শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

জীবনযুদ্ধে হার না মানা

হুইল চেয়ারে বসে মেজর র‍্যাংক ব্যাজ পরলেন কানিজ

আপডেট : ০৫ জুন ২০২২, ০১:২৫

হুইল চেয়ারে বসে মেজর র‍্যাংক ব্যাজ পরলেন জীবনযুদ্ধে হার না মানা কানিজ। ২০১২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্রশিক্ষণ চলাকালে দুর্ঘটনায় পড়ে মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে যায় সেনাবাহিনীর এই কর্মকর্তার। কিন্তু তিনি দমে যাননি। নিজের অদম্য মানসিক শক্তি এবং সহকর্মীদের সহায়তায় দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে পালন করেছেন। 

শনিবার (০৪ জুন) হুইল চেয়ারে ঢাকা সেনানিবাসের আর্মি মাল্টিপারপাস কমপ্লেক্সে আসেন তিনি। সেখানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব ফরমেশন কমান্ডারের উপস্থিতিতে এক আড়ম্বরপূর্ণ পরিবেশে তাকে মেজর র্যাংক ব্যাজ পরিয়ে দেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ।

পক্ষাঘাতগ্রস্ত কানিজ ফাতেমা আজ শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নয়, পুরো দেশ ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নারী সমাজের জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। সরকারের নারী ক্ষমতায়নেরও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত এটি। কানিজ ফাতেমা দেশসেবার এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ২০১১ সালে 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তবে দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে তার পক্ষে সেনাবাহিনীর কঠোর ও সুশৃঙ্খল স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু এই অকুতোভয় নারী ভাগ্যের কাছে হার না মেনে দেশের স্বার্থরক্ষায় কাজ করে যেতে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কানিজ ফাতেমার এই অদম্য উদ্দীপনাকে সম্মান জানিয়ে সব বাধা উপেক্ষা করে ৬৯ বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের সঙ্গে ২০১৩ সালে বিশেষ বিবেচনায় কমিশন দেয় তাকে। পরবর্তী সময়ে কানিজ ফাতেমা হুইল চেয়ারের সাহায্যে চলাফেরা করলেও নিজের অদম্য মানসিক শক্তি এবং সহকর্মীদের সহায়তায় দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে পালন করে আসছেন। তার ইচ্ছাশক্তির কাছে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা হার মেনেছে পদে পদে।

দেশ ও জনগণের আস্থার প্রতীক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক একজন অকুতোভয় নারীর প্রতি এই বিরল সম্মাননা দেশের প্রতিটি নারীর অগ্রযাত্রায় সর্বদা অনুকরণীয় এবং ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নারীর ক্ষমতায়নের অংশ হিসেবে সেনাবাহিনীতে ২০০০ সালে নিয়মিত বাহিনীতে প্রথম নারী অফিসার নিয়োগ প্রদান শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সাল থেকে নারী সৈনিকের সংযোজন, নারী অফিসারদের ইউনিট কমান্ড প্রদান, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে গুরুত্বপূর্ণ পদে নারী অফিসারদের নিয়োগসহ বিভিন্ন পদক্ষেপে দেশে নারী উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ত্বরান্বিত করেছে। সেনাবাহিনীর প্রধানের নির্দেশে এই বিশেষ আয়োজন জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।

কানিজ ফাতেমা কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার বিংলাবাড়ী গ্রামে ১৯৯০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মরহুম কালাম উদ্দিন সরকার ও মা ছালমা বেগম। তিনি কুমিল্লা জেলার বদিউল আলম হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং বদিউল আলম ডিগ্রি কলেজ হতে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস থেকে বিএসসি ইন মিলিটারি স্টাডিজ বিষয়ে ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি ২৪ ডিসেম্বর ২০১৩ সালে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন লাভ করেন। কমিশন পাওয়ার ২০ দিনের মধ্যে তার বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। পরে তিনি তার পরিবারের হাল ধরেন। এখন পর্যন্ত পুরো পরিবার তার ওপর নির্ভরশীল। পরিবারে তার মা, আরো দুই বোন ও এক ভাই রয়েছে। ভাই-বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। ভাই-বোনদের পড়াশোনাসহ যাবতীয় খরচ তিনিই বহন করছেন। কানিজ ফাতেমা কমিশন পাওয়ার পর থেকে তার ওপর অর্পিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সব দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করছেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৯ পদাতিক ডিভিশনের অধীনস্থ ৩৩ এসটি ব্যাটালিয়নে কর্মরত রয়েছেন।

 

ইত্তেফাক/ ইআ