দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের থাকার অতিরিক্ত টাকা, খাবারের দাম ও যাতায়াত ভাড়া বৃদ্ধির মতো বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সমালোচনার মুখে পড়েন নগরীর লোকজন। এ বছরও ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মেসে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন নগরীর মেসমালিকরা। অথচ এ অঞ্চলের মেস মালিকদের আয়ের অন্যতম উত্স বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্পূর্ণ আবাসিক ব্যবস্হা না থাকায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী বাইরে মেস কিংবা বাসায় ভাড়া থাকেন। যাকে কেন্দ্র করে বাসামালিকদের এটা ব্যাবসায়িক আয়ের উৎসে পরিণত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে বিনোদপুর, কাজলা, তালাইমারী, মেহেরচণ্ডি, বুধপাড়া এলাকাসহ নগরীর বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভাড়া থাকেন। যাদের মধ্যে অধিকাংশই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কথা চিন্তা করে নতুন সিদ্ধান্ত নেয় নগরীর মেসমালিক কর্তৃপক্ষ। তাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে, মেসে একজন ভর্তি পরীক্ষার্থীর বেশি থাকলে মেসভেদে জনপ্রতি অতিরিক্ত ২০০-৫০০ টাকা মালিক পক্ষকে দিতে হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র সমালোচনা দেখা দিয়েছে।
কর্তৃপক্ষের এমন সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ জানায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সিদ্ধান্তকে হটকারী, অন্যায় ও নিচু মানসিকতা অ্যাখ্যা দিয়ে মেসমালিকদের ছাত্রবান্ধব হওয়ার আহ্বান জানান তারা। ফলে ঐদিনই সিদ্ধান্ত কিছুটা শিথিল করে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মেসে একাধিক শিক্ষার্থী থাকলে কর্তৃপক্ষকে তা অভিহিত করতে হবে এবং মেসে কোনো অভিভাবক থাকতে চাইলে বিনিময়ে মেসমালিককে ২০০-৫০০ টাকা পরিশোধ করতে হবে।
মেসমালিকদের এমন সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিলন হোসাইন বলেছেন, ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসা অতিথিদের দু-এক দিন ফ্রি রাখার মতো মন-মানসিকতা থাকা উচিত। যাদের টাকার ওপর এই অঞ্চলের মানুষের আয় নির্ভর করে তাদের সঙ্গে এমনটা করা সমীচীন নয়। মুশফিক আল আজাদ বলেছেন, একটা জায়গায় সারা বছর ভাড়া দিয়ে থেকে বছরে একদিন যদি কোনো অতিথি রাখা না যায়, তাহলে বিষয়টা দুঃখজনক!
এ বিষয়ে মেসমালিক কর্তৃপক্ষ বলছেন, আমরা কোনো শিক্ষার্থীর থেকে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছি না। শুধু অভিভাবক থাকলে সেক্ষেত্রে মেসভেদে অতিরিক্ত কিছু টাকা দিতে হবে। কারণ একটা মেসে নির্ধারিত সীমার বেশি মানুষ থাকলে অবশ হবে। বাসায় বেশি পানি, বিদু্যত্ ও গ্যাস ব্যবহারে বাড়তি চাপ পড়বে। নিরাপত্তার বিষয় রয়েছে। তাছাড়া এ অঞ্চলে তেমন কোনো আয়ের উত্স নেই, তাই মেস ব্যবসাই মালিকদের আয়ের একটি উত্স বলে উল্লেখ করছেন মালিকপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন এক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ফাহাদ। তিনি বলেন, গত বছর পরীক্ষা দিতে এসে এমন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম। ৫/১০ টাকা দূরত্বের রিকশা ভাড়া ১৫০-২০০ টাকা চায়। বাধ্য হয়ে কিছুটা কমিয়ে ১০০ টাকায় আসতে হয়েছে। এক-দুই দিনের জন্য নতুন জায়গায় এসে এমন ঘটনা প্রত্যাশিত নয়। আবার ভর্তি হয়ে যে মেসে ভাড়া থাকি, সেখানেও গত কয়েক মাস থেকে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত সিটি করপোরেশনের প্রস্ত্ততিমূলক সভায় নগরীর মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন মেসমালিকপক্ষকে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা মেসে অবস্হানকালে তাদের থেকে অতিরিক্ত টাকা না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এমনকি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে যেন অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত ভাড়া ও খাবার থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করা হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করেছেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষাগুলো পাড়ি দেওয়া বিশাল কর্মযজ্ঞ। পরীক্ষা দিতে আসা লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের নিরাপত্তা, ক্যাম্পাসের শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু পরীক্ষা পরিচালনা করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাছাড়া বছর বছর মেস ভাড়ার বিষয়টি নিয়ে জটিলতা অতিরিক্ত চাপ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিবারই টাকার বিষয়টি বিবেচনার জন্য অনুরোধ করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করা প্রশাসনের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। তবে ইতিমধ্যে পরীক্ষার সার্বিক প্রস্ত্ততি সম্পন্ন হয়েছে। সিটি করপোরেশনের মেয়র ভর্তি পরীক্ষায় সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি ভর্তিচ্ছু থেকে অতিরিক্ত ভাড়া কিংবা দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ানো কেন্দ্রিক যে সমস্যা সৃষ্টি হয়, তা সমাধানে আশ্বস্ত করেছেন। আশা করি, সব সমস্যা ছাপিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হবে।