শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

মাকবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়

আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ০৯:৫৮

হজ—ইসলামের পাঁচটি ভিত্তির অন্যতম একটি ভিত্তি। নামাজ, রোজা এবং জাকাত যেমন ফরজ, তেমনি সামর্থ্যবান ইমানদার ব্যক্তির জন্য হজ ফরজ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পৃথিবীতে প্রথম খানায়ে কাবা সৃষ্টি করেছেন। মহান আল্লাহ তার এ ঘরকে মানবজাতির হেদায়তের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা সুরা আলে ইমরানের ৯৭ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন—‘অবশ্যই গোটা মানবজাতির জন্য পৃথিবীতে প্রথম ঘর নির্মাণ করা হয়েছে মক্কা নগরীতে। এ ঘর হচ্ছে সমগ্র মানবের কল্যাণ ও হেদায়তের জন্য।’

ফেরেশতাদের মাধ্যমে জগতে আল্লাহ প্রথম খানায়ে কাবা তৈরি করে প্রথম মানব ও নবি আদম (আ.)-কে দিয়ে তা আবাদ করেন। সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ এ ঘরে এসে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করে আসছে। আদম (আ.)-এর পর খানায়ে কাবার পুনর্নির্মাণ করেন, হজরত শিশ (আ.)। তারপর পূর্ণাঙ্গরূপে হজরত ইবরাহিম (আ.) নিজ পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে সঙ্গে নিয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করেন। নির্মাণ শেষে আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-কে জানিয়ে দেন—হে ইবরাহিম! তুমি আমার বান্দাদের জন্য হজের ঘোষণা দিয়ে দাও—‘আর যখন আমি ইবরাহিমকে বাইতুল্লাহ্র স্হান ঠিক করে দিয়ে বলেছিলাম যে, আমার সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না এবং আমার গৃহকে পবিত্র রাখো তাওয়াফকারীদের জন্য, নামাজ আদায়কারীদের জন্য এবং রুকু-সিজদাকারীদের জন্য। আর মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা দিয়ে দাও। মানুষ দলে দলে হজের জন্য আমার এই ঘরে ছুটে আসবে উটের পিঠে সওয়ার হয়ে। দূরদূরান্ত থেকে আসার কারণে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়বে।’ (সুরা হজ, আয়াত ২৬—২৭)

আল্লাহ্র খলিলের সেই আহ্বান আজও আকাশে-বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে, পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আল্লাহর মেহমানরা ছুটে চলেছেন খানায়ে কাবার পানে। সেলাইবিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড় পরে, পাগলের বেশে তালবিয়া পাঠ করছেন—‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুল্ক, লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক’ অর্থাত্—আল্লাহ! আমি হাজির; হে আল্লাহ, আমি হাজির! তোমার ডাকে সাড়া দিতে আমি তোমার ঘরে হাজির! তোমার কোনো শরিক নেই। নিঃসন্দেহে সব প্রশংসা, সব নেয়ামত তোমারই, তুমিই সবকিছুর একক অধিপতি। তোমার কোনো শরিক নেই।

আসলে, হজ হচ্ছে একজন প্রকৃত খোদাপ্রেমিকের নিদর্শন। হজের সফর যেন মৃতু্যর সফর। মৃতু্যপথের যাত্রী যেমন ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক সবকিছু পরিত্যাগ করে শুধু নিজের আমলটুকু সঙ্গে নিয়ে কাফনের কাপড়ে আবৃত হয়ে কবরে যায়, হজযাত্রীও তেমনি নিজের ঘরবাড়ি, আত্মীয়-পরিজন, বন্ধুবান্ধব, বিষয়সম্পত্তি সবকিছু ছেড়ে একনিষ্ঠভাবে একান্ত প্রিয়তম প্রভুর টানে এহরামের সাদা দুইখানা কাপড় গায়ে জড়িয়ে পাগলের বেশে ছুটে চলেন।

হজ বান্দাকে সম্পূর্ণ নিষ্পাপ করে দেয়। বুখারি ও মুসলিমে হজরত আবু হুরায়রা (রাযি.) থেকে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন—‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশে হজ করল, হজের কার্যাবলি আদায়কালে স্ত্রীসম্ভোগ থেকে বিরত থাকল এবং গুনাহের কাজ করল না, সে যেন মাতৃগর্ভ থেকে নবজাত শিশুর মতো নিষ্পাপ হয়ে ফিরল।’ হজ যদি সঠিক নিয়মে পালন করা যায়, তাহলে তা জান্নাতের গ্যারান্টি। রসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন—‘মাকবুল হজের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ (বুখারি, মুসলিম)

হজ আল্লাহ ঐ ব্যক্তির ওপর ফরজ করেছেন যার কাছে সংসারের প্রয়োজনীয় খরচ ছাড়া মক্কা শরিফে যাতায়াত করার সংগতি ও শারীরিক সক্ষমতা আছে। মহান আল্লাহ বলেন—‘আল্লাহর উদ্দেশে তার ঘরে হজ নামীয় বিশেষ উপস্হিতি ফরজ করা হয়েছে ঐসব মানুষের ওপর যাদের সে পর্যন্ত পৌঁছার সংগতি আছে।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭) অর্থাত্—যার কাছে মক্কা মুয়াজ্জামায় যাওয়া-আসার খরচ ও হজে থাকাকালে নিজের ও পরিবারের সাংসারিক খরচ বহন করার মতো সক্ষমতা এবং হজের সফরে যাওয়ার মতো শারীরিক শক্তি রয়েছে তার ওপর হজ ফরজ। নারীদের ক্ষেত্রে মাহরাম জোগাড় হওয়া একটি অতিরিক্ত শর্ত। জীবনে একবার হজ করলেই ফরজ আদায় হয়ে যায়। বাকি যতবার হজ করা হবে তা নফল হিসেবে গণ্য হবে। রসুলুল্লাহ (স.) বলেন—‘যে ব্যক্তির ওপর হজ ফরজ হয়েছে, সে হজ পালন না করে শুধু নামাজ রোজা ও জাকাত আদায় করলে তা তার মুক্তির জন্য যথেষ্ট হবে না।’ (মেশকাত)

লেখক: কলামিস্ট ও চট্টগ্রাম জামেয়া ওবাইদিয়া নানুপুর মাদ্রাসার মহাপরিচালক এবং বর্তমান পির সাহেব, নানুপুর

ইত্তেফাক/কেকে

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন