শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি

আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২২, ০৩:৫৫

করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর রপ্তানি কমে গিয়েছিল। একই সঙ্গে সে সময় কমেছিল আমদানির পরিমাণও। তাতে কমে এসেছিল বাণিজ্য ঘাটতি। সম্প্রতি আবার বাণিজ্য ঘাটতি বাড়তে শুরু করেছে। চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম ১১ মাস জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮২ কোটি ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২ লাখ ৮৭ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাণিজ্য ঘাটতি বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ ইত্তেফাককে বলেন, রপ্তানি আয় যেভাবে বাড়ার কথা, সেভাবে বাড়েনি। করোনার কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যের চাহিদা অনেক কমে গেছে। করোনার সময় আমদানি ব্যয় কমলেও আবার বাড়তে শুরু করেছে। এতে বাণিজ্য ঘাটতি ভবিষ্যতে আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্যমতে, চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই থেকে মে) পণ্য বাণিজ্যে বাংলাদেশের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮১ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের (২০২০-২১) প্রথম ১১ মাসে ছিল ২ হাজার ৭০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২ হাজার ২৮০ কোটি ডলার।

দেশের আমদানির তুলনায় পণ্য রপ্তানি কম হওয়ায় বরাবরই বাণিজ্য ঘাটতি থাকে। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসায় চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানি-রপ্তানিতে ভালো প্রবৃদ্ধি রয়েছে। তবে রপ্তানির তুলনায় আমদানিতে বেশি প্রবৃদ্ধি থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা।

২০২১-২০২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলার বা ৫২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার। আর এই সময়ে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। চলতি বছরের প্রথম ১১ মাসে আমদানি বেড়েছে ৩৯ শতাংশ। এই সময়ে পণ্য আমদানির পেছনে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৮৬৭ কোটি ডলার।

  • চলতি হিসাবে ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) ঘাটতি

চলতি হিসাবে ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) বড় ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। গেল অর্থবছরের ১১ মাসে এই ঘাটতির (ঋণাত্মক) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭২৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে একই সময়ে ঘাটতি ছিল ২৭৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

  • সামগ্রিক লেনেদেনে ঘাটতি ৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার

সামগ্রিক লেনদেনে (ওভারঅল ব্যাল্যান্স) ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩০ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে এই সূচকে ৮৫২ কোটি ডলারের উদ্বৃত্ত ছিল। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই থেকে মে পর্যন্ত দেশে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে এসেছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫ দশমিক ২৫ শতাংশ কম। গত অর্থবছরে একই সময় এসেছিল ২ হাজার ২৮৩ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

  • এফডিআই বেড়েছে ৩৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ

দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়ছে। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে ৩১৩ কোটি ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। গেল অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৪২৭ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে, তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকে, সেটিই নিট এফডিআই। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগও আগের বছরের চেয়ে ৫৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেড়ে ২০৫ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত বছর একই সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ১২৮ কোটি কোটি ডলার।

ইত্তেফাক/ইআ