শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

প্লেব্যাক সম্রাটকে হারানোর দুই বছর

আপডেট : ০৬ জুলাই ২০২২, ১৪:৪৩

বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোর। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সুরের জাদুতে সংগীতপ্রেমীদের মাতিয়েন তিনি। মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-আনন্দ, প্রেম-বিরহ সব অনুভূতির গানই তার কণ্ঠে পেয়েছে অনন্য মাত্রা। তার শত শত কালজয়ী গান এখনো মানুষের মুখে মুখে। এর মধ্যে ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, 'হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস দম ফুটাইলে ঠুস' ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘কারে দেখাব মনের দুঃখ গো’ বা ‘তুমি আমার জীবন, আমি তোমার জীবন’ 'আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল' 'এক জনমের ভালবেসে ভরবে না মন, ভরবে না'—সহ অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান আজও তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

কিন্তু ২০২০ সালের ৬ জুলাই সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান এই শিল্পী। আজ তার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। আজ পারিবারিকভাবে প্রার্থনাসহ বিভিন্নভাবে স্মরণ করা হবে এই প্লেব্যাক সম্রাটকে।

এন্ড্রু কিশোর। ছবি: সংগৃহীত
১৯৫৫ সালের ৪ নভেম্বরে রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর। বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতা মিনু বাড়ৈ রাজশাহী মহানগরীর বুলনপুর মিশন গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। মায়ের কাছেই তার পড়াশোনার হাতেখড়ি। তার মা ছিলেন সংগীত অনুরাগী, তার প্রিয় শিল্পী ছিলেন কিশোর কুমার। প্রিয় শিল্পীর নামানুসারে সন্তানের নাম রাখেন কিশোর। মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই সংগীতাঙ্গনে পা রাখেন এন্ড্রু কিশোর।

আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সংগীতে পাঠ গ্রহণ শুরু করেন এন্ড্রু কিশোর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর নজরুল সংগীত, রবীন্দ্র সংগীত, আধুনিক, লোকসংগীত ও দেশাত্মবোধক গানের শিল্পী হিসেবে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন।

এন্ড্রু কিশোর চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শুরু করেন ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত ‘এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী’ চলচ্চিত্রের ‘ধুম ধাড়াক্কা’।

 তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘প্রতিজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গানটি গেয়ে শ্রোতাপ্রিয়তা লাভ করেন।

এন্ড্রু কিশোর। ছবি: সংগৃহীত

‘বড় ভালো লোক ছিল’ (১৯৮২) চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক করে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন এন্ড্রু কিশোর। মহিউদ্দিন পরিচালিত এই চলচ্চিত্রে সৈয়দ শামসুল হকের লেখা ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানটিতে কণ্ঠ দেন তিনি। এ গানের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।

১৯৮৪ সালে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের কথা ও সুরে ‘নয়নের আলো’ চলচ্চিত্রের তিনটি গানে কণ্ঠ দেন। গানগুলো—‘আমার সারা দেহ..’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’ ও ‘আমার বুকের..’। এমন অসংখ্য চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন এই শিল্পী, যা এখনো মানুষের মুখে মুখে।

বাংলা গানের কিংবদন্তি এই সংগীতশিল্পী ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামেও পরিচিত। বাংলা চলচ্চিত্রের গানে তাকে বলা যেতে পারে এক মহাসমুদ্র। যেখানে তিনি সাঁতার কেটেছেন কয়েক দশক ধরে।

আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই কণ্ঠশিল্পী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু দিন চিকিৎসা শেষে মৃত্যুবরণ করেন। রাজশাহীতে জন্ম নেওয়া কিশোর সেখানেই বেড়ে ওঠেন। পড়াশোনা করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পর, কিশোর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধকসহ প্রায় সব ধারার গানে রাজশাহী বেতারে তালিকাভুক্ত হন।

এন্ড্রু কিশোর। ছবি: সংগৃহীত

তার জনপ্রিয় গানের মধ্যে আরও রয়েছে, পৃথিবীর যত সুখ আমি.., সবাইতো ভালোবাসা চায়, বেদের মেয়ে জোসনা আমায় কথা দিয়েছে, তুমি আমার জীবন আমি তোমার জীবন, ভালো আছি ভালো থেকো, তুমি মোর জীবনের ভাবনা, চোখ যে মনের কথা বলে’ ইত্যাদি।

১৯৮৭ সালে আহমাদ ইউসুফ, আনোয়ার হোসেন বুলু, ডলি জহুর, দিদারুল আলম বাদল, শামসুল ইসলাম নান্টুর সঙ্গে টিভি নাটক, বাণিজ্যিক এবং অন্যান্য প্রযোজনার জন্য ‘প্রবাহ’ নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এন্ড্রু কিশোর।

ব্যক্তিগত জীবনে লিপিকা এন্ড্রু ইতির সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এন্ড্রু কিশোর। এ দম্পতির দুটি সন্তান রয়েছে। প্রথম সন্তানের নাম সংজ্ঞা আর দ্বিতীয়জনের নাম সপ্তক। দুইজনেই এখন বিদেশে পড়াশোনা করছেন।

ইত্তেফাক/বিএএফ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন