শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ছাত্রলীগ-যুবলীগ মাঠে নামিয়ে মসনদ টেকানো যাবে না: রিজভী

আপডেট : ২৬ মে ২০২২, ২১:৪১

জনরোষ থেকে বাঁচতে সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ছাত্রলীগ-যুবলীগকে সশস্ত্র অবস্থায় মাঠে নামিয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘তবে ছাত্রলীগকে দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে শেখ হাসিনার মসনদ টেকানো যাবে না।’ বৃহস্পতিবার (২৬ মে) রাতে দলের নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী অভিযোগ করে বলেন, ‘গত পরশু আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সশস্ত্র সহিংস আক্রমণে ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী গুরুতর জখম হয়। শহীদ মিনারের সামনে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দফায় দফায় ছাত্রদলের শান্তিপূর্ণ মিছিলের ওপর ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত ছাত্রদল নেতাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এখনও তারা শঙ্কামুক্ত নন।’ 

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের হামলায় রেহাই পায়নি ছাত্রদল নেত্রীরাও। রড, হকিস্টিক, রামদা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মেয়েদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হায়েনার মতো। দুই জন ছাত্রদল নেতাকে ঢাবির শহিদুল্লাহ হলের নির্জন কক্ষে উঠিয়ে নিয়ে এসে আবরার স্টাইলে শারীরিক নির্যাতন চালায়। তাদের রক্ত শুকাতে না শুকাতেই আজ সকালে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আগ্নেয়াস্ত্র ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদলের মিছিলে আক্রমণ চালায়। ছাত্রদল নেতারা হাইকোর্ট চত্ত্বরে আশ্রয় নিতে গেলে সেখানেও ছাত্রদল ও আইনজীবীদের ওপর রক্তাক্ত হামলা চালায় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এ সময় তাদের আক্রমণে গোটা এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়-ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে ছাত্রদলের মিছিলে গুলিবর্ষণ করছে। বেশ কয়েকজন ছাত্রদল নেতাকে ২৮ অক্টোবরের লগি-বৈঠা স্টাইলে নির্মমভাবে নির্যাতন চালিয়েছে। তাদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি সাধারণ আইনজীবীরাও। ছাত্রলীগের হামলায় আজ সুপ্রিম কোর্টও রক্তাক্ত হয়েছে। ছাত্রলীগের এই আচরণ সম্পূর্ণরূপে মানবাধিকার লঙ্ঘন।’

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে তৈরি করেছেন গণতন্ত্র ও বিএনপি’র বিরুদ্ধে অনন্ত যুদ্ধে লিপ্ত থাকার জন্য। অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য জনগণকে শেখ হাসিনার প্রয়োজন নেই। তার খুবই প্রয়োজন সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী। আর এই প্রয়োজন মেটাতেই ছাত্রলীগ-যুবলীগকে এখন অস্ত্র দিয়ে মাঠে নামিয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর বাহবা কুড়ানোর জন্য তারা অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে বিরোধী দলের রক্ত নিঙড়িয়ে নিচ্ছে। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রীর এই খুনি বাহিনী বাংলাদেশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।’ 

রিজভী বলেন, ‘তারা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে শ্রমিক বিশ্বজিৎ, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু বকর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমর ফারুক, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যুবায়েরসহ বিরোধী ও নিজ দলের অসংখ্য ছাত্রকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন পর্যন্ত অর্থাৎ গত ১৩ বছরে অর্ধ শতাধিক মেধাবী শিক্ষার্থীকে পৈশাচিকভাবে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ।’ 

তিনি বলেন, ‘ময়মনসিংহের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের গোলাগুলিতে নিহত হয় শিশু রাব্বী। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এরা শুধুমাত্র ছাত্র-ছাত্রী-শ্রমিকসহ সাধারণ মানুষের জীবনই কেড়ে নেয়নি, সমাজের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে নানাভাবে হয়রানি, হুমকি ও ভয়ভীতির শিকারে পরিণত করেছে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে মনের মতো সাজিয়েও ভরসা পাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই ছাত্রলীগকে তিনি সাজিয়েছেন বিরোধী দল বিনাশে অস্ত্র হিসেবে। জাতির ললাটে একমাত্র মহিলা ফ্যাসিষ্টের শাসন এখন দুর্বিষহ রূপ নিয়েছে। নানা কারণে এই সরকারের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে মানুষ।’

রিজভী আরও বলেন, ‘এছাড়াও বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কটূক্তির প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়েছে পুলিশ। হামলায় নেতাকর্মীরা আহত হয়েছেন এবং বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ইত্তেফাক/এএএম