২০২১ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ব্যয়ের চেয়ে আয় তিন গুণ বেশি হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের ৬ কোটি টাকা ব্যয়ের তুলনায় আয় হয়েছে ২১ কোটি টাকা। বর্তমান দলটির তহবিলে জমা আছে ৭০ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার ১৬৬ টাকা। অন্যদিকে সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি-জাপার তহবিলে জমা রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ ১৭ হাজার ২০ টাকা। ২০১২১ সালে জাপার আয় ২ কোটি ১০ লাখ।
গতকাল রবিবার সকালে নির্বাচন কমিশনের সচিব হুমায়ূন কবীর খোন্দকারের কাছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি-জাপা পৃথকভাবে আয়-ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়। আওয়ামী লীগের পক্ষে দলটির কোষাধ্যক্ষ এইচ এম আশিকুর রহমান ঐ হিসাব জমা দেন। দলটির আয়-ব্যয়ের হিসাবে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আয় ২১ কোটি ২৩ লাখ ৪৬ হাজার ১০৬ টাকা। ব্যয় হয়েছে ৬ কোটি ৩০ লাখ ১৯ হাজার ৮৫২ টাকা। আয়ের বড় খাত মনোনয়নপত্র ও প্রাথমিক সদস্যফরম বিক্রি বলে জানায় দলটি। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের আয় বেড়েছে ১০ কোটি ৯০ লাখের বেশি টাকা। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে ব্যয় কমেছে ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর দলটির ব্যাংকে জমা রয়েছে ৭০ কোটি ৪৩ লাখ ৭০ হাজার ১৬৬ টাকা। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সাল থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ মেনে প্রতি বছর ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর আগের পঞ্জিকা বছরের ‘অডিট রিপোর্ট’ জমা দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। মূলত রাজনৈতিক দলগুলোর কোন খাত থেকে কত টাকা আয় হয়েছে, কত টাকা ব্যয় হয়েছে, বিল-ভাউচারসহ তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য কমিশনের নির্ধারিত একটি ছকে জমা দিতে হয়। যা রেজিস্টার্ড চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষা করার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। পরপর তিন বছর কমিশনে আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হলে নিবন্ধন বাতিলের এখতিয়ার রয়েছে ইসির।
২০২০ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৪৩ হাজার ৫৩৩ টাকা, যা ২০১৯ সালের আয়ের চেয়ে ১০ কোটি ৬৮ লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা কম। ২০১৯ সালে দলটি আয় করেছিল ২১ কোটি ২ লাখ ৪১ হাজার ৩৩০ টাকা। ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৯৪ লাখ ৪৯ হাজার ৯৩১ টাকা, যা ২০১৯ সালের ব্যয়ের চেয়ে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৪৮ হাজার ৩৫৬ টাকা বেশি। ২০১৯ সালে দলটির ব্যয় হয়েছিল ৮ কোটি ২১ লাখ ১ হাজার ৫৭৫ টাকা।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের বছর ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছিল ২৪ কোটি ২৩ লাখ ৪২ হাজার ৭০৭ টাকা। আর ব্যয় হয়েছিল ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ৮০ হাজার ৫৫৭ টাকা। অন্যদিকে এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা রাজনৈতিক দল বিএনপির বার্ষিক আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। গত বছরের তুলনায় বিএনপির আয় কমেছে ৩৮ লাখ ৪১ হাজার ৮১৯ টাকা। ব্যয় বেড়েছে ২৩ লাখ ৯৪ হাজার ৬৭১ টাকা।
সোয়া কোটি টাকা জাপার তহবিল : জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধীদল জাতীয় পার্টির (জাপা) আয় বেড়ে তহবিল দাঁড়াল ১ কোটি ২৫ লাখ ১৭ হাজার ২০ টাকা। গতকাল রবিবার জাপার অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হুমায়ূন কবীর খোন্দকারের কাছে এ হিসাব জমা দেন। রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, গত বছর (২০২১ পঞ্জিকা বছর) ব্যাংক জমাসহ দলটির আয় ২ কোটি ৯ লাখ ৮৫ হাজার ১৫৪ টাকা। একই সময়ে দলটি ব্যয় করেছে ৮৪ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৪ টাকা। বছর শেষে দলটির স্থিতির পরিমাণ ১ কোটি ২৫ লাখ ১৭ হাজার ২০ টাকা। দলগুলো মনোনয়ন ফরম বিক্রি, সদস্যের চাঁদা, প্রকাশনা বিক্রি ইত্যাদি থেকে আয় করে। আর ব্যয় করে প্রচার কার্যক্রম, অফিস কর্মচারীদের বেতন ইত্যাদি খাতে।