বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

টাকা দিতে না পারলে দেওয়া হয় না সেচসুবিধা!

আপডেট : ২২ মে ২০২২, ১২:২৫

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ নেওয়ার জন্য কার্ডের টাকা ছাড়াও ভাড়ার টাকা দিতে হয় কৃষককে।

কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, এই গভীর নলকূপের ভাড়ার টাকা প্রদান করতে হয় অপারেটর আক্তারুজ্জামান আক্তারুলকে। সদর উপজেলার ভূল্লী বড় বালিয়া ইউনিয়নে ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের আওতায় থাকা প্রায় ৫০ জন কৃষক সেচ নিতে গিয়ে এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন। তারই প্রতিবাদ জানিয়ে কৃষকরা অপারেটরের নামে লিখিত অভিযোগ করেন বরেন্দ্র নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর।

অভিযোগ সূত্রে ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বড় বালিয়া ইউনিয়নে ১০৮ নম্বর গভীর নলকূপের দায়িত্বে থাকা অপারেটর আক্তারুজ্জামান বিগত ১০ বছর ধরে ঐ এলাকার কৃষকের কাছ থেকে ডিপ টিউবওয়েলের ভাড়া নিয়ে আসছেন। প্রতি সেচ মৌসুমে একরপ্রতি ২ হাজার ৪০০ টাকা ভাড়া দিচ্ছেন কৃষক। ঐ গভীর নলকূপের আওতায় প্রায় ৬০ একর জমি রয়েছে। বোরো বা আমন মৌসুমে কৃষক একরপ্রতি ২ হাজার ৪০০ টাকা দিতে না পারলে সেচসুবিধা দেওয়া হয় না। এ বছর ঐ এলাকার ৫০ জন কৃষক একত্রিত হয়ে এ বিষয়ে বরেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর অভিযোগ করলে অপারেটর গভীর নলকূপে তালা মেরে দেন এবং কৃষককে পানি না দেওয়ার হুমকি দেন। 

অভিযোগকারী কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, ‘আমরা কার্ডের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ডিপ টিউবওয়েল থেকে পানি নিই। কার্ডে টাকা দিতে হয়, আবার ভাড়াও দিতে হয়। এই ডিপ টিউবওয়েলের মালিক হিসেবে দাবি করেন আক্তারুজ্জামান। বিঘাপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা না দিলে জমিতে তিনি সেচ দেবেন না। তিনি তালা মেরে রেখেছেন। সেজন্য আমরা কৃষকরা সবাই মিলে বরেন্দ্র অফিসে একটি অভিযোগ করি। সেটা করাতে আমাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’

প্রায় আড়াই একর জমির মালিক কৃষক বিপ্লব বলেন, ‘১০ বছর ধরে আমরা এই ডিপ টিউবওয়েলের আওতায় সেচ নিয়ে আসছি। চাপে পড়ে আমরা টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। আমরা নিজস্ব কার্ডে টাকা ঢোকানোর পরও বিঘাপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা করে অপারেটরকে ভাড়া দিই। আসলে তিনি কেন এই টাকা নেন বা নিয়ম আছে কি না সেটা আমরা জানতে চাই।’

ভুক্তভোগী আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘অপারেটরকে টাকা দিলে তিনি পানি দেবেন, অন্যথায় আমাদের পানি নিতে দেবেন না। গত এক মাস যাবত আমি পানি নিতে পারিনি। কেন পানি দেবেন না, এমনটা জানতে চাইলে তিনি জানান, এই ডিপ টিউবওয়েলের মালিক তিনি নিজেই। জোর করে পানি নিতে চাইলে মামলা করবেন সবার নামে। পানি দিতে না পারায় আমাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।’ অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গভীর নলকূপের অপারেটর আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘তারা যে অভিযোগটা করেছে তা মোটেও সত্য নয়। ডিপ টিউবওয়েল করতে গিয়ে বরেন্দ্রকে আমি কয়েক ধাপে টাকা দিয়েছি। সেই টাকা তোলার জন্য এবং আমি আমার খরচের জন্য আংশিক কিছু টাকা নিই কৃষকের কাছে। কৃষকের কাছে বিঘাপ্রতি ৮০০ বা ১ হাজার টাকা চাই। কোনো ধরনের জোরপূর্বক টাকা নেওয়া হয় না। তারা যা দেয়, তা-ই নেওয়া হয়। অনেকে আবার টাকা দেয় না।’

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের ঠাকুরগাঁও রিজিয়ওনের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘১০৮ নম্বর ডিপ টিউবওয়েলের (গভীর নলকূপ) অপারেটরের বিরুদ্ধে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ সাপেক্ষে আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। এর পরও যদি ঐ অপারেটর অনিয়ম করতে থাকেন, তাহলে আমরা তাকে বাতিল করব।’

ইত্তেফাক/ইআ