শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

‘মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান’

   জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী আজ 

আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ০৬:৩০

‘আমি পরশুরামের কাঠের কুঠার,/ নিঃক্ষত্রিয় করিব বিশ্ব, আনিব শান্তি শান্ত উদার!/ আমি হল বলরাম- স্কন্ধে,/ আমি উপাড়ি’ ফেলিব অধীন বিশ্ব অবহেলে নব সৃষ্টির মহানন্দে।/ মহা-বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত/ আমি সেই দিন হব শান্ত/ যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,/ অত্যাচারীর খড়্গ কৃপাণ ভীম রণ-ভূমে রণিবে না-’ কবিতায় ঘোষণা দিয়েই তিনি বাংলা সাহিত্যে পা রাখেন আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। সাম্যের কবি, বিরহ-বেদনার কবি, বিদ্রোহের কবি বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পুরুষ। কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনী জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তার কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তার গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয়ভাবে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে তার লেখনী ধুমকেতুর মতো আঘাত হেনে জাগিয়ে দিয়েছিল ভারতবাসীকে। নজরুল তার কবিতা, গান, উপন্যাসসহ অন্যান্য লেখনী ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে পরাধীন ভারতে, বিশেষ করে অবিভক্ত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা, সামন্তবাদ, সাম্রাজ্য ও উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বলিষ্ঠ ও সোচ্চার কণ্ঠ ছিলেন। সে কারণে ইংরেজ সরকার তার গ্রন্থ ও রচনা বাজেয়াপ্ত করেছে এবং কারাদণ্ড দিয়েছে। কারাগারেও বিদ্রোহী নজরুল টানা ৪০ দিন অনশন করে বিদেশি সরকারের জেল-জুলুমের প্রতিবাদ করেছিলেন।

‘বল বীর চির উন্নত মম শির’ কবিতায় এ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে তিনি মানুষের সামনে আবিভূ‌র্ত হন ‘বিদ্রোহী’কবি হিসেবে। আজও কবির নানা ধরনের লেখার মাঝ থেকে বিদ্রোহের পঙ্ক্তিমালা বাঙালির হৃদয়ে অনাচারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রেরণা জোগায়। তার কবিতা ‘চল্ চল্ চল’ বাংলাদেশের রণসংগীত।

কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম বাংলা ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬/১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দ। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে। তার পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মা জাহেদা খাতুন। দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় দুঃখ-দারিদ্র্য ছিল তার নিত্যসঙ্গী। তার ডাক নাম ছিল দুখু মিয়া। পিতার অকালমৃত্যুতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য তিনি শিশু বয়সেই মক্তবে শিক্ষকতা, হাজি পালোয়ানের মাজারে খাদেম এবং মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাজ করেছেন, যা পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যে ইসলামী ঐতিহ্যের সার্থক ব্যবহারে এই সম্পৃক্ততা খুব ফলপ্রসূ হয়েছে।

১৯৭২ সালের ২৪ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে কবি সপরিবারে বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশ সরকার কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা দেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশেই ছিলেন। তার জীবনকাল ৭৮ বছর হলেও ১৯৪২ সালের জুলাই মাসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর দীর্ঘ ৩৪ বছর ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি অসহনীয় নির্বাক জীবন কাটিয়েছেন।

কর্মসূচি : নজরুলজয়ন্তী উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এবার জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত কুমিল্লায় হবে কবির জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বিদ্রোহী’র শতবর্ষ’বিশেষ তাৎপর্যময়। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে কবির মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে হাজারো মানুষ জড়ো হন।

কুমিল্লার বীরচন্দ্র গণপাঠাগার ও নগর মিলনায়তন প্রাঙ্গণে আজ বেলা ১১টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

ইত্তেফাক/ইউবি