বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী নজরুল ঢাকায় গ্রেফতার

আপডেট : ০৩ জুন ২০২২, ২০:২১

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি জামায়াত নেতা নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। শুক্রবার র‌্যাব সদর দপদফতরের গোয়েন্দা শাখা রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় এ অভিযান চালায়।

নজরুল মুক্তিযুদ্ধের সময় নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র বেশ কয়েকজনকে হত্যা করেন। সেই সঙ্গে ১৯৭১ সালের ১২ অক্টোবর পাহাড়পুর সোমপুর বিহারে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, সেই যুদ্ধে পাকহানাদার বাহিনীকে পথ চিনিয়ে দিতে সহায়তা করেছিলেন নজরুল ইসলাম। ওই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গনিসহ ৭ জন বীরমুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এছাড়া তিনি অনেককে অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন, বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করেছেন।

র‌্যাব সদর দফতরের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলায় নজরুল ইসলামসহ তিনজনকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। অপর দু’জন হলেন- রেজাউল করিম মন্টু ও শহীদ মণ্ডল। তাদের মধ্যে নজরুল ছিলেন পলাতক। দণ্ডিত তিন আসামি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় নওগাঁর বিভিন্ন এলাকায় মনবতাবিরোধী অপরাধে লিপ্ত ছিলেন। দণ্ড ঘোষণার পর পলাতক আসামিকে গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মোহাম্মদপুরে আত্মগোপনে থাকা নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মুক্তিযুদ্ধের সময় নওগাঁয় সাতজনকে হত্যাসহ অনেককে আটকে রেখে নির্যাতন, অপহরণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অপরাধে গত ৩১ মে নজরুলসহ তিনজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি আবু আহমেদ জমাদার ও কে এম হাফিজুল আলম। ১৪৪ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপে আদালত বলেছেন, আসামিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন মানবতাবিরোধী অপরাধের যে তিন ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছিল, তার সবগুলোই প্রমাণিত হয়েছে।

তিন অভিযোগ: ১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর বিকেল আনুমানিক ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত আসামিরা নওগাঁর বদলগাছী থানার পাহাড়পুর ইউনিয়নের রানাহার গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নিরীহ-নিরস্ত্র সাহেব আলী, আকাম উদ্দিন, আজিম উদ্দিন মণ্ডল ও মোজাফফর হোসেনকে হত্যা করে। ওই সময় ১০-১২টি বাড়িতে লুটের পর অগ্নিসংযোগ করে তারা। এর পরদিন ৮ অক্টোবর দুপুর আনুমানিক দেড়টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টার মধ্যে আসামিরা পাহাড়পুর ইউনিয়নের খোজাগাড়ী গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের নুরুল ইসলামকে হত্যা করে। এ সময় তারা ১৫-২০টি বাড়িতে লুটের পর আগুন ধরিয়ে দেয়। 

একইদিন বিকেল আনুমানিক ৫টা থেকে পরদিন ৯ অক্টোবর বিকেল পর্যন্ত পাহাড়পুর ইউনিয়নের মালঞ্চা গ্রামে হামলা চালিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের কেনার উদ্দিন ও আক্কাস আলীকে আটকে নির্যাতন করে। পরে তাদের জয়পুরহাটের কুঠিবাড়ি ব্রিজে নিয়ে হত্যা করা হয়। ওই সময়ের মধ্যে আসামিরা প্রায় অর্ধশত বাড়িতে লুটপাট চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে।

 

ইত্তেফাক/এসজেড