বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০
দৈনিক ইত্তেফাক

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহজেই মিলছে স্যানিটারি ন্যাপকিন

আপডেট : ২৫ মে ২০২২, ২০:৪২

আনিকা (কাল্পনিক নাম) স্কুলে থাকতে হুট করে পিরিয়ড হয়ে গেলেই বেশ ঝামেলায় পড়তো। শুরু হতো ফিসফিস করে বান্ধবীদের কাছে প্যাড চাওয়া। না থাকলে দৌড়ে স্কুলের খালার কাছে যাও, দোকান থেকে আনাও। কতবার মনে হয়েছে তখন স্কুলের ভেতরেই একটি মেশিন থাকতো, যখন তখন কিনে নেওয়া যেত ন্যাপকিন। 

আনিকা কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেও এখনো মাঝে মাঝে এই ঝামেলায় পড়ে যায় ব্যাগ এ অতিরিক্ত প্যাড রাখতে ভুলে গেলে। এই অস্বস্তির কি শেষ আছে? 

আনিকার মতো হাজারো নারীর জন্য ঘরের বাইরে পিরিয়ড স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার মূল বাধা ন্যাপকিনের সহজলভ্যতা। স্কুলে, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে বা অন্য জায়গায় যেখানে দিন এর বেশিরভাগ সময় কাটানো লাগে তাদের পড়াশোনা অথবা কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনে, স্যানিটারি ন্যাপকিনের সহজলভ্যতা না থাকার কারণে তাদের অধিকাংশই দীর্ঘ সময় ন্যাপকিন ব্যবহারের পিরিয়ডজনিত স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন। 

এছাড়া দেশের অধিকাংশ নারীদের মধ্যে আছে পিরিয়ডের সময় কাপড় ব্যবহার করার মতো অস্বাস্থ্যকর বিষয় নিয়ে অসচেতনতা। বাংলাদেশের অন্যতম স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্র্যান্ড ফ্রিডম-এর উদ্যোগ ‘ফ্রিডম ভেন্ডিং মেশিন’ বিগত কয়েক বছর ধরে নারীদের পিরিয়ড স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে অগ্রগামী ভূমিকা রেখে আসছে। 

ফ্রিডম এর এই উদ্যোগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনামূল্যে স্থাপন করা হয় দেশের সর্বপ্রথম স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন। প্রাথমিকভাবে ১০টি ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ১৫ হাজার নারী শিক্ষার্থীর জন্য সাশ্রয়ী স্যানিটারি ন্যাপকিন সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বর্তমানে ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ, বিএএফ শাহীন কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, এবং এরকম আরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভেন্ডিং মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।  

ধাপে ধাপে ফ্রিডম ভেন্ডিং মেশিন ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমানে যার সংখ্যা ১০০ এর ও বেশি। শত ফ্রিডম ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে ৩৫ লাখেরও বেশি নারী পাচ্ছেন সহজে যেকোনো সময়ে সাশ্রয়ী স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনার সুবিধা। 

বর্তমানে স্কুল, কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে, ফ্রিডম ভেন্ডিং মেশিন যেন এক স্বস্তির নাম। মাত্র ১০ টাকায় এখন যেকোনো সময়ে মেয়েরা ভেন্ডিং মেশিন থেকে ন্যাপকিন কিনে নিতে পারেন। মেশিনে একটি দশ টাকার নোট ঢোকালেই সহজেই বেরিয়ে আসে এক পিস ন্যাপকিন। এতে নেই কোনো ফিসফিস করে কারো কাছে প্যাড চাওয়ার বিড়ম্বনা, অথবা দোকানে যাওয়া-আসার, খোলা-বন্ধ থাকার বিড়ম্বনা। ফ্রিডমের এই চমৎকার উদ্যোগটি মেয়েদের জীবনে এনে দিয়েছে সাশ্রয়ী ন্যাপকিন ব্যবহারের অভাবনীয় সহজলভ্যতা। 

ফ্রিডমের লক্ষ্য বাংলাদেশে নারীদের জীবন-যাপনে, উদযাপনে, স্বপ্ন পূরণে, অথবা ক্ষমতায়নে পিরিয়ড যেন কোনও বাধা না হয়। এই লক্ষ্য পূরণেই নারীদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন যেকোনো সময়ে সহজলভ্য করার প্রাথমিক প্রচেষ্টা থেকেই ‘ফ্রিডম ভেন্ডিং মেশিন’ এর পথচলা শুরু। ফ্রিডম আগামীতে আরও ভেন্ডিং মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে ‘ফ্রিডম হাইজিন নেটওয়ার্ক’ তৈরি করে নারীদের মেন্সট্রুয়েশন হাইজিন নিশ্চিত করতে এগিয়ে যাচ্ছে।

ইত্তেফাক/এএএম