১৯৪৯ সালের ৪ এপ্রিল নর্থ আটলান্টিক ট্রিটি স্বাক্ষরের মধ্যে দিয়ে যাত্রা শুরু করে ন্যাটো। চুক্তির পঞ্চম ধারা অনুযায়ী, ‘এক বা একাধিক সদস্যের উপর সশস্ত্র হামলা সবার উপর হামলা হিসেবে বিবেচিত হবে।’ জন্মলগ্নে জোটের ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল তিনটি, সোভিয়েত সম্প্রসারণ ঠেকানো, উত্তর আমেরিকার শক্তিশালী উপস্থিতির মাধ্যমে ইউরোপের সামরিকায়ন নিষিদ্ধ করা এবং ইউরোপে রাজনৈতিক সংহতিকে উৎসাহ দেওয়া।
শুরুতে ১২ সদস্য নিয়ে যাত্রা করে ন্যাটো। ১৯৫২ সালে যোগ দেয় গ্রিস ও তুরস্ক। পশ্চিম জার্মানি যোগ দেয় ১৯৫৫ সালে আর ১৯৮২ সালে স্পেন। ১৯৯৯ সালে পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে পোল্যান্ড, চেক রিপাবলিক ও হাঙ্গেরি। বর্তমানে জোটের সদস্য সংখ্যা ৩০।
ন্যাটোর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সামরিক পদক্ষেপ নিয়ে বিভিন্ন সময় মতভেদ তৈরি হয়েছে। প্রথমবার এমন ঘটনা ঘটে ১৯৫৬ সালে সুয়েজ সংকট নিয়ে। ১৯৬৬ সালে ন্যাটোর সামরিক কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসার ঘোষণা দেয় ফ্রান্স এবং সে দেশ থেকে জোটের প্রধান কার্যালয় সরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানায়। নতুন কার্যালয় বসে বেলজিয়ামে। তবে ফ্রান্স জোটের মধ্যেই থেকে যায় এবং সংকটকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও রাখে।
১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়ার হামলা এবং ইউরোপে ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনকে কেন্দ্র করে নড়েচড়ে বসে ন্যাটো। পাল্টা জবাব হিসেবে পশ্চিম ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় জোট। ১৯৮৭ সালে এক চুক্তির মাধ্যমে দুই পক্ষ ভূমি থেকে নিক্ষেপযোগ্য মাঝারিপাল্লার সব ব্যালাস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সরিয়ে নিতে সম্মত হয়, যাকে ঠান্ডা লড়াই সমাপ্তির প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়া ও বার্লিন দেয়ালের পতনের পর ন্যাটোর অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তবে সময়ের সাথে সাথে বরং উল্টো ন্যাটোর সম্প্র্রসারণ চলতে থাকে। এক দশক ধরে চলা যুগোস্লাভ যুদ্ধ ও কসভো-সার্বিয়া সংঘাতে হস্তক্ষেপ করে জোট৷ গড়ে ওঠে ন্যাটো-বহির্ভূত সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক।
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর ন্যাটো সদস্যসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র আফগানিস্তানে আল-কায়দার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেয়। ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরাক যুদ্ধে সহায়তা কার্যক্রম চালায় ন্যাটো। সদস্য রাষ্ট্রগুলোর বাইরে অন্য রাষ্ট্রে সংঘাত, বিরোধেও নিজেদের কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে থাকে ন্যাটো। লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ভূমিকা রাখতে থাকে।
পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে ন্যাটোর সম্প্রসারণ নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখে রাশিয়া। ইউক্রেন যাতে ন্যাটোতে যোগ না দেয় সবশেষ সেই নিশ্চয়তা দাবি করে ক্রেমলিন। এমন প্রেক্ষিতে ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে হামলা শুরু করেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। পূর্ব ইউরোপে নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বাড়ালেও এই যুদ্ধে সরাসরি যুক্ত হবে না বলে জানিয়ে আসছে ন্যাটো। এই সংঘাত সামনে কোন দিকে মোড় নেবে তা সময়ই বলে দেবে।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিরাপত্তা পরিষদের মূল উদ্দেশ্য বিশ্বে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা। ১৫ সদস্যের মধ্যে স্থায়ী সদস্য পাঁচ পরমাণু শক্তিধর দেশ: চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। তাদের সবার সম্মতি ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পাস করা যায় না। বিপরীতভাবে কোনো সিদ্ধান্তে কেউ ভেটো দিলে তা বাতিল হয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে এই পাঁচ সদস্য তাদের স্বার্থ অনুযায়ী ভেটো ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়েছে।
ভেটো ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি প্রয়োগ করেছে রাশিয়া। ২৬৫টির মধ্যে ১১৯ বার ভেটো দিয়েছে তারা। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে যত ভেটো দেয়া হয়েছে তার সবগুলোই ছিল সোভিয়েত রাশিয়ার পক্ষ থেকে। শীতল যুদ্ধের যুগ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ভেটো দিয়ে আসছে রাশিয়া। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তোলা পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবেও ভেটো দেয় রাশিয়া।
চীন মোট ১৬ বার ভেটো দিয়েছে, এর মধ্যে ১৩ বারই রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে আর তিনবার এককভাবে। ১৯৭১ সালের ২৫ আগস্ট চীন তার প্রথম ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিল জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির বিরুদ্ধে।
ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগে রাশিয়ার পরে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ৮২ বার তারা এই ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। এর অনেকগুলোই ছিল ইসরায়েলকে নিয়ে। মধ্যপ্রাচ্য ও ফিলিস্তিনে সংঘাত ও হামলা নিয়ে দেশটির বিরুদ্ধে আনা প্রস্তাবে বরাবরই ভেটো দিয়ে এসেছে ওয়াশিংটন। তবে ২০১৬ সালে ওবামা ক্ষমতায় থাকাকালে ইসারেয়েলের বসতিস্থাপন বন্ধে আনা একটি প্রস্তাবে ভোট দানে বিরত থাকে তারা।
যুক্তরাজ্য ২৯ বার ও ফ্রান্স ১৬ বার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে বিভিন্ন প্রস্তাব নাকচ করেছে তারা। তবে ১৯৮৯ সালের পর ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য আর ভেটো ক্ষমতার ব্যবহার করেনি। সেবার পানামায় যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল দেশ তিনটি।
নিরাপত্তা কাউন্সিলে তোলা প্রস্তাবে সবশেষ ভেটোর ঘটনাটি ঘটে চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা বন্ধ ও নিন্দা জ্ঞাপনের প্রস্তাব আনে কয়েক ডজন দেশ। তবে রাশিয়ার একার ভেটোতে তা বাতিল হয়ে যায়।