কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন নারী কর্মকর্তা ও তার সাবেক দেহরক্ষী আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তা খন্দকার লাবনী (৩৬) গত বুধবার রাত আনুমানিক ১২টার দিকে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সারঙ্গদিয়া গ্রামে নানাবাড়িতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার পদে ছিলেন। বিসিএস ৩০তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা গত রবিবার ছুটিতে নানাবাড়ি আসেন।
অন্যদিকে কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান (২৩) বৃহস্পতিবার ভোররাতে নিজের অফিশিয়াল শটগান মাথায় ঠেকিয়ে গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন। মাগুরা পুলিশ লাইনস ভবনের ছাদ থেকে গতকাল সকালে তার গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। মাহমুদুল হাসানের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পিপলুবাড়িয়া গ্রামে। তিনি দেড় মাস আগে খুলনা থেকে বদলি হয়ে মাগুরায় আসেন। তিনি অবিবাহিত। তার বাবা মো. এজাজুল হক খান চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশে কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত।
খন্দকার লাবনীর বাবার বাড়ি উপজেলার বরালিদহ গ্রামে। তবে তার জন্ম, শিক্ষা ও বেড়ে ওঠা সারঙ্গদিয়ার নানাবাড়িতে। বাবা-মায়ের সঙ্গে নানাবাড়িতেই বড় হয়েছেন। তার শ্বশুরবাড়ি মাগুরা জেলার হাজীপুর গ্রামে। তার স্বামী তারিক আব্দুল্লাহ বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে খুলনায় কর্মরত। ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে ভারতে চিকিত্সাধীন রয়েছেন। লাবনীর দুই মেয়েসন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী এবং ছোট মেয়ের বয়স প্রায় তিন বছর।
গত বুধবার রাতে লাবনী পরিবারের সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস নেন। পরিবারের লোকজন বিষয়টি জানতে পেরে তাকে উদ্ধার করে রাত আনুমানিক সাড়ে ১২টার দিকে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিত্সক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
লাবনীর বাবা খন্দকার শফিকুল আজম শ্রীপুরের নাকোল রাইচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। অবসরপ্রাপ্ত এই শিক্ষক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা জানান, তার মেয়ের সঙ্গে স্বামী তারিক আব্দুল্লাহর দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ চলে আসছিল। এ কারণে একে অপরকে এড়িয়ে চলছিলেন। কিছুদিন আগেও ঘুমের বড়ি খেয়ে ও গলায় রশি দিয়ে দুই দফায় আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। স্বামী-স্ত্রীর এই দ্বন্দ্বের কারণেই তিনি আত্মহত্যা করেছেন।
পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে খুলনা রেঞ্জ পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহম্মেদ, খুলনা বিভাগীয় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অপারেশন) মো. নজরুল ইসলাম, মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান ঘটনাস্হল পরিদর্শন করেছেন।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে কনস্টেবল মাহমুদুল আত্মহত্যা করেন। মাহমুদুল খুলনায় চাকরি করাকালীন খন্দকার লাবনীর নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন।
কনস্টেবলের আত্মহত্যার প্রসঙ্গে মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান জানান, রাতের ডিউটি থেকে ব্যারাকে ফিরে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে পুলিশ লাইনস ভবনের চারতলার ছাদে গিয়ে নিজ নামে ইস্যু করা শটগান দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন। গুলির শব্দ শুনে অন্যরা গিয়ে তাকে মৃত অবস্হায় দেখতে পান। তার থুতনি দিয়ে গুলি ঢুকেছে। তবে কী কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন, তা এখনো জানা যায়নি।
মাহমুদুলের বাবা এজাজুল হক খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুই বছর চার মাস আগে আমার ছেলে পুলিশে যোগ দেয়। দেড় মাস আগে মাগুরায় আসার আগে সে খুলনা মেট্রোপলিটনে কর্মরত ছিল। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে আমার সর্বশেষ কথা হয়। সে জানায় যশোর রোডে ডিউটিতে আছে। তার সঙ্গে স্বাভাবিক ও হাসি-ঠাট্টামূলক কথা হয়। কিন্তু কী কারণে সে আত্মহত্যা করেছে, সেটা বুঝতে পারছি না।’
মাগুরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম গতকাল দুপুরে সাংবাদিকদের বলেন, কনস্টেবল মাহমুদুল হাসান দেড় মাস আগে মাগুরায় বদলি হন। এর আগে তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি খন্দকার লাবনীর দেহরক্ষী হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুটি ঘটনার কোনো যোগসূত্র আছে কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এটুকু নিশ্চিত, দুজনেই আত্মহত্যা করেছেন। দুজনের আত্মহত্যার কারণ জানতে পুলিশ তদন্ত করছে। এ ছাড়া আইনগত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
মাগুরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল হাসান জানান, লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। একই দিনে দুই জনের আত্মহত্যার নেপথ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, সে বিষয়ে কোনো তথ্য এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ঘটনার জোর তদন্ত চলছে। এ বিষয়ে বিভাগীয় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অপারেশন) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। পুলিশি তদন্ত চলছে। খুব শিগগির এই মৃত্যুর আসল রহস্য জানা যাবে।