দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে গত কয়েকদিনের অব্যাহত অনাবৃষ্টি ও তীব্র খরতাপে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তীব্র খরতাপে মাঠে-ঘাটে কাজ করতে পারছেন না শ্রমিক শ্রেণির দিনমজুর মানুষেরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে পৌরশহরের রাস্তাঘাট। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না।
এদিকে তীব্র দাবদাহ ও গরমের কারণে মানুষের শরীরে পানি শূন্যতাসহ সর্দি-কাশি, জ্বরসহ ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন ব্যাপকহারে। আক্রান্ত রোগীর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাই থাকছেন বেশি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জনা যায়, বুধবার (২০ জুলাই) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বহির্বিভাগে বিভিন্ন রোগী আক্রান্ত প্রায় সাড়ে ৩০০ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এরমধ্যে ৬০ ভাগ রোগীই ছিলেন সর্দি-কাশি-জ্বরসহ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। একইভাবে বেসরকারি ক্লিনিকসহ নিজ নিজ বাড়িতে এসব রোগে আক্রান্ত ব্যাপক সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র খরতাপে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। দুপুর একটার দিকে সুজাপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সম্মুখ সড়কের গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নেওয়া রিকশাভ্যান চালক আমিনুল ইসলাম (৪৮) ও বেলাল হোসেন (৩৮) বলেন, তীব্র খরতাপের হাত থেকে জীবন বাঁচাতে রিকশাভ্যান নিয়ে ঘণ্টাখানেক সময় থেকে গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিচ্ছেন। বিশ্রাম না নিয়ে যদি এই খরতাপে রিকশাভ্যান চালাতে সড়কে বের হই তবে নিশ্চিত মারা যাব। উপজেলার খয়েরবাড়ী ইউনিয়নের মোক্তারপুর ডাঙ্গাপাড়া রাস্তার ধারে গাছের নীচে বসে থাকা কয়েকজন বলেন, জমিতে কাজে নেমেছিলেন সকালের দিকে। কিন্তু তীব্র খরতাপের কারণে ক্ষেতে টিকতে না পেরে গাছতলায় বিশ্রাম নিচ্ছেন।
খয়েরবাড়ী বাজারের রিকশা ভ্যানচালক শহিদুল ইসলাম (৪০) বলেন, প্রচণ্ড খরতাপের কারণে কয়েকদিন থেকে রিকশাভ্যান চালানো বন্ধ রেখেছেন। এতে তার আয় রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় খুব কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে পরিবার পরিজন নিয়ে। তীব্র গরমে তার ছেলে-মেয়েরা রিকশাভ্যান নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের হতে দিচ্ছে না।
এদিকে খরতাপের কারণে চাহিদা বেড়েছে ফলমূলের। এতে করে সুযোগ বুঝে ফল ব্যবসায়ীরাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন সব ফলের। এরমধ্যে ডাব, কমলা, আনারস ও বেলের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। একটি ডাব আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকা এবং প্রতিটি আনারস ৯০-১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তাও আবার সংকট রয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মশিউর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে প্রতিদিন শিশু ও বৃদ্ধসহ তিন শতাধিক মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে বর্তমানে ডায়রিয়া রোগী কিছুটা কম হলেও সর্দি-কাশি ও জ্বরের রোগী বেশি। হঠাৎ গরম বেড়ে যাওয়ায় শিশুসহ সববয়সী মানুষ ভাইরাসজনিত কারণে সর্দি জ্বর ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব কারণে আতঙ্কিত না হয়ে সঠিক চিকিৎসা নিলেই রোগী সুস্থ হয়ে উঠবেন।