শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

ঈদে বিনোদনকেন্দ্রে প্রাণের জোয়ার

আপডেট : ১৩ জুলাই ২০২২, ০৫:০৭

করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে এ বছর পূর্ণ উদ্যমে ঈদ উদযাপিত হয়েছে। ঈদের ছুটি শেষ। তার পরও আনন্দের রেশ কাটেনি। মুখরিত হয় রাজধানী ও এর আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলো। ঈদের পরদিন ঢাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। ঐ দিন জাতীয় চিড়িয়াখানা, শিশুমেলা, আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লা, জাতীয় সংসদ ভবন চত্বর, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, শিশুপার্ক, হাতিরঝিলসহ বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে দেখা গেছে উত্সবমুখর মানুষের উপস্থিতি।

ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পরিবার পরিজনদের নিয়ে রাজধানী ও আশপাশের বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে বেরিয়ে পড়েন দর্শনার্থীরা। ঐসব বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে জনসমাগম ছিল চোখে পড়ার মতো। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদের দিন দুপুর আড়াইটার দিকে সংসদ ভবন ও ক্রিসেন্ট লেকের সামনে ভিড় জমাতে থাকে নানা বয়সের মানুষ। অসংখ্য দর্শনার্থী জাতীয় চিড়িয়াখানার সামনে ভিড় জমান। দূর-দূরান্ত থেকে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে আসেন চিড়িয়াখানায়। শিশু চিড়িয়াখানায় আসতে পেরেই খুশি থাকলেও অভিভাবকরা সন্তুষ্ট নন বলে জানান মোহাম্মদপুর থেকে আসা আহমেদুল কবীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় কত পশু-পাখি ছিল এই চিড়িয়াখানায়। অথচ এখন প্রায় খাঁচা ফাঁকা। আগে খাঁচাভর্তি বানর ছিল, আমরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বানরের খুনসুটি দেখতাম। এখন সেই বানরের খাঁচাও মোটামুটি ফাঁকা।’

ধানমন্ডি লেকে নামে মানুষের ঢল। কেউ বা লেকের নৌকায় ঘুরেছেন, কেউ আবার পার্কে বসেই গল্পে মেতে উঠেন। ধানমন্ডি লেক ও রবীন্দ্র সরোবরে দেখা যায় দল বেঁধে ছেলেমেয়েরা গিটার বাজিয়ে গান করছেন। কেউ বা তাদের ছোট শিশুদের খেলতে নামিয়ে দিয়েছেন। কথা হয় ক্রিসেন্ট লেক চন্দ্রিমা উদ্যানে এক দম্পতির সঙ্গে। তারা তাদের পৌনে দুই বছরের সন্তানকে নিয়ে এসেছেন সেখানে। শিশুটির মা সুরাইয়া আলম বলেন , ‘বাচ্চার দুই দিন ধরে সর্দিজ্বর। তাই খোলা জায়গায় একটু ঘুরতে এনেছি।’ আগারগাঁও জাতীয় জাদুঘরে প্রথম বেড়াতে আসে, মিশু আদিয়ান। তার বয়স সাত বছর। সেখানেও উপচে পড়া ভিড়। নিরাপত্তা কর্মীরা বলেন, গেট খোলার আগে থেকেই দর্শনার্থীরা এসে অপেক্ষা করছেন। নিয়ম মেনে সবাই ভেতরে প্রবেশ করছেন। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দর্শনার্থীদের বেশির ভাগই শিশু-কিশোর। তারা পরিবারের বাবা-মা, ভাইবোনের সঙ্গে এসেছে। প্রথমে গেটের বাইরে থেকে টিকিট সংগ্রহ করছেন, মাস্ক পরে গেট অতিক্রম করছেন, তারপর ভেতরে গিয়ে ব্যাগ কাউন্টারে জমা দিয়ে মূল মিউজিয়ামে প্রবেশ করছেন। উৎসুক শিশু-কিশোররা মিউজিয়ামে এসে মনে হচ্ছে বাসার চাল দেওয়ালের বন্দি জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছে।

শ্যামলীর বাসিন্দা কিশোরী অনিমা জামান বলেন, এবার ঈদে অনেক মজা হয়েছে। চাচ্চুর বাসায় গিয়েছি, খালামনির বাসায় গিয়েছি। আজ আবার ঘুরতে বের হয়েছি। খুব ভালো লাগছে। অনিমা বলে, মিউজিয়ামটা খুব সুন্দর। আমার খুব ভালো লেগেছে। এখানে অনেক কিছুর ইতিহাস জানার আছে। নভোথিয়েটারে কথা হয় ইনায়রা ও তার চার কাজিন এসেছে একসঙ্গে। তারা বয়সে বরাই কিশোর। ইনায়রার বাবা মিজানুর রহমান বলেন, করোনার কারণে গত কয়েকটা ঈদ বাচ্চাদের একদম ভালো কাটেনি। বাচ্চারা ঘরবন্দি ছিল, তাই এবার তাদের নিয়ে এসেছে। এছাড়া রাজধানীর আহসান মঞ্জিল, লালবাগ কেল্লাসহ ঐতিহাসিক স্হানসহ অন্য সব বিনোদন কেন্দ্র ছিল লোকে লোকারণ্য।

রমনা পার্কে গিয়ে দেখা যায়, মানুষের ঢল। নানা বয়সের মানুষ এসেছেন বেড়াতে। অনেকে লেকের পারে ঘাসের ওপর বসে গল্প করছেন। অনেকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন। বাচ্চারা খেলছে। তবে বেশি ভিড় ছিল লেকের ওপর স্থাপন করা ওয়াকওয়ের ওপর। আর সব বয়সি নারী-পুরুষের ফটো সেশনের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকালে হাতিরঝিলে বেড়াতে আসেন অনেকে। রাজধানীর সাধারণ মানুষের স্তস্তির নিঃশ্বাস নেওয়ার জায়গা যেন হাতিরঝিল। ঈদের দিন সকালের পরই হাতিরঝিলে মানুষের ভিড় জমে।

ইত্তেফাক/ইআ