ভারতে ইসলামের নবীকে নিয়ে শাসক দল বিজেপির বহিষ্কৃত মুখপাত্র নূপুর শর্মার আপত্তিকর মন্তব্যের সমর্থনে পোস্ট করার জন্য রাজস্থানের উদয়পুরের পর মহারাষ্ট্রের অমরাবতীতেও আর একটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
পেশায় কেমিস্ট উমেশ কোলহেকে ছুরি মেরে হত্যার ঘটনাটি যদিও গত ২১শে জুনের, মহারাষ্ট্র পুলিশ গতকালই প্রথম জানিয়েছে যে নূপুর শর্মার সমর্থনে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করার জন্যই কোলহেকে হত্যা করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডে প্রধান অভিযুক্ত ইরফান শেইখকে শনিবার বেশি রাতে নাগপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদয়পুরের মতো অমরাবতীর ঘটনাতেও ভারতের সন্ত্রাস-বিরোধী সর্বোচ্চ তদন্ত সংস্থা এনআইএ-কে হত্যার তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
হত্যাটি যেভাবে ঘটেছিল
পুলিশ ও স্বজনদের ভাষ্যমতে, অমরাবতীর বাসিন্দা ৫৪ বছর বয়সী কেমিস্ট উমেশ প্রহ্লাদরাও কোলহে গত ২১ জুন রাতে নিজের দোকান বন্ধ করে যখন বাইকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন, তখন একদল লোক তার ওপর ছুরি নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায় এবং ঘটনাস্থলেই কোলহে লুটিয়ে পড়েন।
নিহতের ভাই মহেশ কোলহে বার্তা সংস্থাকে বলেন, "আমার বড় ভাই দোকানের পাশে একটি সরু গলি দিয়ে রোজ শর্টকাট নিতেন, আততায়ীরা সেখানেই অপেক্ষা করছিল।"
"তার ঘাড়ের বাঁদিকে কোপ মারা হয়। তাকে ছুরি মারা হয়েছে খবর পেয়ে আমি যখন ছুটে যাই, ততক্ষণে উনি মারা গেছেন।"
খুনের ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই পুলিশ সন্দেহভাজন মোট ছজনকে গ্রেপ্তার করেছিল, যারা সবাই মুসলিম- তবে হত্যার মোটিভ কী হতে পারে তারা তা নিয়ে তখন কোনও মন্তব্য করেনি।
বন্ধুদের গ্রুপে বিতর্কিত পোস্ট
তবে মৃত্যুর কয়েকদিন আগে কোলহে তার বন্ধুবান্ধব ও কাস্টমারদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে 'আই সাপোর্ট নুপূর শর্মা' শীর্ষক একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন। হত্যাকাণ্ডের ঠিক ১২ দিনের মাথায় শনিবার পুলিশ জানায়, ওই পোস্টের জেরেই তাকে খুন হতে হয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছে।
অমরাবতীর পুলিশ কমিশনার আরতি সিং শনিবার বলেন, "প্রাথমিক তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি উমেশ কোলহে নুপূর শর্মার বক্তব্যের সমর্থনে একটি পোস্ট শেয়ার করেছিলেন বলেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।"
"এই ষড়যন্ত্রের যিনি চাঁই, তিনি কিছু সঙ্গী-সাথীকে নিয়ে কোলহেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। তাকে ধরতে পারলে এই তত্ত্বটা সম্পর্কে আমরা আরও নিশ্চিতভাবে বলতে পারব।"
এই বিবৃতির কয়েক ঘণ্টা পরেই রাতে মহারাষ্ট্রের নাগপুর থেকে গ্রেপ্তার হন প্রধান অভিযুক্ত ইরফান শেইখ, যার এখন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
নিহত মহেশ কোলহের পরিবার আজ দাবি করেছে, ইরফান শেইখের সঙ্গে মি. কোলহের গত ষোলো বছর ধরে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ছিল - তিনি যে একাজ করতে পারেন তা তাদের কল্পনার অতীত। তারা হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তিরও দাবি জানাচ্ছেন। বিবিসি