বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

পদ্মা সেতু উদ্বোধন

সুধী সমাবেশে আমন্ত্রিত ৩ হাজার, জনসভা উন্মুক্ত

আপডেট : ২১ জুন ২০২২, ০৩:৩৮

প্রমত্তা পদ্মায় বাস-ট্রাকসহ নানা যানবাহন নিয়ে এর অথৈ পানিতে ছুটছে ফেরি। তবে এ যাত্রার সময় ফুরোচ্ছে শিগগিরই। সব বাধা জয় করে নদীর বুকে সগৌরবে দাঁড়িয়েছে সেতু। যা যুক্ত করেছে নদীর দুই পাড়কে। আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু। সেতু বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী সুধী সমাবেশে আমন্ত্রণ পাচ্ছেন ৩ হাজার সুধীজন। এ তালিকায় রয়েছেন মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ, বাংলাদেশে অবস্হানরত বিদেশি কূটনীতিক, নির্মাণ সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, দেশের খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা। 

গতকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আমন্ত্রণপত্র বিতরণের কাজ শুরু করেছে সেতু বিভাগ। জাজিরা প্রান্তে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে জনসভা। এটা সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।  পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আগামী ২৫ জুন বুড়িগঙ্গা সেতু, ধলেশ্বরী সেতু এবং আড়িয়াল খাঁ সেতুর টোল বাতিল করা হয়েছে। সোমবার (২০ জুন) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ফাহমিদা হক খান স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন কেবল ২৫ জুন অভ্যাগত অতিথিদের যানবাহনসহ সাধারণ যানবাহনের যানজটবিহীন নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করার স্বার্থে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কের একই করিডোরে অবস্হিত বুড়িগঙ্গা সেতু, ধলেশ্বরী সেতু ও আড়িয়াল খাঁ সেতুর টোল মওকুফ করা হলো। এদিকে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ঘিরে পদ্মা সেতু এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ব্যাপক প্রস্ত্ততি নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সেতুর আশপাশের সড়কগুলোতে বসানো হয়েছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। বাড়ানো হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। যেকোনো ধরনের নাশকতা এড়াতে গোয়েন্দা নজরদারি, সাইবার মনিটরিং এবং পেট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া জনসভা ও সমাবেশস্হল ঘিরে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্হার সদস্যদের কঠোর নজরদারি চলছে।

ইতিমধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতুর সড়ক পথের সব কাজ সম্পন্ন। আগামীকাল বুধবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে পদ্মা সেতু বুঝিয়ে দেবে। ২৫ জুন সকাল ১০টায় মাওয়া প্রান্েত সুধী সমাবেশ করে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন নামফলক উন্মোচন করে টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পার হবেন তিনি। এরপর জাজিরা প্রান্তেও নামফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঐদিন বিকালে মাদারীপুর শিবচরে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রধানমন্ত্রীর জনসভা সফল করতে ব্যাপক প্রস্ত্ততি গ্রহণ করা হয়েছে। ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটবে বলে প্রত্যাশা করছে আওয়ামী লীগ। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের তিনটি সেতুতে টোল আদায় বন্ধ থাকবে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের এই তিন সেতু হচ্ছে বুড়িগঙ্গা (পোস্তগোলা), ধলেশ্বরী ও আড়িয়াল খাঁ।

১০০ বছর স্হায়ীত্বের পদ্মা সেতুর নির্মাণ খরচ ৩৫ বছরে উঠানোর টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এ টাকা উঠবে টোল আদায়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) কর্মকর্তারা বলেন, বিদেশি ঋণ বা যেকোনো ধরনের অনুদান বাতিল করে অর্থ মন্ত্রণালয় বিবিএকে ৩০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে, যা আমাদের ৩৫ বছরের মধ্যে ১ শতাংশ সুদের হারে পরিশোধ করতে হবে। এদিকে টোল দিতে পদ্মা সেতুতে গাড়ি থামাতে হবে না। কারণ টোল বুথ পার হওয়ার সময়ে গাড়ির স্টিকার স্ক্যান করে টাকা কেটে নেওয়া হবে টাচ ফ্রি বা ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন সিস্টেমে। তবে পাশাপাশি থাকছে কার্ডে টাকা দেওয়ার সুবিধা, রাখা হচ্ছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিও। টোল ব্যবস্হাপনা, সফটওয়ারসহ আধুনিক সব ব্যবস্থা নিয়ে আসছে বিদেশি প্রতিষ্ঠান কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকার এই সেতুতে চলাচল শুরুর প্রথম দিন থেকেই দিতে হবে টোল। এরই মধ্যে ১৩ ধরনের যানবাহনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে টোলহার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সমীক্ষায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হবে এই সেতু। আর এতে দিনে চলবে ২৪ হাজার যানবাহন। পদ্মা সেতুতে মাসিক টোল আদায় হবে ১৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। বিপুল সংখ্যার এই যানবাহন থেকে টোল নেওয়ার পদ্ধতি জানিয়েছেন সেতু সচিব মনজুর হোসেন। টোল নিতে সেতুর দুই প্রান্তে থাকছে সাতটি করে ১৪টি লেন। টোল আদায় ও সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে কোরিয়া এক্সপ্রেস করপোরেশন ও চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির সঙ্গে এরই মধ্যে চুক্তি করেছে সেতু বিভাগ। টোল দিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে সব মিলিয়ে সময় লাগবে ৩৬০ সেকেন্ড। অথচ এ দূরত্ব ফেরিতে পারাপারে সময় লাগত অন্তত দেড় ঘণ্টা।

ইত্তেফাক/ইআ