শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

চিকিৎসক সংকটে খুমেক ক্যানসার ইউনিট, সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা

আপডেট : ২৮ মে ২০২২, ০৩:০৪

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ক্যানসার ইউনিটে সপ্তাহে মাত্র তিন দিন ক্যানসার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। বাকি তিন দিন তালাবন্ধ থাকছে গুরুত্বপূর্ণ এ ইউনিট। ফলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলার ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৮ অক্টোবর খুমেক হাসপাতালে ক্যানসার ইউনিট চালু করা হয়। কিন্তু চালুর পর থেকেই প্রয়োজনীয় জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে কোন রকমে চলছে ইউনিটটি। বাইরে থেকে ওষুধ কিনে কিনে এনে দিনের বেলায় কেমোথেরাপি দেওয়া ছাড়া এখানে আর কোনো সেবা নেই।

ইউনিটে শয্যাসংখ্যা মাত্র ১০। প্রতিটি বেডে দুই জন করে রোগীকে দুই শিফটে সপ্তাহে তিন দিন কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। বহির্বিভাগ টিকিটের মাধ্যমে বিভাগীয় প্রধান ডা. মুকিতুল হুদা সপ্তাহে তিন দিন ও ডা. হ্যাপি সাহা ছয় দিন চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। কিন্তু ডা. হ্যাপি সাহা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকা অবস্থায় সম্প্রতি তাকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটে। এরপর থেকে সপ্তাহে তিন দিন কেমোথেরাপি দেওয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় রোগীরা পড়েছে চরম চিকিৎসা সংকটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ক্যানসার চিকিৎসায় উন্নত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১২ সালের জুলাই মাসে প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রেডিওথেরাপি মেশিন (লিনিয়র এক্সেলেটর) খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। মেশিনটি রাখা হয় ক্যানসার ইউনিটের ভবনের সামনে। তখন থেকে আজ অবধি সেখানেই বাক্সবন্দি হয়ে পড়ে আছে মেশিনটি।

সাতক্ষীরার থেকে মা কে নিয়ে কেমোথেরাপি দিতে আসা ইব্রাহিম বলেন, ২১ দিন পর পর কেমোথেরাপি দিতে হচ্ছে। ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনি। হাসপাতালে শুধু পুশ করে দেয়। ওষুধ কিনতে অনেক টাকা লাগে।

হাসপাতালের ক্যানসার ইউনিটের দায়িত্বে থাকা রেডিওথেরাপি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুকিতুল হুদা বলেন, প্রতিদিন গড়ে চার জন করে ক্যানসারে আক্রান্ত নতুন রোগী আসেন। এছাড়া ফলোআপ রোগী আসেন প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ জন। সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। খুলনা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মো. মেহেদী নেওয়াজ বলেন খুলনা বিভাগের ১০ জেলাসহ অন্যান্য জেলা থেকেও ক্যানসার আক্রান্ত রোগীরা এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন। তবে এ ইউনিটের চিকিৎসক সংকট শুরু থেকেই। তার পরও এখানকার চিকিৎসকরা সামর্থ্যের বেশি রোগীর সেবা দিয়ে আসছে। 

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান বলেন, ক্যানসার রোগীদের আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা দিয়ে থাকি। এ ছাড়া সরকারি যে ওষুধ সাপ্লাই আছে তাও রোগীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেওয়া হয়। তবে, ক্যানসার ইউনিটের দুই জন চিকিৎসকের মধ্যে একজন সম্প্রতি বদলি হয়েছেন। এতে সাময়িক কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে, আরেক জন চিকিৎসক যোগ দিলেই সমস্যা কমে যাবে। 

তিনি আরো বলেন, ক্যানসারের চিকিৎসায় সুযোগসুবিধা বৃদ্ধিসহ আধুনিক ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এই ভবন নির্মাণ হলে ক্যানসারের চিকিৎসা আরো সহজ হবে।

ইত্তেফাক/এএইচপি