শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

২৯ বছর পর ফিরে পেলেন পিতৃপরিচয়

আপডেট : ৩০ জুন ২০২২, ০১:১৬

মা ও সন্তানের ১৪ বছরের আইনি লড়াই। সেই আইনি লড়াইয়ের সুফল পেলেন আজ। হাইকোর্ট মা ও সন্তানের পক্ষে রায় ঘোষণা করেছেন। রায়ে পিতৃ পরিচয় ফিরে পেলেন রাজশাহীর জুয়েল মন্ডল। নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে গতকাল বুধবার এ রায় দিয়েছেন বিচারপতি এসএম মজিবুর রহমানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ। এই রায়ের ফলে স্বামী ও বাবা হিসাবে স্ত্রী ও সন্তানকে খোরপোষ ও ভরণপোষণের অর্থ দিতে হবে রফিকুল ইসলাম জুম্মাকে।

আদালতে জুয়েলের পক্ষে আইনজীবী চঞ্চল কুমার বিশ্বাস ও রফিকুলের পক্ষে শাহেদ আলী জিন্নাহ শুনানি করেন। তবে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার কথা জানিয়েছেন রফিকুলের আইনজীবী। আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এই রায়ের ফলে জুয়েল ২৯ বছর পর তার পিতৃ পরিচয় ফিরে পেলেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, নিলফামারীর ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন রফিকুল ইসলাম জুম্মা। তার বাড়িতে কাজ করতেন জুয়েলের মা। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের প্রেক্ষিতে ১৯৯৩ সালে জন্ম হয় জুয়েলের। কিন্তু রফিকুল সন্তানকে মেনে নেননি। ভরনপোষণ দিতে জানান অস্বীকৃতি। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে জুয়েলের মা সন্তানের পিতৃ পরিচয় ও ভরণ-পোষণের দাবিতে পারিবারিক আদালতে মামলা করেন। কিন্তু পারিবারিক আদালতে হেরে যান। আপিল করেন দায়রা আদালতে। সেই রায়ও তার বিপক্ষে যায়। নিম্ন আদালতের রায়ে বলা হয়, জুয়েল তাদের ঔরসজাত সন্তান। কিন্তু বিবাহ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের সন্তান হিসাবে ঘোষণা করা গেলো না।

২০১১ সালের এই রায়ের পর জুয়েলের মা চলে যান মালয়েশিয়ায়। পরে জুয়েল হাইকোর্টে এই মামলায় পক্ষভুক্ত হন। এরপর নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে রিভিশন মামলা করেন জুয়েল। এ মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে জুয়েলকে আইনি সহায়তা দেয় সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস। ছয় বছর পর কেন মামলা করা হলো এর ব্যাখ্যা চায় হাইকোর্ট। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার পর তা গ্রহণ করে রুল জারি করে হাইকোর্ট। ওই রুলের দীর্ঘ শুনানি শেষে গতকাল হাইকোর্ট জুয়েলের পিতৃ পরিচয় ফিরিয়ে দিয়ে রায় ঘোষণা করেন। রায়ের পর সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জুয়েল। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও আমি পিতৃপরিচয় পেলাম। নইলে আমার জন্মই আজন্ম পাপ হয়ে থাকত। কারন ২৯ বছর ধরে আমি আমার পিতার স্বীকৃতি পেতে পথ চেয়ে আছি। সেই কাজটি লিগ্যাল এইড অফিস আইনি সহায়তা দিয়ে আমাকে পাইয়ে দিয়েছেন। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

ইত্তেফাক/ইআ