নতুনভাবে আবার চলচ্চিত্রে আশার আলো দেখা যাচ্ছে। যদিও সিনেমাহল সংকট রয়েছে, তবু একাধিক মাধ্যমের ভেতর দিয়ে চলচ্চিত্রের ব্যবসা ফেরানোর তাগিদ কাজে লাগছে অনেকটাই।
করোনা-উত্তর বেশ ক’টি চলচ্চিত্র ব্যবসায়িক সফলতার হিসেবে না জিতলেও দর্শক কৌতুহল তৈরি করতে পেরেছে। একইসঙ্গে বাণিজ্যিক ছবির আদলও বদলে গেছে। গল্পনির্ভর চলচ্চিত্র তৈরির দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন নির্মাতা। গিয়াস উদ্দিন সেলিম, অমিতাভ রেজা, তৌকীর আহমেদ, মোস্তফা সরয়ার ফারুকীদের মতো নির্মাতারা যেমন বাণিজ্যিক আর বিকল্পধারার ফাইট দিয়ে নিজেদের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। বর্তমান সময়ে সেই ট্যাবু ভেঙে গেছে। চলচ্চিত্র নিয়ে সেই তর্কের বিভাজন এখন ভিন্নভাবে উপস্থাপিত। তবে বড় বাজেটের চলচ্চিত্রের লগ্নি তোলা এখনও বাংলাদেশের বাজারে সম্ভব না এটা অনেকেই স্বীকার করেন।
নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, ‘আমরা চলচ্চিত্র নির্মাণ করছি নিজেদের দেশ, সংস্কৃতি দেখানোর জন্য। এখন এখানে দীর্ঘদিন কোরিয়ান কুংফু, তামিল নাচ দেখিয়ে অন্য দেশের কালচারকে আমরা প্রমোট করছিলাম। এক সময় আমাদের নিজেদের কালচার নিয়ে সামাজিক ছবি তৈরি হতো। মাঝে সেই বিক্ষিপ্ত সময় চলছিল। আবার কিন্তু এই সময়ের মেধাবী তরুণরা বাংলাদেশের গল্পটা বলেই আবার দর্শককে ফেরাচ্ছেন।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের পালাগানের ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে একটি মিউজিক্যাল মুভি নির্মাণ করছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিম। চলচ্চিত্রের নাম ‘কাজলরেখা’। দীর্ঘদিন ধরেই এই ছবির স্ক্রিপ্ট গোছাচ্ছেন এই নির্মাতা। এদিকে মেজবাউর রহমান সুমনে চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’ নিয়ে চলচ্চিত্র কলাকুশলীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচারণা করছেন। বাংলা ছবির দর্শকদের হলে ফেরানোর এই প্রাণান্ত চেষ্টা নিয়ে একাধিক সফল ছবির নায়ক চঞ্চল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা আমাদের দিক থেকে কার্পণ্য করি না। বরং শিল্পী-কলাকুশলীরা নিজেদের ছবির প্রমোশনের জন্য অনেক কিছুর সেক্রিফাইস করে। এখন প্রয়োজন গোটা ব্যবস্থাপনা ঠিক করা। কারণ যেকোনো বাণিজ্যে আপনি লাভ দেখাতে পারলে সেই ব্যবসায় সকলে আগ্রহী হবেই।’
তবে হল সংকটের পাশাপাশি আরেকটি বড় আশঙ্কার বিষয় হলো চলচ্চিত্র প্রযোজকেরা নিজেদের ছবি থেকে লগ্নি ফেরত পাওয়ার অনিশ্চয়তা। সিনেমা হল, তা সিঙ্গেল স্ক্রিন হোক বা মাল্টিপ্লেক্স, কোনো কিছুরই স্বচ্ছতা এখনও তৈরি হয়নি। এই অবস্থায় চলচ্চিত্র ব্যবসাকে ফেরাতে হলো এর সমন্বয় প্রয়োজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নির্মাতা, প্রযোজক অভিযোগ করেছেন মাল্টিপ্লেক্সেও তারা টিকেট বিক্রির স্বচ্ছ হিসেব পাচ্ছেন না। আর এদিকে পুরো বাংলাদেশের সব অবকাঠামো ডিজিটাল হলেও সিনেমা শিল্পের ব্যবস্থাপনা এখনও সিকিভাগও ডিজিটাল হয়নি। তাই বক্স অফিস নেই। কেউ প্রমাণাদীসহ জানাতে পারেন না। ছবির কতটাকা লাভ হলো। সকলে যার যার ছবির মুখের কথার ওপরে বিশ্বাস করেই গণমাধ্যমে তা ছড়িয়ে যায়!
তবে আশার বিষয় হলো, মধ্যবিত্ত পরিবার, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছেলেমেয়ে আবারও হলমুখী হচ্ছে। কিনছে নিজেদের পছন্দেও ছবির টি-শার্ট। তাই এই কৌতুহলের ঢেউ ঠিক থাকলে সিনেমার সুদিন আসতে খুব বেশি দেরি হবে না বলে অনেকেই আশায় বুক বাঁধছেন