিতে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে একটি অনুকরণীয় রাষ্ট্র। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে উপনিত হয়েছে। দেশের এই যুগান্তকারী সাফল্যের কৃতিত্ব একমাত্র তাঁরই।
 
মানুষের প্রতি তাঁর মমত্ববোধ আর ভালবাসার কারণে তিনি আজ বাংলাদেশকে রূপান্তরিত একটি কার্যকরী কল্যাণমুখী রাষ্ট্রে। এদেশের মানুষের জন্য তাঁর প্রবর্তিত ‘সোশ্যাল সেফটি নেট’ বা সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বে এক অনন্য ঘটনা। শেখ হাসিনার দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়ন মডেল বিশ্বব্যাপী এমনভাবে প্রশংসিত হয়েছে যে, পশ্চিমা রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ সাম্প্রতিককালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে শেখ হাসিনার দারিদ্র বিমোচনের এই মডেল অনুসরণ করতে পরামর্শ দিয়েছেন।
 
বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ ধরেই তিনি দেশের সমুদ্রসীমা রক্ষা করেছেন। দেশি-বিদেশি সকল বিশেষজ্ঞ ও গবেষকের হাইপোথিসিস’কে ভুল প্রমাণ করে তাঁর সুদক্ষ ও সাহসী নেতৃত্বের কারণে তিনি মিয়ানমার ও ভারতের দাবির বিরুদ্ধে বিশাল সমুদ্রসীমা জয় করেছেন। আন্তর্জাতিক সমুদ্র আইন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে পৃথিবীর খুব কম দেশই এত সফলভাবে সমুদ্রের উপর তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। এই কৃতিত্ব কেবলই বঙ্গবন্ধু কন্যার।
 
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বাংলাদেশে অবস্থিত গ্যাস সম্পদ সহ সকল প্রাকৃতিক সম্পদ বিদেশী শক্তি সমুহের কাছ থেকে অবমুক্ত করে আমাদেরকে দিয়ে গিয়েছিলেন, দেশের জ্বালানী নিরাপত্তা তথা সার্বিক উন্নয়নের জন্য সেই সম্পদ রক্ষা করেছিলেন তাঁরই কন্যা আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের স্বার্থে তিনি এই সম্পদ রক্ষা করেছিলেন বলেই ২০০১ সালে এক প্রহসনমূলক নির্বাচনে তাঁকে হারানো হয়েছিল। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়ন জ্বালানীর উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতিকে বেগবান ও টেকসই করার লক্ষ্যে তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে যুগান্তকারী কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সমগ্র উন্নয়নশীল বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে তিনি অল্প সময়ের মধ্যে দেশের শতভাগ মানুষের জন্য বিদ্যুতের সংস্থান করেছেন।
 
জননেত্রী শেখ হাসিনার সুদক্ষ উদ্যোগ ও কার্যকরী ডিপ্লোমেসির কারণে বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে ভারতের সাথে স্থল-সীমান্ত সমস্যার সমাধান হয়েছে, অথচ পাকিস্তান সরকার ২৪ বছরে এবং বাংলাদেশে জিয়া-এরশাদ, খালেদা জিয়ার সরকারসহ আওয়ামী লীগের বাইরের সরকারগুলোর ২৮ বছরসহ মোট ৫২ বছরের শাসনামলে ভারতের সাথে স্থল সীমান্ত সমস্যার সমাধান করতে পারেনি।
 
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের তৃণমূল মানুষের স্বাস্থ্য সেবা সুনিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যখাতে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থা চালু সহ স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য যুগান্তকারী কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর এই পদক্ষেপ উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য একটি অনুকরণীয় মডেল। রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি করোনাভাইরাস উদ্ভুত সকল বিষয় ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে পারদর্শিতার সাথে মোকাবেলা করেছেন। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় যা যা প্রয়োজন তিনি তাই করেছেন। দেশের মানুষকে বাঁচাতে ও অর্থনীতিকে রক্ষা করতে তিনি লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার অনুদান ও প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছেন। পৃথিবীর খুব কম রাষ্ট্রনায়ক এই ধরণের যুগান্তকারী উদ্যোগ নিতে পেরেছেন। তাঁর প্রজ্ঞা, মেধা, দক্ষতা, আন্তরিকতা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব, ইস্পাত কঠিন দৃঢ়তা আর আকাশচুম্বী মনোবলের কারণে জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় করোনা সংক্রমণের জন্য বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও তিনি বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষকে শতাব্দীর ভয়াবহতম এই মহামারী থেকে রক্ষা করেছেন। বাংলাদেশের সকল মানুষকে রক্ষার জন্য শেখ হাসিনার টিকা কার্যক্রম সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। 
 
