রোববার, ২৬ মার্চ ২০২৩, ১১ চৈত্র ১৪২৯
দৈনিক ইত্তেফাক

ঢাবির ১০ সাইবার সেন্টারে ২৫০ কম্পিউটার ব্যবহার অযোগ্য 

আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২২, ০৮:০৪

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, দপ্তর ও হল সংশ্লিষ্ট ১০টি সাইবার সেন্টার রয়েছে। এসব সেন্টারে রয়েছে আড়াই শর বেশি কম্পিউটার, যার মূল্য কোটি টাকারও বেশি। শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট চাহিদা মেটাতে এবং কম্পিউটার ব্যবহারের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এসব সেন্টার চালু করা হয়। কিন্তু এসব সাইবার সেন্টারমুখী হচ্ছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকরা। 

শিখন প্রযুক্তি ও আধুনিকায়নে অনিচ্ছা, কোর্স আউটলাইন নতুন করে সাজানোর পরিকল্পনা না থাকা, দুর্বল ইন্টারনেট, অকেজো কম্পিউটারসহ নানা কারণে কাজহীন হয়ে আছে এসব কম্পিউটার। যার কারণে সাইবার সেন্টারগুলো পড়ে আছে গ্রাহকহীন, নষ্ট হচ্ছে কোটি টাকার সম্পদ। হাতে হাতে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট সুবিধা চলে আসায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইবার সেন্টারগুলোতে যেতে চান না শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এগুলো নিয়ে নতুন কোনো পরিকল্পনাও নেই। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সম্পদ হয়ে উঠেছে সাদা হাতির মতো।

জানা যায়, বিভাগগুলো ছাড়া কেন্দ্রীয় ও অনুষদভিত্তিক অন্তত ১০টিরও বেশি কম্পিউটার আছে এমন সাইবার সেন্টার অন্তত ১০টি। এ সেন্টারগুলোর মধ্যে অন্যতম—টিএসসি, কেন্দ্রীয় গ্রম্হাগার, অবিন্তা কবির, ই-লাইব্রেরি, বিজয় একাত্তর হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হল, হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল এবং কলা অনুষদ সাইবার সেন্টার। এর বাইরেও অধিকাংশ বিভাগের নিজস্ব সাইবার সেন্টার রয়েছে। এ সেন্টারগুলো খুব আয়োজন করে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু উদ্বোধনের তিন বছরের মধ্যে বেহাল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে সেন্টারগুলো।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মনে করে কম্পিউটার রেখে দিলে শিক্ষার্থীরা এসে ব্যবহার শুরু করবেন। কম্পিউটারগুলো আপডেট, প্রযুক্তির নতুন নতুন সংযোজন যোগ, প্রতিনিয়ত কম্পিউটারগুলো পরীক্ষার কোনো কাজই সেন্টারে দায়িত্বপ্রাপ্ত টেকনেশিয়ানরা করেন না। এর বাইরেও টেকনিশিয়ানরা জবাবদিহিতার আওতায় আসেন না, এমনকি অনেক টেকনিশিয়ান কম্পিউটারের পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন না। শুধু নামমাত্র সাইবার সেন্টার হিসেবে পরিচালনা হয় এসব। যার কারণে শিক্ষার্থীরা আগ্রহী হন না সাইবার সেন্টারে যাওয়ার।

অন্যদিকে টেকনিশিয়ানদের অভিযোগ, সেন্টারগুলো উদ্বোধনের পর সেগুলো পরিচর্যার চেষ্টা থাকে না বিশ্ববিদ্যালয়ের। একটি কম্পিউটার ভালোভাবে চলে দুই থেকে তিন বছর। তারপর সেগুলো অকার্যকর হতে শুরু করে। কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। তাৎক্ষণিক সে ব্যবস্থা করা হয় না।

২০১৩ সাল পর্যন্ত টিএসসির সাইবার সেন্টার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. হায়দার আলী। সাইবার সেন্টারগুলোর এ পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সাইবার সেন্টারগুলো এমন পরিস্থিতি স্বাভাবিক। এক সময় ইন্টারনেট মোবাইল ফোন সহজলভ্য ছিল না। তখন মানুষ সাইবার সেন্টারে বসে কম্পিউটার ব্যবহার করত। এখন মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন, তাদের সময় নেই এক জায়গায় বসে কম্পিউটার চালানোর। এর জন্য কাউকে দায়ী করা যাবে না। তিনি বলেন, সম্পদকে এক জায়গায় ফেলে না রেখে নতুন করে কাজে লাগানোর কথা ভাবতে হবে। আইটিতে অনেক কিছু শেখানোর আছে, বিভিন্ন কোর্স আছে, শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়ে আগ্রহী করে তোলা, তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং নতুন নতুন ধারণার কাজ সৃষ্টি করতে হবে। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে।

২০০৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) একটি কক্ষে চালু করা হয় সাইবার সেন্টার। এখন সেন্টারটির ৩৫টি কম্পিউটারের সবগুলোই নষ্ট। গত ৯ বছর যাবত কোনো কার্যক্রম নেই সাইবার সেন্টারটির। ২০১৭ সালের মে মাসে ১৩টি কম্পিউটার, দুটি প্রিন্টার, ফটোকপি মেশিন ও ইন্টারনেট সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন অবিন্তা কবির সাইবার সেন্টার উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনের পাঁচ বছরের মধ্যে দুটি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে যায়। কয়েকটি কম্পিউটারে রয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটি। বছরের পর বছর আপডেট হয় না কম্পিউটারগুলো। ইনস্টল করা হয় শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার। এসব ত্রুটি নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সেন্টারটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ই-লাইব্রেরিতে কম্পিউটার রয়েছে ৪০টি। এর ১৫টিই অকার্যকর। বাকি ২৫টির কোনোটির সফটওয়্যার আপডেটেড না, কোনোটির উইন্ডোজ দেওয়া নেই। কোনোটি আবার মনিটর ভালো তো, সিপিইউ নষ্ট পড়ে আছে।

প্রতিষ্ঠার পর বিজয় একাত্তর হলে একটি সাইবার সেন্টার স্থাপন করা হয়। ১৫টি কম্পিউটার সংযুক্ত আধুনিক এ সাইবার সেন্টারটি গত তিন বছর ধরে বন্ধ। প্রথম দিকে শিক্ষার্থীদের কিছু কোর্স করালেও পরবর্তীতে কোর্স কো-অর্ডিনেটরের অভাবে পরবর্তীকালে আর কোনো কোর্স করানো হয়নি। এরপর দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ পড়ে আছে সেন্টারটি। সম্প্রতি একটি কোর্স চালু করা হয়। কিন্তু এ সেন্টারটিও উন্মুক্ত নয় শিক্ষার্থীদের জন্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার জন্য উন্মুক্ত সাইবার সেন্টারের একটি হচ্ছে কেন্দ্রীয় গ্রম্হাগার সাইবার সেন্টার। মাত্র তিন বছর আগেও এখানে ২৫টি কম্পিউটার থাকলেও এখন কম্পিউটার আছে আটটি। এর মধ্যে পাঁচটি কম্পিউটার ছাড়া বাকিগুলো অকার্যকর। সেন্টারটির নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, গত ছয় মাসে মাত্র ১৯ জন সেন্টারটি ব্যবহার করতে এসেছেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সাইবার সেন্টারগুলোর দায়িত্বে যারা আছেন তারা তাকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অবহিত করলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

ইত্তেফাক/ইআ