শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

সুজানগরে প্রাচীন পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ

আপডেট : ২২ জুলাই ২০২২, ০৩:০২

উত্তরাঞ্চলের মধ্যে পেঁয়াজ ভান্ডার হিসেবে খ্যাত পাবনার সুজানগরে টিনের ঘর বা সেমিপাকা ঘরে বাঁশের মাচা তৈরি করে প্রাচীন পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হয়। এতে পেঁয়াজে পচন ধরায় প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হয় পেঁয়াজচাষিদের।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে প্রায় ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করা হয়েছিল। অনুকূল আবহাওয়া আর জমিতে সঠিক সময়ে সার-কীটনাশক দেওয়ায় ২ লাখ ২১ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ উত্পাদিত হয়। উপজেলার অধিকাংশ কৃষক এ বছর তাদের জমিতে উত্পাদিত পেঁয়াজের ফলনে বেশ খুশি। কিন্তু প্রাচীন পদ্ধতিতে দীর্ঘ মেয়াদে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে না পারায় তারা কাঙ্ক্ষিত দামে বিক্রি করতে পারছেন না।

উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের আদর্শ পেঁয়াজচাষি কামরুজ্জামান বলেন, পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে বাজার একদম কম থাকে। ঐ সময় পেঁয়াজ বিক্রি করলে কৃষকের উত্পাদন খরচই ওঠে না। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে দীর্ঘ মেয়াদে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে ভালো বাজার দেখে পর্যায়ক্রমে বিক্রি করতে পারলে কৃষকের লাভ হয়। কেননা পেঁয়াজের ভরা মৌসুমে যে পেঁয়াজ প্রতিমণ ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে বিক্রি হয়, ঠিক সেই একই মানের পেঁয়াজ ঘরে সংরক্ষণ করে তিন-চার মাস পরে বিক্রি করলে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করা যায়। 

কিন্তু বর্তমানে বাঁশের মাচা তৈরি করে যে পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হয়, তাতে দীর্ঘ মেয়াদে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না। এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করায় ব্যাপক পচন ধরে এবং শুকিয়ে ওজন একদম কমে যায়। ফলে কৃষকের খুব একটা লাভ হয় না। তাছাড়া বাঁশের মাচা তৈরি করতে অনেক খরচ হয়। উপজেলার মানিকহাট গ্রামের পেঁয়াজচাষি ওমর আলী প্রামাণিক বলেন ২০০ থেকে ৩০০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণের উপযোগী একটি প্রাচীন পদ্ধতির বাঁশের মাচা তৈরি করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। কিন্তু তারপরও ঐ মাচায় প্রয়োজনীয় আলো-বাতাস না ঢুকলে পেঁয়াজে পচন ধরে ব্যাপকভাবে নষ্ট হয়। 

উপজেলার বোনকোলা গ্রামের ভুক্তভোগী পেঁয়াজচাষি উজ্জ্বল হোসেন মোল্লা বলেন, এ পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করায় প্রায় ২৫ শতাংশ পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়। এতে কৃষকের প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা ক্ষতি হয়। ভুক্তভোগী পেঁয়াজচাষিরা উন্নত এবং আধুনিক পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে সরকারি সহায়তা কামনা করছেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাফিউল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত পেঁয়াজ সংরক্ষণে প্রাচীন পদ্ধতির বাইরে বিকল্প কোনো ব্যবস্হা নেই। তবে পেঁয়াজের পচনরোধে যেসব বাঁশের মাচায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হয়, সেখানে প্রয়োজনীয় আলো-বাতাস প্রবেশের ব্যবস্হা রাখতে হবে। সেই সঙ্গে মাচায় পেঁয়াজ পাতলা করে রাখতে হবে এবং মাঝেমধ্যেই তা দেখভাল করতে হবে।

ইত্তেফাক/জেডএইচডি