বিশ্বব্যাপী করোনার ভয়াল আঘাত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে যখন গোটা পৃথিবী গভীর অর্থনৈতিক মন্দার কবলে পড়েছে, তখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ রপ্তানির অগ্রগতি সহ অর্থনীতির প্রতিটি সূচকে এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বেই পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকটি রাষ্ট্রের অন্যতম রাষ্ট্র হিসেবে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে কোভিড পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার (economic recovery) সম্পন্ন হয়েছে। অথচ কোভিড এবং পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পৃথিবীর অনেক দেশের অর্থনীতি ধসে পড়েছে। শ্রীলঙ্কা সহ দক্ষিণ এশিয়ার একাধিক রাষ্ট্রের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব ভুরাজনৈতিক প্রশ্নে নানা দিক থেকে বিপদজনক অবস্থা থেকে নানা কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং সময়োপযোগী যথাযথ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেছেন। এই কঠিন পরিস্থিতিতে যেকোনো ভুল সিদ্ধান্তের জন্য দেশ বড় বিপদের সম্মুখীন হতে পারতো।
 
বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সংগ্রাম আর উন্নয়নের এই অভিযাত্রায় তাঁকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অসংখ্য প্রতিবন্ধকতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। এমনকি তাঁকে বেশ কয়েকবার হত্যা চেষ্টাও হয়েছিল। পিতা-মাতা-ভাই সহ পরিবারের প্রায় সবাইকে হারিয়েও তিনি বাংলার মানুষের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য এখনও অদম্য গতিতে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির পিতার আরেক কন্যা শেখ রেহেনাও সব হারিয়ে ভালবাসা আর মমতা দিয়ে বড় বোনকে ছায়ার মতো আগলে রেখেছেন।
 
এদেশের মানুষের কল্যাণে এবং জাতীয় স্বার্থে শেখ হাসিনা অবিচল। তাঁকে হত্যার চেষ্টা হয়েছিল এবং সেই চেষ্টা এখনও অব্যাহত আছে। কারণ তাঁকে সরিয়ে দিতে পারলে বাংলাদেশকে থামান যাবে। বাংলাদেশের অগ্রগতিকে দমানো যাবে। একই কারণে জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছিলো। বাংলাদেশ বিরোধী গোষ্ঠীটি জানে, শেখ হাসিনাকে থামাতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ গুলোকে আবার নির্বাসিত করা যাবে, আবার ভূলুণ্ঠিত করা যাবে।
 
শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনটি প্রতিটি বাঙালির জীবনে আজ তাৎপর্যময় কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পর শেখ হাসিনাই বাঙালির ইতিহাসের নির্মাতা। এই সময়ে তিনিই বাঙালির ভাগ্য পরিবর্তন করেছেন। তিনি শুধু বাংলাদেশ কিংবা দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, গোটা উন্নয়নশীল বিশ্বের একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যিনি তাঁর দেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে উন্নীত করতে স্বপ্ন দেখানোর পাশাপাশি স্বপ্ন বাস্তবায়নে পথনক্সা, কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নসহ এটি বাস্তবায়নে সময়ভিত্তিক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।  
 
বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাত দশকের ইতিহাসে তিনি দীর্ঘ চার দশক ধরে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে আজ বিশ্বসভায় নেতৃত্বের পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। একজন সংগ্রামী নেতা থেকে কালজয়ী রাষ্ট্রনায়কে পরিণত হওয়ার এক মহাকাব্যের নাম শেখ হাসিনা। পিতা মুজিব বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম আর একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে যে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, পিতার অবর্তমানে সেই রাষ্ট্রকে নিজের প্রজ্ঞা, মেধা, কঠোর পরিশ্রম, সাহসিকতা আর দেশপ্রেম দিয়ে তিনিই উন্নীত করেছেন স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে। 
 
শেখ হাসিনা নামটি আজ হিমালয়সম সফলতার মূর্ত-স্মারক । তাঁর সফলতার গল্প আজ পৃথিবীর দেশে দেশে। তিনি আজ বাঙালির বিশ্বনেতৃত্বের স্বপ্নসারথী, যার নানা উদ্যোগের ফলে বিশ্বরাজনীতি ও বিশ্বব্যবস্থায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর পক্ষে ইতিবাচক পরিবর্তনের কারণে তিনি আজ বিশ্বে শোষিত-বঞ্চিত জনগোষ্ঠীর মুখপাত্র। তিনি বারবার মৃত্যু পরওয়ানা জয় করা এক মৃত্যুঞ্জয়ী নেতা।  
 
