শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৭ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন ইবি শিক্ষার্থীরা

আপডেট : ০১ জুলাই ২০২২, ১৩:২৯

পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে আগামী ২ জুলাই থেকে ১৫ দিনের ছুটিতে যাচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। তাই ঈদকে সামনে রেখে বাড়ি ফেরা শুরু হয়েছে শিক্ষকদের। মূলত ঈদের আনন্দের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা বিষয়গুলোর মধ্যে প্রধান হচ্ছে নাড়ীর টানে বাড়ি ফেরা, স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করা। এখানকার শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার ছিল ছুটির আগে সর্বশেষ ক্লাস-পরীক্ষা। এরপর থেকে সাপ্তাহিক ছুটি শুরু হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন এখানকার শিক্ষার্থীরা। তবে শুক্রবার (১ জুলাই) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে বাড়ি ফেরা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। 

এদিন সকাল ৮টার দিকে ক্যাম্পাসের জিয়া মোড় এলাকায় দেখা হয় একদল শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তাদের সবার হাতে, কাঁধে ঝোলানো ভারী ব্যাগ। দেখেই বোঝা গেলো তারা বাড়ি যাচ্ছেন। কথা হলো তাদের সাথে। তারা বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফিরছি, তাই আনন্দটা একটু বেশিই। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। বাসে চড়ে কুষ্টিয়া যাবো, সেখান থেকে ট্রেনে করে নিজ গন্তব্যে যাত্রা করবো। 

অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে চড়ে পার্শ্ববর্তী দুই জেলা শহরের বাসের কাউন্টার ও ট্রেন স্টেশনে যাচ্ছেন। কেউবা আবার প্রধান ফটক সংলগ্ন বাস কাউন্টার থেকে রওয়ানা হচ্ছেন নিজ গন্তব্যে। বন্ধুবান্ধব সহপাঠীদের কাছে থেকে বিদায় নিয়ে নাড়ীর টানে গন্তব্যে পৌঁছানোর উচ্ছ্বাস ছিল সবার চোখেমুখে। 

এমনই একজন ফলিত রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া। তার বাড়ি রংপুর। তিনি বলেন, ক্লাস-পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট, ল্যাব ইত্যাদির চাপে সবসময় ব্যস্ত থাকতে হয়। ঈদের ছুটির কারণে সে চাপ থেকে মুক্তি মিললো। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে যাচ্ছি। পরিবারের মানুষের হাসিমাখা মুখগুলো দেখতেই এ যাত্রা। 

চট্টগ্রামের ছেলে রিয়াজ বলেন, আগে বাড়ি যেতে অনেক সময় লাগতো। ভোগান্তি পোহাতে হতো। পদ্মা সেতু হওয়ার কারণে সে কষ্ট অনেকটাই লাঘব হবে। আগের চেয়ে কম সময়ে বাড়ি পৌঁছাতে পারবো। এজন্য সরকার ও সেতু সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আল কুরআন ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান যাচ্ছেন তার নিজ শহর বরিশালে। তিনি বলেন, মেসের খাবার খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গেছি। বাড়ি ফিরে মায়ের হাতে রান্না করা মুখরোচক সব খাবার খেতে পারবো এটা ভেবেই ভালো লাগছে। তা-ছাড়া ঈদের সময়ই এলাকার বন্ধু এবং আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা হবে। সব মিলিয়ে দারুণ অনুভূতি। 

তবে সিলেটের মেয়ে শাম্মি শোনালেন ভিন্ন কথা, সম্প্রতি ওই অঞ্চলে ব্যাপক বন্যা হওয়ায় তার ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, বাবা-মায়ের মুখ দেখতে পারাটা সবসময়ই সৌভাগ্যের। তবে এবারের ঈদ অতটা আনন্দের হবে না। সবাই বানভাসি মানুষের জন্য দোয়া করবেন।

এদিকে, বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, তাদের ল্যাবে কাজ করতে হবে। অনেকের ঈদের ছুটি শেষে ক্যাম্পাস খোলার পরেই পরীক্ষা শুরু হবে। কেউবা আবার টিউশনের পাশাপাশি চাকরির জন্য পড়াশোনা করছেন। ২ তারিখে হল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা খুশি হতে পারেননি। তারা বলেন, আরও কয়েক দিন হল খোলা থাকলে ভালো হতো। 

এ ছাড়া, বন্ধের সময়ে হলে প্রায়সময়ই চুরির খবর পাওয়া যায়। তাই হলের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী। 

এবিষয়ে প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি প্রফেসর ড. ইয়াসমিন আরা সাথী বলেন, শনিবার সকাল ১০টার মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের হল ত্যাগ করার জন্য বলা হয়েছে। আগামী ১৫ জুলাই শুক্রবার সকাল ১০টায় হল খুলে দেওয়া হবে। 

হলের নিরাপত্তার বিষয়ে ড. ইয়াসমিন আরা সাথী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে অতিরিক্ত নিরাপত্তা প্রহরীর জন্য প্রক্টর অফিসে চিঠি পাঠিয়েছি। হলের প্রতি রুম সিলগালা করে দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে আনসার সদস্যদের বিশেষভাবে নির্দেশনা দেওয়া হবে। পাশাপাশি প্রভোস্টরা সবসময় তদারকি করবেন। ছুটির সময়ে হলের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে।

এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচ. এম. আলী হাসান বলেন, শিক্ষার্থীরা পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করে নিরাপদে ক্যাম্পাসে ফিরবে এমনটাই প্রত্যাশা করছি। সেইসঙ্গে তিনি সবাইকে করোনার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। 

ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার বিষয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, প্রক্টর স্যারের সঙ্গে কথা হয়েছে। আগামীকাল ইবি থানার অফিসার ইনচার্জকে ডেকেছি। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।

ইত্তেফাক/মাহি