শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
The Daily Ittefaq

আলোচনায় যে নায়িকারা...

আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২২, ১৩:০৩

দীর্ঘদিন ধরেই চলচ্চিত্রের নানা সংকট আর হতাশার আলোচনা ছিল দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণ, পাশাপাশি অভিনেতা-অভিনেত্রী সংকটের বিষয়টিও ছিল আলোচনার শীর্ষে।

তবে হটাৎ করেই যেন বাংলা চলচ্চিত্রে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। রোজার ঈদে থেকে এ পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো আশার আলো দেখাচ্ছে। প্রশংসিত হয়েছে বেশ কয়েকজন চিত্রনায়িকার অভিনয়। তাদের অভিনয়গুণ আর ভালো গল্পে সুন্দর নির্মাণে হলে ফিরতে শুরু করেছেন সিনেপ্রেমীরা।

পূজা চেরী, বিদ্যা সিনহা মীম, নাফিজা তুষিরা দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্যিক ঘরানার সিনেমায় কাজ করলেও সেভাবে আলোচনায় আসতে পারেননি। তবে নিজেকে প্রমাণের চেষ্টা করেছেন নিয়মিত। অবশেষে তাদের পরিশ্রমের প্রতিদান দিচ্ছেন দর্শকরা। শিশুশিল্পী পরিচয়ে চলচ্চিত্র যাত্রা শুরু করা চিত্রনায়িকা ‘পোড়ামন টু’ দিয়ে বেশ আলোচনায় এসেছিলেন।

তবে গত রোজার ঈদে মুক্তি পাওয়া তার ‘শান’ সিনেমাটি ব্যবসায়িকভাবে তেমন সাফল্য না পেলেও নিজের অভিনয় দিয়ে দারুণ আলোচনায় ছিলেন এই নায়িকা। এমনকি একই ঈদে শাকিব খানের সঙ্গে তার ‘গলুই’ সিনেমাটি নিয়েও ছিলেন আলোচনায়।

নিজের এমন সাফল্যে পূজা চেরী বলেন, ‘দেখুন, আমি শুরু থেকেই একটি বিষয় মাথায় রেখে সিনেমায় যুক্ত হই। কোনো সিনেমার প্রস্তাব এলে আগে ভেবে দেখি সেই চরিত্রটি আমি করতে পারব কি-না। পরবর্তীতে চেষ্টা থাকে দর্শকদের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজটি করার। কারণ এখন দর্শকদের রুচির পরিবর্তন হয়েছে। অবশেষে তারা যখন আমার কাজের প্রশংসা করেন তখন মনে সার্থক হয়েছি। আসলে দর্শকদের জন্যই আমরা পরিশ্রম করি। অন্যদিকে অনেকেই মনে করতেন সাবানা, ববিতা ম্যামদের মতো ভালো সিনেমা এখন তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো দেখলেই কিন্তু সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। দর্শকরা বুঝতে পারছেন, হলে এসে কাজের মূল্যায়ন করছেন, এটা অবশ্যই আমাদের সবার জন্যই ইতিবাচক।’

এদিকে গত ঈদের মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ ’ সিনেমা দিয়ে দর্শকদের হলে ফেরানোর পাশাপাশি তুমুল আলোচনায় রয়েছেন বিদ্যা সিনহা মীম। ক্যারিয়ারে বেশকিছু বাণিজ্যক সিনেমায় বিদ্যাকে দেখা গেলেও ডায়নামিক নারী চরিত্রে এর আগে দেখা মেলেনি তার।

মীমের অভিনয়, দেশীয় গল্পের নিখুঁত গাঁথুনির প্রশংসায় ভাসছে সিনেমাটি। মুক্তির সময় সিনেমাটি কয়েকটি হলে দেখা গেলেও বর্তমানে অর্ধশতাধিক হলে প্রতিদিনই হাউজফুল হচ্ছে পরাণ। বলা চলে, সিনেমাটি মুক্তির পর থেকেই তার অভিনয় দর্শক-সমালোচকদের নজর কেড়েছে। বিদ্যা সিনহা মীম সিনেমাটিকে নিজের ক্যারিয়ারের বেস্ট সিনেমা হিসেবে উল্লেখও করেছেন।

তিনি বলেন, ‘প্রায় ৪ বছর পর নতুন সিনেমা নিয়ে হলে ফিরেছি। শুরু থেকেই চেষ্টা করেছি ভালো কাজ দর্শকদের উপহার দেওয়ার। সেই চেষ্টা মনে হয় এবার সার্থক হয়েছে। আমার সিনেমা দিয়ে দর্শকরা হলমুখী হচ্ছেন এটা অনেক বড় পাওয়া। আসলে দর্শকরা নিজেদের গল্প দেখতে চান। এই সিনেমাটিও দেখা তারা মনে করছেন এটা আমার বা আমার দেখা গল্প। আমার চরিত্রটিও দেখেও তারা ভাবছেন এটা আমাদের সমাজের একটি চরিত্র। সিনেমাটির এমন সাফল্য ঠিক ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। সব মিলিয়ে সিনেমাটি আমার ক্যারিয়ারে বেস্ট চলচ্চিত্র হয়ে থাকবে।’

অন্যদিকে গত শুক্রবার মুক্তি পেয়েছে চঞ্চল চৌধুরী ও এ প্রজন্মের অভিনেত্রী নাফিজা তুষি অভিনীত ‘হাওয়া’। সিনেমাটি বাংলা দর্শকদের পাশাপাশি তুষির ক্যারিয়ারেও যে হাওয়া লাগাতে যাচ্ছে এটা শুরুতেই বলা যাচ্ছে। কারণ সিনেমাটি মুক্তির আগেই দুদিনে অগ্রিম টিকেট বিক্রি সেই বার্তাই দিচ্ছে। এমনকি মুক্তির পর থেকে প্রতিটি শো হাইজফুল হচ্ছে, লাইনে দাঁড়িয়েও টিকেট পাচ্ছে না দর্শকরা। সিনেমাটি দেখার পর দর্শকরা ছবিটির নির্মাণ, গল্প এবং চঞ্চল-তুষির অভিনয় নিয়ে মুগ্ধতার বাণী শোনাচ্ছেন।

নাফিজা তুষি নিজের এমন সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে অসাধ্য সাধন করেছি। আমাদের প্রস্ত্ততির অংশ হিসেবে ৬ মাস চরিত্রটি ধারণ করেছি। ৬ মাস বিছানায় ঘুমাইনি। মাছ কাটতাম। শাড়ি পরতাম। গুলতি হয়ে ওঠার জন্য বেদেপল্লীতে গিয়েছি। ওদের সঙ্গে থেকেছি। ওদের খাবার খেয়েছি। ওদের ওয়াশ রুম ব্যবহার করেছি। শুটিংয়ের সময় ১ মাস মোবাইল ফোনও ব্যবহার করিনি। অন্যরাও একই রকমভাবে নিজেদের চরিত্রের ভেতর ডুবে ছিল। আমরা জানতাম ডু অর ডাই অবস্থা হতে যাচ্ছে। আমার করা সবচেয়ে কঠিন চরিত্র গুলতি। এছাড়া শিল্পের মানের কাছে আমি ছাড় দিইনি। এমন ভালো ছবির জন্য আমি অনেক কাজই সেক্রিফাইস করেছি। দর্শকদের ভালোবাসা আমার ক্যারিয়ারকে আরেক স্তরে নিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।’

ইত্তেফাক/এসজেড