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ- সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচার, জাতির পিতার যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সাংবিধানিকভাবে মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজটি শেখ হাসিনাই করেছেন। পিতা হত্যার অনন্ত কালের কলঙ্ক থেকে জাতিকে তিনিই কিছুটা মুক্তি দিয়েছেন। যে পিতা আমাদের একটি দেশ দিয়েছেন, একটি পরিচয় দিয়েছেন, যার ত্যাগ, বিসর্জন আর নেতৃত্বের ফলে স্বাধীন বাংলাদেশ, আমাদের সকল অর্জনের ভিত্তি যিনি গড়ে গিয়েছেন, মোট কথা আমাদের অস্তিত্ব যার কারণে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদার পুনঃপ্রতিষ্ঠা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বের দৃঢ়তা, প্রজ্ঞা এবং সাহস দিয়ে তিনি এই কাজটি করেছেন। তিনি কলংকিত জাতির ঋণ শোধ করলেন। বাঙালি জাতি এই জন্য তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। 
 
বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সংগ্রামের ইতিহাসে শেখ হাসিনার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বাংলাদেশের আজকের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা তাঁরই অবদান। সামরিক শাসন ও স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলনে তিনিই নেতৃত্ব দিয়েছেন। শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা। ঐ সংগ্রামের সময় তিনিই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের রূপরেখা প্রণয়ন করেন।
 
১৯৯১ সালে শেখ হাসিনার দাবিতেই এদেশে জবাবদিহিতামূলক সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা সংসদের কাছে কার্যকরী জবাবদিহিতার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয় ও প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তিনিই কার্যকরী সংসদীয় কমিটির ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। 
 
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী ষড়যন্ত্রকারী একটি গোষ্ঠী শেখ হাসিনার বিশ্বজয়ী নেতৃত্বের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে বিদেশে বসে লবিইস্টের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ বিরোধী গোষ্ঠীটি আন্তর্জাতিকভাবে বাঙালির বিশ্বজয়ের মহানায়ক শেখ হাসিনাকে ঘায়েল করতে চাচ্ছে বাংলাদেশকে দমানোর জন্য। শেখ হাসিনাকে ঘায়েল করতে না পেরে তারা ষড়যন্ত্রের কৌশল পরিবর্তন করেছে। তারা এটি বুঝতে পেরেছে, বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে অপপ্রচার চালিয়ে তারা কোন সফলতা পাবে না। তাছাড়া, বিশ্বকে অবাক করে দেয়া বাংলাদেশের উন্নয়ন আর সাফল্যের গল্প এখন বিশ্ব নেতাদের মুখে মুখে।
 
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্জিত বাংলাদেশের আকাশচুম্বী সাফল্য আর ভাবমূর্তি আড়াল করার কোন সুযোগ নেই। সারাবিশ্বে ইতোমধ্যে বাংলাদেশের যে ব্র্যান্ডিং হয়েছে, তার বিপরীতে বাংলাদেশ বিরোধী অপপ্রচার কেউ বিশ্বাস করেনা। তাই তারা বাংলাদেশ বিরোধী নতুন নতুন ষড়যন্ত্রের কৌশল প্রণয়ন করছে। বাঙালির বিশ্বাস, ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবেনা। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌছে যাবে। 
 
চার দশক আগে ১৭ মে প্রিয় নেত্রী ফিরে এসেছিলেন অশুভ শক্তিকে পরাস্ত করতে। তারা পরাস্ত হয়েছে। তবে তাদের প্রেতাত্মারা এখনও আনাগোনা করছে। জননেত্রীর সংগ্রামের সময়টি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘এনলাইটেনমেন্ট’ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হবে। নেত্রী ফিরে এসেছিলেন  বলেই বাংলাদেশ আজ অন্ধকার থেকে আলোর পথে। বঙ্গবন্ধুর পর তিনিই বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের আলোকবর্তিকা। ‘৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশের সকল অর্জন শেখ হাসিনার  কারণেই। তাঁর জন্যই বাংলাদেশ আজ বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে। যতদিন এই বাংলাদেশ বেঁচে থাকবে, জননেত্রীর সকল মহান কীর্তির জন্য রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে ততদিন তাঁর নামটিও থাকবে দেদীপ্যমান। তিনি হাজার বছর বেঁচে থাকবেন বাঙালির হৃদয়ে।
 
লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
ইত্তেফাক/এসজেড