শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সিলেটে বন্যা: বিশুদ্ধ পানির সংকট

আপডেট : ২২ মে ২০২২, ২০:৫৩

সিলেটে নদ-নদীর পানি কমলেও বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অনেক এলাকা এখনো পানির নিচে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও সড়কের। এখনো অনেক সড়ক ডুবে আছে। গ্রামীণ সড়কগুলোতে কোমর ও হাটু পানি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও পানিভর্তি। 

সিলেট-কানাইঘাট সড়ক, সিলেট-বিয়ানীবাজার-জকিগঞ্জ সড়কে এখানও পানি। এসব সড়কের ওপর কচুরিপানা জমে বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। শহর থেকে বের হলে চারদিকে পানি আর পানি। ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ হিসাব চলছে। 

এদিকে, নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সমস্যা দেখা দিয়েছে। সিলেট জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর বন্যার পানি পান না করতে বিভিন্ন স্থানে প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা ভ্রাম্যমাণ ‘ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’-এর সাহায্যে সিলেট সিটি করপোরেশন, কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট উপজেলায় নিরাপদ পানি সরবরাহ করছে। এই চারটি প্লান্টের মাধ্যমে প্রতিদিন ৩২ হাজার লিটার পানি শোধন করে বন্যার্তদের দেওয়া হচ্ছে। 

রবিবার (২২ মে) সরেজমিনে দেখা যায়, কানাইঘাট পৌরসভার বিষ্নপুর ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লোকজন ট্রিটমেন্ট প্লান্ট থেকে পানি নিতে হুড়োহুড়ি শুরু করেন। 

বাসিন্দারা জানান, গত কয়েকদিন তারা বৃষ্টির পানি জমিয়ে পান করেছেন। ওই এলাকাটি পাথুরে বলে সেখানে নলকূপ স্থাপন করা যায় না। তাই তারা পুকুরের পানি পান করেন। কিন্তু বন্যায় পুকুরের পানিও দূষিত হয়ে গেছে।

কানাইঘাটে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন পানি শোধনাগার বন্যার পানিতে নিমজ্জিত। ছবি: আব্দুল বাতিন ফয়সল

সিলেটের বন্যাকবলিত এলাকায় ১ লাখ ১৫ হাজার শৌচাগার, প্রায় ১২ হাজার নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন জানান, বন্যার্তদের জন্য যতদিন প্রয়োজন তত দিন সুপেয় পানি প্রদান অব্যাতত থাকবে। এরই মধ্যে সাড়ে ৫ লাখ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুত রয়েছে।

এদিকে বিভিন্ন স্থানে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু ত্রাণের স্বল্পতায় অনেক জায়গায় হাঙ্গামার ঘটনা ঘটেছে। ত্রাণের তুলনায় সাহায্য প্রার্থী বেশি। ত্রাণ নিয়ে কাড়াকাড়ি। পরিস্থিতি সামাল দিতে  বেগ পেতে হচ্ছে। ১৩ মে থেকে বন্যা শুরু হলে সিলেট জেলার ১৩ উপজেলায় ১২ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত। 

সিলেটের জেলা প্রশাসক মজিবুর রহমান বন্যাকবলিত কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, দক্ষিণ সুরমা এলাকা সফর করে ইত্তেফাককে বলেন, ‘ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারায় পানি বাড়ছে। মানুষ অনেক কষ্টে আছে। রাস্তাঘাট ডুবে আছে। তবে সরকার থেকে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩৪৫ মেট্রিক টন চাল, ৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নগদ ১৫ লাখ টাকার চাহিদার মধ্যে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। আরও ২০০ মেট্রিক টন চাল ও ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবারের চাহিদা জানিয়ে উর্ধ্বতন মহলে বরাদ্দ চেয়েছি। শহরেও মানুষ খাটের ওপর আশ্রয় নিয়েছিল। এখন পানি নামছে।’ 

কানাইঘাট পৌর মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, ‘মেঘালয়, চেরাপুঞ্জি লুচি পাহাড় থেকে ঢল নেমে কানাইঘাটকে তছনছ করে দিয়েছে। রাস্তায় ইট, বালির বস্তা দিয়ে কিছু জায়গায় পানি আটকাতে পেরেছি। কিন্তু ২ নম্বর লক্ষ্মীপাশা ইউনিয়নের বনগৌরীপুরে ডইক ভেঙে কানাইঘাট তলিয়ে যায়। পৌর এলাকার বহু রাস্তাগাট ভেঙে গেছে। তবে এত পানি এর আগে কখনও দেখিনি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষয়ক্ষতির হিসাব চলছে। তবে আগামী জুন-জুলাইয়ের স্বাভাবিক বন্যার ভয়ে আছি। তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে আগেই ব্যবস্থা নিতে হবে।’ 

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নগরীর সিংহভাগ এলাকা থেকেই পানি নেমে গেছে। নগরবাসী আশ্রয়কেন্দ্র থেকে নিজেদের বাসা-বাড়িতে ফিরছেন। পানি যেসব এলাকা থেকে নেমেছে, সেসব এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।’

সিলেটে হঠাৎ বন্যায় বোরো ধান, আউশের বীজতলার পাশাপাশি গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষেতও পানিতে ডুবে গেছে। পানির নিচে বিস্তীর্ণ বাদাম ক্ষেত। বাড়ি-ঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। সিলেট-কাইঘাট সড়কে নিরুপায় কৃষকদের প্রায় পচা ধান ও খড় শুকাতে দেখা গেছে।

ইত্তেফাক/এএইচ/এসটিএম