মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

ইউক্রেন যুদ্ধে বাড়ছে বেসরকারি স্যাটেলাইটের গুরুত্ব

আপডেট : ০৭ জুন ২০২২, ১৪:১১

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা সম্পর্কে স্পষ্ট চিত্র পেতে বেসরকারি স্যাটেলাইট সংস্থাগুলির গুরুত্ব স্পষ্ট হয়ে গেছে। মহাকাশে আরো ছোট ও কার্যকর এমন চোখ ভবিষ্যতে আরো অনেক কাজে লাগানো যেতে পারে।স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবিই ইউক্রেনের বুচা শহরে গণহত্যার চূড়ান্ত প্রমাণ দিতে পেরেছে। এক বেসরকারি স্যাটেলাইট কোম্পানি সে কারণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে পড়েছে।

আজকাল যে কেউ মহাকাশ থেকে তোলা ছবির অর্ডার দিতে পারে। ফলে ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠছে। প্রায় প্রতিদিনই মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো হচ্ছে। সেগুলির আকার একটি ওয়াইনের বোতলের মতো। ভেতরে হাইটেক ক্যামেরা ভরা থাকে। প্রয়োজনে ছবি তোলার দশ মিনিটের মধ্যে সেগুলি ক্রেতার কম্পিউটারে পৌঁছে দেওয়া যায়। সেরা ছবিগুলিতে ৩০ সেন্টিমিটারের বেশি ভুলভ্রান্তি থাকে না। 

ফ্রঁসোয়া লঁবার প্লেয়াইডেস নেও নামের কোম্পানির প্রতিনিধি। এয়ারবাস কোম্পানির এই শাখা স্যাটেলাইট ছবির বাজারে সবে প্রবেশ করেছে। তার মতে, সংকটের এই সময়ে নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহক স্যাটেলাইটে তোলা ছবির নাগাল পেয়ে দীর্ঘমেয়াদী সমাধানসূত্রের প্রতি বাড়তি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন বা নিজস্ব স্যাটেলাইট কিনছেন। বাকিদের মধ্যে কেউ কেউ আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে আমাদের ইমেজারির নাগাল পেতে চাইছেন। 

এই কোম্পানি মূলত গোয়েন্দা সংস্থা ও সরকারের মতো গ্রাহকের দৌলতে সবচেয়ে বেশি অর্থ উপার্জন করছে। সে কারণে কোম্পানির প্রধানকে ভাসা ভাসা উত্তর দিতে হচ্ছে। কিন্তু অন্য কিছু ক্ষেত্রেও স্যাটেলাইটে তোলা ছবির বিপুল চাহিদা দেখা যাচ্ছে। এমন ইমেজারি কাজে লাগিয়ে বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্র কিছু উন্নতির মাধ্যমে ফসলের পরিমাণ বাড়িয়ে বাড়তি আয় করতে পারে। 

ইয়ুলিউস ক্যুন ইনস্টিটিউটের গবেষক মার্কুস ম্যোলার বলেন, চাষি যেখানে সব সময়ে যেতে পারেন না, সেখানেও স্যাটেলাইটের নজর রয়েছে। চাষি একই সঙ্গে সব জায়গায় থাকতে পারেন না। কিন্তু স্যাটেলাইটে তোলা ছবির মাধ্যমে গোটা জমির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যায়। মার্কুস ম্যোলার এক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে চাষিদের প্রয়োজনীয় পৃথিবী পর্যবেক্ষণের যাবতীয় সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। 

তিনি বলেন, স্যাটেলাইটে তোলা ছবি কাজে লাগিয়ে যেমন জমিতে সার দেবার আদর্শ সময় স্থির করা হচ্ছে। সেই লক্ষ্যে এমন ইনফ্রারেড ছবি কাজে লাগানো হচ্ছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, যে গাছপালা বেড়ে ওঠার কোন পর্যায়ে সারের প্রয়োজন। ম্যোলার বলেন, সে ক্ষেত্রে সব সময়ে, যতটা সম্ভব আদর্শ উপায় হলো গোটা জমিতে একই সঙ্গে সার না দিয়ে শুধু নির্দিষ্ট অংশে তা সীমিত রাখা। সেটা করলে সম্পদেরও সাশ্রয় হয়। আমরা এমন সব বিষয় নিয়ে বেশি মাথা ঘামাই। 

ছবি তোলার এমন স্যাটেলাইটের আকার এবং ওজন কমেই চলেছে। ফলে মহাকাশে পাঠানোর ব্যয়ও কমছে, যার জের ধরে ছবির মূল্যও কমছে। বছরে কয়েক হাজার ইউরো ব্যয় করলেই মহাকাশ থেকে তোলা ছবির নাগাল পাওয়া সম্ভব। 

ফ্রঁসোয়া লঁবার মনে করেন, আমি লক্ষ্য করছি, স্টার্টআপ কোম্পানির মতো ছোট সংস্থা, এমনকি সাধারণ মানুষ, ইঞ্জিনিয়ার ইমেজারি নিয়ে কিছু করতে চাইছে। ছবির রেজোলিউশনেরও উন্নতি হচ্ছে। তাহলে কি অদূর ভবিষ্যতে কম খরচেই মহাকাশ থেকে প্রতিবেশীর উপর নজর রাখা যাবে? 

লঁবার বলেন, ছবিতে কিছু মানুষ আছে কিনা, আপনি তা হয়তো দেখতে পাবেন। জনসংখ্যার গতিবিধিও হয়তো দেখতে পাবেন। কিন্তু রেজোলিউশনের ক্ষেত্রে আরও বেশি কিছু চাইলে যে ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হয়, তা পাওয়া কঠিন হবে। তাই এই মুহূর্তে সে বিষয়ে আমাদের মাথা ঘামাতে হচ্ছে না। সুরক্ষা নিশ্চিত করতে অনেক বিধিনিয়ম এখনো সামলাতে হচ্ছে। স্যাটেলাইটে তোলা ছবির বাজার বেড়েই চলেছে। সেইসঙ্গে যুদ্ধের সময় সামরিক বাহিনীর রোষের জের ধরে স্যাটেলাইট ধ্বংসের আশঙ্কাও বাড়ছে। 

ইত্তেফাক/এএইচপি