শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঘূর্ণিঝড়ে ঘাটাইলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত 

আপডেট : ২১ মে ২০২২, ১৬:০৫

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদসহ পাঁচ শতাধিক কাঁচা, আধা পাকা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। 

শনিবার (২১ মে) ভোরে ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে এ অবস্থা হয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড়ে অনেক গাছপালা উপড়ে পড়েছে। গাছের চাপায় স্কুল ছাত্রীসহ একই পরিবারের তিনজন আহত হয়েছেন। আহতরা হলেন- উত্তর খিলগাতি গ্রামের আতাউর রহমান খান (৭০), তার ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম (৪৫) এবং নাতি  এম.কে.ডি.আর উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী রিয়া(১৩)। বিদ্যুতের তার ও খুঁটি লণ্ডভণ্ড হওয়ায় সকাল থেকেই চার ইউনিয়নে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

স্থানীয়দের সূত্রে আরও জানা যায়, শনিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে হঠাৎ করে প্রচণ্ড বেগে আসা ঘূর্ণিঝড়টি উপজেলার দেউলাবাড়ি ইউনিয়নের দেউলাবাড়ি, উত্তর খিলগাতি ও মুখ্য গাংগাইর, সংগ্রামপুর ইইনয়নের বোয়ালী হাটবাড়ি, চাপড়ী, দেওজানা, খুপিবাড়ী ও লাহেড়ীবড়িতে আঘাত করে। 

রসুলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এমদাদ হোসেন বলেন, ‘মেম্বারদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তালিকা প্রস্তুত করছি। স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করেছি। তবে কেউ (দুপুর ২টা পর্যন্ত) আসেননি। পুরো ইউনিয়নে  ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।’ 

সরে জমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দেউলাবাড়ি ইউনিয়নের এম.কে.ডি. আর উচ্চ বিদ্যালয়ের ২টি টিনশেড পাকা ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও আরেকটি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘরের টিন বাতাসে পাশের বাড়িতে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) মো. হায়দার আলী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যালয়ের প্রায় ৪০ লক্ষাধিক টাকার সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  ঘর ভেঙে যাওয়ায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া করানো মারাত্মক হুমকি হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে পাঠদান করানো হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্তের  বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। পাঠদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে দ্রুত বিদ্যালয়টি মেরামত প্রয়োজন।’ 

প্রধান শিক্ষক জানান, এদিকে উত্তর খিলগাতি পূর্বপাড়া জামে মসজিদের টিনের বারান্দা ভেঙে উপড়ে পড়েছে। মূল্যবান আসবাবপত্র ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। মসজিদের পাশের বাড়ি মুক্তিযোদ্ধা ময়েজ উদ্দিনের ২টি টিনের ঘর, আনছার আলী মাস্টারের তিনটি ঘর এবং ভূমিহীন সামাদের ঘরবাড়ি ঝড়ে ভেঙে পড়েছে। 

শারীরিকভাবে অক্ষম সামাদ আকন্দ বলেন, ‘আমার স্ত্রী সালেহা অন্যের বাড়িতে কাজ করে। দিন এনে দিন খাই। আমার একটি প্রতিবন্ধী মেয়ে রয়েছে। অনেক কষ্ট করে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে ছিলাম কিন্তু  সর্বনাশা ঝড়ে সব কেড়ে নিয়ে গেছে। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া আমার রাতে থাকার ঠাঁই মিলবে না।’ এ দিকে দুপুর গড়িয়ে গেলেও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কর্মকর্তা এলাকায় না যাওয়ায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।  

এবিষয়ে স্থানীয় ইউএনও মনিয়া চৌধুরির সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি। 

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. এনামুল হকের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, চারটি ইউনিয়নে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা ইউপি চেয়ারম্যানদের প্রস্তুত করার কথা বলা হয়েছে। সে অনুযায়ী তারা কাজ করছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত যাবেন বলেও জানান তিনি । 

ইত্তেফাক/এএইচ