শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মোহামেডান-আবাহনীর লড়াইয়ে হাফ ডজন গোল

আপডেট : ২৩ জুন ২০২২, ১০:০২

কুমিল্লার ধর্মসাগরের পাশে শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে মোহামেডান-আবাহনী ফুটবল ম্যাচ। প্রিমিয়ার লিগের খেলা। প্রচার নেই বলে ৩০ টাকা টিকিটের খেলায় দর্শকও খুব একটা হয়নি। আগের বার এই মাঠে  প্রচুর দর্শক দেখা গিয়েছিল। তারপরও ফুটবলের টানে এসেছিলেন কয়েক শত দর্শক। ঢাকা থেকে গিয়েছিলেন ফুটবল পাগল দর্শক। মোহামেডান সমর্থক ছিল আবাহনীর সমর্থকও ছিল। নিজের পকেটের টাকা খরচা করে এত দূরে গিয়ে খেলা দেখার মধ্যে আনন্দ পান।

ঢাকার দর্শক একজন বলছিলেন নিজেকে ধরে রাখতে পারি না। মোহাপাগল নামের মোহামেডান সমর্থকরা গিয়েছে গাড়িবোঝাই করে। ফিরেছেন মুখটা কালো করে। আবাহনী ৪-২ গোলে হারিয়েছে মোহামেডানকে। দর্শক ফুটবল মাঠে গোল দেখতে চায়। গতকাল এক ম্যাচে হাফ ডজন গোল দেখেছে। এই দুই দলের শেষ ছয় লড়াইয়ে এত গোল দেখা যায়নি। দ্বিতীয় স্হানে থাকা ১৬ খেলায় পয়েন্ট ৩৫ আবাহনীর। সমান খেলায় ষষ্ঠ স্হানে থাকা মোহামেডানের পয়েন্ট ২২।  

শফিকুল ইসলাম মানিক ২০১১ সালের পর আবার সাদাকালো শিবিরে ফিরলেন কোচ হয়ে। প্রথম শুরু করলেন হার দিয়ে। খেলার শুরুতেই মানিকের পরিকল্পনা ছিল রক্ষণ আগলে খেল। অতিমাত্রায় রক্ষণ মোহামেডানকে আক্রমণে উঠতে দেয়নি। খেলার প্রথম ধাক্কাতেই মোহামেডান তিন গোল উপহার দিল রক্ষণে দাঁড়িয়ে। গোলকিপার সুজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলেন কীভাবে নিজেদের জালে বল ঢোকে। আবাহনী তেমন কোনো আক্রমণ না করতেই নিজেদের অগোছালো ফুটবলের সুযোগ টানা তিন কর্নারে মোহামেডান কোণঠাসা। তিন নম্বর কর্নারে কলিন্দ্রেস গোল করেন। ব্রাজিলিয়া রাফায়েল, আর স্বদেশি ডরিয়েলটনের ছুটোছুটিতে কলিন্দ্রেসে কর্নার স্পট থেকে শট করেন। কর্নারের বল সরাসরি মোহামেডানের জালে ১-০। ৭ মিনিটে প্রথম গোল। ৯ মিনিটে দ্বিতীয় গোল হজম। ডরিয়েলটন বক্সে ঢুকে ডজ দিয়ে শট নেন ২-০, গোলকিপার সুজন এবারও নড়েচড়ে দাঁড়াতে পারলেন না।

মোহামেডানের একমাত্র স্ট্রাইকার সুলায়মান দিয়াবাতেকে ওপরে রেখে দল সাজায়। সাহস করে আক্রমণ করলে সুযাগ পাওয়া যায়, মোহামেডান বুঝতে ১৮ মিনিট লাগল। লেফট উইং দিয়ে আলমগীর মোল্লার ক্রসের বলটা অধিনায়ক দিয়াবাতে গোলে পরিণত করলেন ১-২। ৪২ মিনিটে আবার সেই কলিন্দ্রেসের উৎস হতে মাত্রই মাঠে নামা আবাহনীর ইমন বাবু গোলে পরিণত করেন ৩-১। আনন্দের রেশ না কাটতেই শাহরিয়ার ইমনের গোলে (২-৩) মোহামেডান ব্যবধান কমায়। বিরতির বাঁশি বাজার আগে আবার সেই কলিন্দ্রেসের কর্নারের বলে মাথা ছঁুয়ে গোল করেন ডরিয়েলটন ৪-২।

টনক নড়ল মানিকের। বিরতির পর মোহামেডানের গোলকিপার সুজনকে বাদ দিয়ে বিপুকে নামালে আবাহনী আর সুযোগ নিতে পারেনি। আবাহনীর শক্তি ছিল কলিন্দ্রেস, রাফায়েল, ডরিয়েলটন। এই তিন জনের সঙ্গে রাকিব, সোহেল রানা, মেহেদী হাসানরা তাল মিলিয়ে খেলতে পারেননি। রক্ষণে আবাহনীর দুর্বলতা ছিল রেজা এবং সুশান্ত ত্রিপুরা। এই দুজনের ফাঁক গলে বল বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেও মোহামেডান সেটা লুফে নিতে পারেনি। রেজা মোহামেডানের আক্রমণ ঠেকাতে বাড়তি শক্তি কাজে লাগাতে গিয়ে খেসরাত দিয়েছেন লালকার্ড হজম করেন ৮১ মিনিটে। ১০ জনের আবাহনী যেন কোনো রকমে খেলাটা শেষ হলেই বাঁচে।

মোহামেডানের পিচ্চিপাচ্চি ফুটবলারদের কাছে আবাহনী হিমশিম খাচ্ছিল। মোহামেডানের জাফর ইকবালকে ঠোকতে গিয়ে বক্সের ভেতরে ফেলে দেওয়া হলেও রেফারি বিটু রাজ বড়ুয়া দেখেননি। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে খেলা হলে প্রেসবক্স থেকে অনেক কিছুই স্পষ্ট দেখা যায়। কিন্তু কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামের প্রেসবক্স থেকে দক্ষিণের গোলপোস্ট কাছাকাছি হওয়ায় পরিচ্ছন্ন আক্রমণ সহজেই দেখা যায়। বদলি নামা মোহামেডানের শাহেদ মিয়ার শট আবাহনীর জালে জড়ালেও সহকারী রেফারি নুরুজ্জামান লাইনের অন্তত ২০ গজ দূরে দাঁড়িয়ে অফসাইড সংকেত দিলে রেফারি গোল থামিয়ে দেন।

খেলা শেষ হয়ে গেলে আবাহনীর ফুটবলাররা যেন প্রাণে বেঁচে যান। সবাই আলিঙ্গন করেন, হাত মেলান। আর রেফারিরা মাঠ থেকে বের হওয়ার সময় দর্শক ছুড়ে মারল পানির খালি বোতল। দুয়ো ধ্বনি দিল। মোহামেডানের দাবি তারা প্রথমার্ধেও একটা পেনালটি পেয়েছিল। কিন্তু রেফারি সেটি এড়িয়ে গেছেন।    

এদিকে দিনের অপর ম্যাচেও ছড়িয়েছে উত্তাপ। রাজশাহীতে উত্তর বারিধারাকে ৩-২ গোলে হারায় বাংলাদেশ পুলিশ।

ইত্তেফাক/টিএ